৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২০। সন্ধ্যা ৬টা।
কলেজের বাস-স্টপে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কালো ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে চোখের সামনে দিয়ে সাঁইই করে একটা সি.এন.জি. চলে গেলো। এগুলো গাড়ি অনেক আগেই ব্যান করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সি.এন.জি চালকরা দিন আনে দিন খায়। টাকা না করতে পারলে যে তার পরিবার না খেয়ে থাকবে। মানুষ নিজের সকল কষ্ট বুকে চেপে রাখতে পারলেও তার আপনজনদের কষ্ট কখনও সহ্য করতে পারে না। তাই এরা নিয়ম ভাঙার চেয়ে কিছু টাকা জোগাড় করাটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
পেছন থেকে বিশ্রী শিষ দেয়ার আওয়াজ পেলাম। বখাটে চেনার প্রাথমিক উপায়, রাস্তায় সুন্দরী মেয়েদের দেখলে শিষ বাজায়। π এর মান ৩.১৪১৫৯২৬৫.... যেমন ধ্রুব, মেয়েদের দেখে শিষ বাজানোও ঠিক তেমনই ধ্রুব। যেনো এটা না করলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে, তাদের গুরু 'জন্মবখাটে বাবা'র অসম্মান হবে। এসব ভন্ড বাবা'দের কমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এরা হবে কাঠির মতো চিকন, চেহারা হবে কাকের মতো কঠিন, আর সারদিন বসে বসে আজগুবি বড়াই করতে পারদর্শী। কোনো মেয়েদের সামনে গিয়ে বেয়াদবি করার সাহস না পেলেও এমনভাবে উপদেশ দেয় যেনো ওর জন্মই হয়েছে বখাটে ডিগ্রি নিয়ে। এদের সাগরেদরাও কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ফলস্বরূপ আশা করে একটা মাত্র গার্লফ্রেন্ড।
আরও কিছু জিনিস ভাবতে চেয়েছিলাম। সময় পেলাম না। ঝড়ের বেগে একটা হাত আমার গালে এসে পড়ল। উড়ন্ত প্লেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেমন মাটিতে আছড়ে পরে, ঠিক তেমন। আমি সামনে তাকালাম। একটা মেয়ে চোখমুখ লাল করে আমাকে দেখছে। মেয়েটা অতিশয় সুন্দরী। মায়াকাড়া চেহারা, একটা ইনোসেন্ট ভাব আছে। কেউ কখনই বিশ্বাস করবে না এমন কোমলমতি একটা মেয়ে কাউকে চড় মারতে পারে। বাস-স্টপে এক অপরিচিত তরুণীর কোমল হাতে চড় খাওয়ার ব্যাপারটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ঘটনাটাও এত দ্রুত ঘটলো যে আশেপাশের মানুষ হয়তো টেরও পায় নি কিছু মিলিসেকেন্ড আগে তাদের সামনে পুরুষ নির্যাতন ঘটে গেলো। দেশে পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কোন আইন নেই, থাকা উচিত ছিলো। তাহলে আর এই দিন দেখতে হতো না।
'মেয়েদের উত্তক্ত করতে লজ্জা লাগে না? বেয়াদব ছেলে!'
ঘটনা কিছুই না বুঝতে পেরে রোবটের মতো 'হ্যাঁ সূচক' মাথা নাড়ালাম।
'তোমাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া উচিত। লকআপের ভেতরে থাকার পরে যদি একটা শিক্ষা হয়!'
আমি নির্বোধের মতো মেয়েটাকে দেখছি। অতি সুন্দরী মেয়েদের সাথে কথা বলা এবং এড়িয়ে যাওয়া, দুটোই ভয়ানক মানসিক চাপের!
'মনে হচ্ছে না ছেলেটা আমার কথা সিরিয়াসলি নিচ্ছে। সিমি! তোর বাবাকে ফোন করতো।'
পেছনে আরেকটা মেয়েকে দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছে সেও আমার মতোই আতঙ্কিত। পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারছে না।
'সিমি! কি বললাম তোকে?'
'ঝামেলা করিস না, চল এখান থেকে।'
সিমি নামের মেয়েটা সেই মেয়েকে প্রায় জোর করেই নিয়ে গেলো। মনে হয় নি মেয়েটার রাগ শান্ত হয়েছে। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভাবলাম যে এমনটা কেন হলো! খুব সম্ভবত পেছনের ছেলেটার বিশ্রি শিষ বাজানোর কারণে আমাকে এমন অযাচিত মার খেতে হলো। ছেলেটাকে বের করতে হবে।
'সাজ্জাদ না? দাঁড়া!'
ছেলেটা মুখ লুকিয়ে পেছনে হাঁটা শুরু করেছে।
'এই শালা, দাঁড়াতে বললাম না!'
কোন উপায় না পেয়ে বেচারা দাঁড়িয়ে পরলো। কিছুক্ষণ আগের পুরো ঘটনাটাই সে দেখছে। আর আমিও তার উপরে রেগে থাকব এটাই স্বাভাবিক। উদুম কেলানি দিলেও শাস্তিটা বোধয় অল্প হয়ে যাবে।
'আরে অভ্র! কি খবর দোস্ত?'
'শিষটা কি তুই দিয়েছিলি?'
'কোন শিষ?'
'নাটক করলে একটা থাপ্পড় দিবো, দাঁত খুলে যাবে!'
'বিশ্বাস কর দোস্ত, আমি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে দিই নি।'
'আজকাল এগুলো চোট্টামি করে বেড়াচ্ছিস তাহলে?'
সাজ্জাদ আমার কলেজের ক্লাসমেট। শুরুতে কিছুদিন সে নিরীহ প্রাণীর মতো এক কোণায় বসে থাকতো। মানুষ কত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়! জানতে পারলাম 'শাকিল ভাই' নামের সেকন্ড ইয়ারের এক ছাগল এগুলো শিখিয়ে বেড়াচ্ছে।
'আবার শিষ বাজা।'
সাজ্জাদ একটু হকচকিয়ে গেলো।
'তাকিয়ে দেখছিস কি? মেয়েটার হাতে তো মার ঠিকই খাওয়ালি, এখন আমার সামনে বাজিয়ে দেখা।'
সাজ্জাদের চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। বুঝতেই পারছি ঘাবড়ে গেছে অনেক, অনেক চেষ্টার পরেও ফুঁ বের হচ্ছে না।
'শাকিল ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাবি একদিন, সে কেমন শিষ বাজায় দেখব।'
সাজ্জাদ হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ল।
'চেষ্টা করতে থাক, এটাই তোর শাস্তি।'
আমি তাকে বাস-স্টপে রেখেই বাসে উঠে পরলাম। জানালা দিয়ে তাকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
YOU ARE READING
কেউ একজন
Science Fictionপ্রেমে পড়ে মানুষ কিই না করে। হোক না অতীত ভ্রমন! যার অস্তিত্ব থেকেও নেই এমনই একজন চরিত্র হচ্ছে "কেউ একজন"।