পর্ব ১ - "শেষ থেকে শুরু"

35 2 2
                                    

  পূর্বদিক থেকে সূর্যের অস্ফুট আলো আসছে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। মৃদু হাওয়ায় চুলগুলো দুলছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সূর্যের রশ্মিগুলো মেঘ ভেদ করে আসতে পারছে না। দূরে থেকে পাখিদের গুঞ্জনের অস্পষ্ট শব্দ আসছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া। 
  মাথা ঝিম ধরে আছে। শুয়ে থাকতে ভালোই লাগছে। ঘাসের ওপরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিশির বিন্দু দেখা যাচ্ছে। মন চাইছে আরো কিছুই সময় চুপচাপ শুয়ে থাকব। কিন্তু পরিবেশটা ঠিক মনে হচ্ছে না। উঠেই কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম।
  আমি এখানে কেন! আমার তো আনিকার সাথে দেখা করার কথা। কিছুক্ষণ আগেই আমি তার সাথে কথা বলার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। সে আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বলবে বলে ডেকেছিলো। বলেছিলো আজ একটা স্পেশাল দিন।
  কথা নেই বার্তা নেই, কফিশপের সামনে থেকে উধাও হয়ে নিজেকে বিরাট একটা ফাঁকা মাঠে আবিষ্কার করাটা কোনদিক থেকেই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। এক পর্যায়ে মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি। তাছাড়া এর পেছনে আমি কোন লজিক খুঁজে পাচ্ছি না। এত না ভেবে স্বপ্নটা উপভোগ করা যাক।
  হেঁটে মাঠ থেকে বের হয়ে এলাম। যায়গাটা আমি চিনতে পেরেছি। এটা আমাদের কলেজের মাঠ। কিন্তু অডিটোরিয়াম কোথায় গেলো! ২০২১ এ ৩ কোটি টাকা খরচ করে অডিটোরিয়াম বানানো হয়েছে, সেটা ৩ সেকেন্ডেই গায়েব? চারপাশের জিনিসগুলোও বাস্তব মনে হচ্ছে। কোনো এক বিজ্ঞ ব্যাক্তি বলেছেন, স্বপ্নে চিমটি কাটলে ব্যাথা লাগে না। বাম হাতে একটা চিমটি কেটে দেখলাম আমি সবকিছুই অনুভব করতে পারছি। না, এটা কোনভাবেই স্বপ্ন হতে পারে না।
  কলেজের গেট দিয়ে বের হয়ে এলাম। আমি উন্মাদের মতো রাস্তা পার হচ্ছি। পাশেই পার্ক করা এক গাড়ির ড্রাইভার আমাকে এমন ভাবে দেখছে যেনো গাড়িটা দিয়ে পিষে ফেলতে পারলেই ওর শান্তি।
  হাইওয়ের ড্রাইভারদের মন হয় পাথরের মতো শক্ত। রাস্তায় কেউ থাকলে চাপা দিতে দ্বিধা করে না। ওদের বোধয় বিশেষ কোন ট্রেনিং দেয়া হয়, গাড়ি চাপা দিয়ে স্পট থেকে চলে যেতে হবে। সেখানে থাকলেই ফেঁসে যাবে। এই ড্রাইভারটাও অনেকক্ষণ ধরেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে একটু ভড়কে দেয়া যাক। 
  আমি ড্রাইভারটার চোখের দিকে তাকিয়ে এগোচ্ছি। সে ভয় পেয়ে খানিকটা দূরে সরে গেছে।
‘গাড়ির কাগজপত্র দেখান!’
‘জে ভাইসাব?’
নিশ্চিত এই ব্যাটার কাছে কিচ্ছু নেই।
‘গাড়ির লাইসেন্স, ইন্সুইরেন্স নেই, গাড়ি চালাচ্ছেন? ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখি আপনার!’
‘আপনি কে?’
‘আমি পুলিশের লোক।’
মানিব্যাগ থেকে কার্ড বের করে দিলো। মেয়াদ ৪ জানুয়ারি, ২০২১।
‘আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখি মেয়াদোত্তীর্ণ! ঘটনা কি?’
‘ফালতু দিষ্টাব কইরেন না তো ভাই।’
‘ফালতু ডিস্টার্ব করছি? চেক করেন ভালো করে।’
ড্রাইভার বিদ্যুৎ বেগে কার্ডটা ছিনিয়ে নিলো। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা গুনছে।
‘এখনও ৪ মাস সময় আছে! পড়ালেখা কইরা এই শিখছেন? সাইডে চাপেন মিয়া।’
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ৪ মাস এখনও সময় আছে মানেটা কি? ব্যাপারটা গুলিয়ে যাচ্ছে। 
  রাস্তায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে কাজ হবে না। কখন যে সত্যি সত্যিই গাড়ি চাপা দিয়ে দেবে তা বলা যায় না। তাদেরকে সেই সময় দিলে চলবে না। আমাকে যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটা পার করে যেতে হবে।
  রাস্তার ওপাশে ‘করতোয়া’ নামের একটা কফিশপ আছে। রহমত নামের এক ভদ্রলোক কফিশপ'টির মালিক। রহমত চাচা অনেক ভালো মানুষ। তিনি মোটামুটি ১৫ বছর ধরে এটা চালান। সৎ না হলে এতদিন ধরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব।
  আমি ভেতরে গিয়ে বসলাম। খবরের কাগজ খুঁজছি। ড্রাইভারের কথা গুলো এখনও কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তার কথা ফেলতেও পারছি না। আজকের তারিখ জানাটা খুবই জরুরি। রহমত চাচাকে আজ দেখা যাচ্ছে না। থাকলে নিশ্চয়ই খোঁজখবর নিতেন।
  পশ্চিম কোণার টেবিলে একজন খবরের কাগজ নিয়ে বসে আছে। বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি হবে। মনোযোগ অন্যদিকে। মনে হচ্ছে বাড়ির কথা চিন্তা করছে। হতে পারে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেছে, আর সেও রেগে গিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তা নয়তো টাকা-পয়সাঘটিত কোন সমস্যা।
‘কেমন আছেন আঙ্কেল?’
লোকটা চমকে উঠেছেন। আমার কাছ থেকে আঙ্কেল সম্মোধন আশা করেন নি তিনি।
‘তোমার থেকে খুব জোর ৮-১০ বছরের বড় হবো, তাতেই আঙ্কেল ডেকে বসলে?’
‘যেভাবে চিন্তা করছেন, এখন আঙ্কেল না মনে হলেও খুব দ্রুতই চুল পেকে আঙ্কেলদের মতো হয়ে যাবেন।’
তিনি কিছু বললেন না। বুঝতে পেরেছেন আমার কথা যুক্তিসম্মত।
‘আজকের তারিখটা একটু বলবেন?’
নিরস গলায় বললেন, ‘৭ই সেপ্টেম্বর।’
‘কত সাল?’
এবার তিনি আমার দিকে তাকিয়ে এমন একটা লুক দিলেন যেনো ওনাকে বলেছি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। 
‘ইয়ার্কি করতেছো?’
‘জ্বি না, আপনি বলতে না চাইলে জোর করব না।’
‘এটা ২০২০ সাল।’
  আমি কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। আমি আরো কিছু যায়গা চেক করে দেখেছি। এটা যে সত্যিই ২০২০ সাল, সেটা বুঝতে বাকি নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমি কিভাবে যেনো ২০২৩ সাল থেকে ২০২০ সালে চলে এসেছি। আমি সাধারণত চমকাই না। তবে এখন যে ব্যাপারটা ঘটছে এটা অস্বাভাবিক। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে, আনিকা আজ সকালে ফোন করেছিলো আর তার নাম্বারের পাশে ডেট ছিলো ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩। 
  হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো। কি একটা কো-ইনসিডেন্ট! আনিকার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো আজকের দিনেই। ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২০। 
  আজ রাস্তার ট্রাফিকও অনেক কম কম লাগছে। পরবর্তী ৩ বছরে ট্রাফিকের পরিমাণ যতটা বাড়বে সেটা সবার কল্পনার বাইরে। যত দিন যাবে বিত্তবান ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়বে। গাড়ির পরিমাণও বাড়তে থাকবে। এক পর্যায়ে দ্রুত যাতায়াত করার উদ্দেশ্যে নেয়া গাড়িগুলো অতিরিক্ত ট্রাফিকের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর পথচারীরা মনের আনন্দে হেঁটে গাড়িগুলো ওভারটেক করে চলে যাবে।
  আমি এখন মাঠটার ঠিক সেই যায়গায় দাঁড়িয়ে যেখানে আমি শুয়ে ছিলাম। সব সমস্যার শুরু এখান থেকেই। যায়গাটা পর্যবেক্ষণ করলেই রহস্যর সমাধান হবে। 
  কেন জানি মাথাটা ভারি হয়ে আসছে। শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি। দাঁড়িয়ে থাকার মতো ক্ষমতা নেই। সিনেমায় স্লো মোশনে যেমন দেখায়, আমি নিজেকে ঠিক সেভাবে পরে যেতে দেখছি। আমি কি মারা যাচ্ছি? এটাই কি মৃত্যু? প্রত্যেকটা মুহুর্তে নতুন এক অনুভূতি।
  পূর্বদিক থেকে সূর্যের অস্ফুট আলো আসছে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। মৃদু হাওয়ায় চুলগুলো দুলছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সূর্যের রশ্মিগুলো মেঘ ভেদ করে আসতে পারছে না। দূরে থেকে পাখিদের গুঞ্জনের অস্পষ্ট শব্দ আসছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া। 
  মাথা ঝিম ধরে আছে। শুয়ে থাকতে ভালোই লাগছে। ঘাসের ওপরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিশির বিন্দু দেখা যাচ্ছে। মন চাইছে আরো কিছুই সময় চুপচাপ শুয়ে থাকব। কিন্তু পরিবেশটা ঠিক মনে হচ্ছে না। উঠেই কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম।
  আমি এখানে কেন! আমার তো আনিকার সাথে দেখা করার কথা। কিছুক্ষণ আগেই আমি তার সাথে কথা বলার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। সে আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বলবে বলে ডেকেছিলো। বলেছিলো আজ একটা স্পেশাল দিন।
  কথা নেই বার্তা নেই, কফিশপের সামনে থেকে উধাও হয়ে নিজেকে বিরাট একটা ফাঁকা মাঠে আবিষ্কার করাটা কোনদিক থেকেই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। এক পর্যায়ে মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি। তাছাড়া এর পেছনে আমি কোন লজিক খুঁজে পাচ্ছি না। এত না ভেবে স্বপ্নটা উপভোগ করা যাক।
  হেঁটে মাঠ থেকে বের হয়ে এলাম। যায়গাটা আমি চিনতে পেরেছি। এটা আমাদের কলেজের মাঠ। কিন্তু অডিটোরিয়াম কোথায় গেলো! ২০২১ এ ৩ কোটি টাকা খরচ করে অডিটোরিয়াম বানানো হয়েছে, সেটা ৩ সেকেন্ডেই গায়েব? চারপাশের জিনিসগুলোও বাস্তব মনে হচ্ছে। কোনো এক বিজ্ঞ ব্যাক্তি বলেছেন, স্বপ্নে চিমটি কাটলে ব্যাথা লাগে না। বাম হাতে একটা চিমটি কেটে দেখলাম আমি সবকিছুই অনুভব করতে পারছি। না, এটা কোনভাবেই স্বপ্ন হতে পারে না।
  কলেজের গেট দিয়ে বের হয়ে এলাম। আমি উন্মাদের মতো রাস্তা পার হচ্ছি। পাশেই পার্ক করা এক গাড়ির ড্রাইভার আমাকে এমন ভাবে দেখছে যেনো গাড়িটা দিয়ে পিষে ফেলতে পারলেই ওর শান্তি।
  হাইওয়ের ড্রাইভারদের মন হয় পাথরের মতো শক্ত। রাস্তায় কেউ থাকলে চাপা দিতে দ্বিধা করে না। ওদের বোধয় বিশেষ কোন ট্রেনিং দেয়া হয়, গাড়ি চাপা দিয়ে স্পট থেকে চলে যেতে হবে। সেখানে থাকলেই ফেঁসে যাবে। এই ড্রাইভারটাও অনেকক্ষণ ধরেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে একটু ভড়কে দেয়া যাক। 
  আমি ড্রাইভারটার চোখের দিকে তাকিয়ে এগোচ্ছি। সে ভয় পেয়ে খানিকটা দূরে সরে গেছে।
'গাড়ির কাগজপত্র দেখান!'
'জে ভাইসাব?'
নিশ্চিত এই ব্যাটার কাছে কিচ্ছু নেই।
'গাড়ির লাইসেন্স, ইন্সুইরেন্স নেই, গাড়ি চালাচ্ছেন? ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখি আপনার!'
'আপনে কে?'
'আমি পুলিশের লোক।'
মানিব্যাগ থেকে কার্ড বের করে দিলো। মেয়াদ ৪ জানুয়ারি, ২০২১।
'আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখি মেয়াদোত্তীর্ণ! ঘটনা কি?'
'ফালতু দিষ্টাব কইরেন না তো ভাই।'
'ফালতু ডিস্টার্ব করছি? চেক করেন ভালো করে।'
ড্রাইভার বিদ্যুৎ বেগে কার্ডটা ছিনিয়ে নিলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা গুনছে।
'এখনও ৭ মাস সময় আছে! পড়ালেখা কইরা এই শিখছেন? সাইডে চাপেন মিয়া।'
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ৭ মাস এখনও সময় আছে মানেটা কি? ব্যাপারটা গুলিয়ে যাচ্ছে। 
  রাস্তায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে কাজ হবে না। কখন যে সত্যি সত্যিই গাড়ি চাপা দিয়ে দেবে তা বলা যায় না। তাদেরকে সেই সময় দিলে চলবে না। আমাকে যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটা পার করে যেতে হবে।
  রাস্তার ওপাশে 'করতোয়া' নামের একটা কফিশপ আছে। রহমত নামের এক ভদ্রলোক কফিশপ'টির মালিক। রহমত চাচা অনেক ভালো মানুষ। তিনি মোটামুটি ১৫ বছর ধরে এটা চালান। সৎ না হলে এতদিন ধরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব।
  আমি ভেতরে গিয়ে বসলাম। খবরের কাগজ খুঁজছি। ড্রাইভারের কথা গুলো এখনও কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তার কথা ফেলতেও পারছি না। আজকের তারিখ জানাটা খুবই জরুরি। রহমত চাচাকে আজ দেখা যাচ্ছে না। থাকলে নিশ্চয়ই খোঁজখবর নিতেন।
  পশ্চিম কোণার টেবিলে একজন খবরের কাগজ নিয়ে বসে আছে। বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি হবে। মনোযোগ অন্যদিকে। মনে হচ্ছে বাড়ির কথা চিন্তা করছে। হতে পারে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেছে, আর সেও রেগে গিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তা নয়তো টাকা-পয়সাঘটিত কোন সমস্যা।
'কেমন আছেন আঙ্কেল?'
লোকটা চমকে উঠেছেন। আমার কাছ থেকে আঙ্কেল সম্মোধন আশা করেন নি তিনি।
'তোমার থেকে খুব জোর ৮-১০ বছরের বড় হবো, তাতেই আঙ্কেল ডেকে বসলে?'
'যেভাবে চিন্তা করছেন, এখন আঙ্কেল না মনে হলেও খুব দ্রুতই চুল পেকে আঙ্কেলদের মতো হয়ে যাবেন।'
তিনি কিছু বললেন না। বুঝতে পেরেছেন আমার কথা যুক্তিসম্মত।
'আজকের তারিখটা একটু বলবেন?'
নিরস গলায় বললেন, '৭ই সেপ্টেম্বর।'
'কত সাল?'
এবার তিনি আমার দিকে তাকিয়ে এমন একটা লুক দিলেন যেনো ওনাকে বলেছি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। 
'ইয়ার্কি করতেছো?'
'জ্বি না, আপনি বলতে না চাইলে জোর করব না।'
'এটা ২০২০ সাল।'
  আমি কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। আমি আরো কিছু যায়গা চেক করে দেখেছি। এটা যে সত্যিই ২০২০ সাল, সেটা বুঝতে বাকি নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমি কিভাবে যেনো ২০২৩ সাল থেকে ২০২০ সালে চলে এসেছি। আমি সাধারণত চমকাই না। তবে এখন যে ব্যাপারটা ঘটছে এটা অস্বাভাবিক। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে, আনিকা আজ সকালে ফোন করেছিলো আর তার নাম্বারের পাশে ডেট ছিলো ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩। 
  হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো। কি একটা কো-ইনসিডেন্ট! আনিকার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো আজকের দিনেই। ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২০। 
  আজ রাস্তার ট্রাফিকও অনেক কম কম লাগছে। পরবর্তী ৩ বছরে ট্রাফিকের পরিমাণ যতটা বাড়বে সেটা সবার কল্পনার বাইরে। যত দিন যাবে বিত্তবান ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়বে। গাড়ির পরিমাণও বাড়তে থাকবে। এক পর্যায়ে দ্রুত যাতায়াত করার উদ্দেশ্যে নেয়া গাড়িগুলো অতিরিক্ত ট্রাফিকের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর পথচারীরা মনের আনন্দে হেঁটে গাড়িগুলো ওভারটেক করে চলে যাবে।
  আমি এখন মাঠটার ঠিক সেই যায়গায় দাঁড়িয়ে যেখানে আমি শুয়ে ছিলাম। সব সমস্যার শুরু এখান থেকেই। যায়গাটা পর্যবেক্ষণ করলেই রহস্যর সমাধান হবে। 
  কেন জানি মাথাটা ভারি হয়ে আসছে। শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি। দাঁড়িয়ে থাকার মতো ক্ষমতা নেই। সিনেমায় স্লো মোশনে যেমন দেখায়, আমি নিজেকে ঠিক সেভাবে পরে যেতে দেখছি। আমি কি মারা যাচ্ছি? এটাই কি মৃত্যু? প্রত্যেকটা মুহুর্তে নতুন এক অনুভূতি।

কেউ একজনWhere stories live. Discover now