এক.

26 1 2
                                    

বাইরে তাপমাত্রা প্রায় ২০°সেন্টিগ্রেড। এর কমও হতে পারে। টঙের লম্বা বেঞ্চের একেবারে বাইরের স্থানটা তার জন্য বরাদ্দ। এখান থেকে মেইন রাস্তাটা বেশ চমৎকার দেখা যায়। আর এসময় বাস আসার সময়। কত ধরনের মানুষের দেখা মিলবে। এই দূরত্বে তাদের অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় লক্ষ করা যায় যা কাছে থাকলে গুরুত্বহীন মনে হয়। যেমন ওই যে বাচ্চাটা, তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বেচারা এখনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। কিন্তু মা-বাপের খেয়াল নেই। মা তার কোলের বাচ্চা-ব্যাগ সামলাতে ব্যস্ত।আর বাবা একগাদা ব্যাগ নিয়ে গাড়ির সন্ধানে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে।
এমন সময় একজন লোক নামলো। ৩০-৩৫ বয়স হয়তো! সে গিয়ে বাচ্চাটার কাছে গিয়ে তার সামনে হাটু গেড়ে বসলো।কিছু একটা কথা হলো। বাচ্চাটা মাথা নাড়লো। লোকটা এদিকে টঙের দিকে এগিয়ে এল।
-"ভাই, এক বোতল পানি দেন।"
-"জ্বে! দিতেছি! খাড়ান!"
দোকানি পানি দিল। লোকটা পানি দিয়ে দাম দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তারপর আবার ঘুরে এসে জিজ্ঞেস করলো,
-"ভাই এখানে গাড়ি কই পাবো?রিকশা বা ভ্যান কিছুই যে দেখছি না।"
দোকানির পরিবর্তে দোকানে বসে থাকা একজন উত্তর দিল,
-"এখানে তো পাইবেন না। তয় আরেকটু সামনে গেলে রিকশা স্ট্যান্ড আছে। ওইখানে পাবেন।হাঁটন লাগব একটু। ভাই কি নতুন আইছেন?"
-"জ্বি" এই বলে বন্ধুত্বসুলভ হালকা হাসি দিয়ে চলে গেলেন বাচ্চাটার কাছে। বাচ্চাটাকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে মাথায় আলতো করে হাত রেখে কি যেন বললেন। তারপর বাচ্চাটার বাবাকে কিছু একটা বলে চলে গেলেন, যেদিকে রিকশা স্ট্যান্ড আছে বলে জানালো হলো তাকে সেদিকে।
এদিকে টঙের মানুষজন আবারো গল্পে মশগুল হয়ে গেল। রাজনীতি,কূটনীতি,সমাজনীতি,খেলাধুলা, ধর্ম-একেকজন একেক বিষয় নিয়ে তাদের জ্ঞানের পসরা খুলে বসেছে যেন। এগুলো শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল অভ্র। হঠাৎ বেলের টুংটাং শব্দে বাস্তবে ফিরে আসল। একটা ভ্যান এসেছে। ওই পরিবারটা ভ্যানটাতে উঠে বসে চলে গেল।
এই দিয়ে দুইকাপ চা কখন শেষ হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারেনি।
-"সোহরাব ভাই! একটা ক্রিম ব্রেড দেন। আর এই নেন।" বলে টাকা দিয়ে ব্রেড নিয়ে বের হয়ে এলো টঙ থেকে।
-"দু কাপ চা, দু কাপ চা, দু কাপ....." আওরাতে আওরাতে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
সময় এখন সকাল ৭ঃ২০। এত সকালে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফেরার অনুভূতিটা অভ্রের এত ভালো লাগে যে কলেজে দেরি হয়ে গেলেও চিন্তা হয়না।
বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে তাড়া দিল।
-"মা! নাস্তা করবো না৷ ব্রেড খাব।"
-"আজকেও? একটা ডিম খা। আর দুধ দিচ্ছি। খেয়ে নে" রান্নাঘর থেকে জবাব আসলো।
চেহারায় কেমন একটা বিকৃত ভাব এনে তৈরি হয়ে নিল। টেবিলে রাখা ডিম-দুধটুকু কোনমতে গিলে ব্রেডটা একহাতে নিয়ে বের হয়ে গেল।
আবার ফিরে এসে দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে বললো,
-"মা আসি!"
-"সাবধানে যা। দৌঁড়াবি না রাস্তায়!"
-"হুম্মম্মম!"
কলেজে সাধারণত হেঁটে হেঁটেই যায়। বেশি দূরে না। হেঁটে গেলে প্রায় বিশ মিনিটের রাস্তা। এ রাস্তাটা মনে হয় শহরের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাগুলোর একটা। ব্রেডে একটা কামড় বসিয়ে গুনগুন করতে করতে কলেজে পৌঁছালো।

Has llegado al final de las partes publicadas.

⏰ Última actualización: Jan 18 ⏰

¡Añade esta historia a tu biblioteca para recibir notificaciones sobre nuevas partes!

একদিনDonde viven las historias. Descúbrelo ahora