আত্মত্যাগ

59 21 33
                                    


-"আরে মনির ভিতরে আয়," জলিল ভাই বলার সাথে সাথেই দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো মনির।
ইতস্তত মুখে বলল,
-"ভাই, আইজ কামে না গেলে হয় না?"
-"কেন, তর কি হইছে?" কঠিন মুখে জিজ্ঞেস করলো জলিল।
-"কেন জানি ভাই আইজ শরীরডা বড্ড ম্যাজম্যাজ করতাছে, মাথাডাও ঝিম মাইরা আছে।"
-"এসব বললে তো কাজ হইবো না। তোরে আজকে কামে যাইতেই হইবো। নাইলে খাইতে পাবি না।" রাগান্বিত কণ্ঠে বলল জলিল।
-"ভাই..." অনুরোধের সুরে সুধালো মনির।
-"কোনো কথা না, পানির বোতলগুলা নিয়া যা এহন।"

মন খারাপ করে পানির বোতলগুলো কাঁধে তুলে নিলো মনির আর যাত্রা শুরু করলো রেলস্টেশনের দিকে।

জলিল ভাই, যার অধীনে বিশ-পঁচিশেক শিশু - কিশোর কাজ করে। রাস্তা থেকে তুলে এনে এসব শিশুকে দিনমজুরের কাজে লাগিয়েছে সে এবং এদের আয় করা সেই টাকার বিনিময়ে কিছু থাকার জায়গা এবং দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করে দেয় সে। আর যেদিন যে কাজে যেতে পারবে না সেদিন এক ফোঁটা পানিও তার কপালে জুটবে না। মনির সেই বিশ-পঁচিশ শিশু-কিশোরদের একজন।

------------------

-"আফা, পানি নেবেন..."    -"সাহেব পানি..."
ব্যাস্ত রেলওয়ে স্টেশনে কারোরই সময় নেই পানি বিক্রেতা মনিরের দিকে তাকানোর। তারপরও কিছুক্ষণ বৃথা চেষ্টা চালায় সে।
আজ রৌদ্রের উত্তাপও প্রচন্ড। দরদর করে ঘামছে সে। সেই সাথে মাথাটাও ঝিমঝিম করছে। কিন্তু এই বোতলগুলো বিক্রি না করে জলিল ভাইয়ের কাছে ফিরলে ভাগ্য তার সহায় হবে না।

-"আফু, পানি কিনবেন?" চশমা পরিহিতা এক তরুণীর কাছে গিয়ে করুণ সুরে জিজ্ঞেস করলো সে।
মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে মনিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-"কই তোর পানি?"
এবার মনির উৎসাহের সাথে কাঁধ থেকে পানির বোতলগুলো নামিয়ে দেখালো।

মেয়েটি একটি পানির বোতল হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ভ্রুকুঞ্চিত করে বলল,
-"এই তোর পানির বোতল? এগুলো বিক্রি করিস? দেখেছিস, কি নোংরা এই বোতল, হলুদ হয়ে গেছে।" বোতলের দিকে অঙ্গুটি নির্দেশ করে বললো।

আত্মত্যাগ (𝐂𝐨𝐦𝐩𝐥𝐞𝐭𝐞𝐝 ✔︎)Where stories live. Discover now