জানি সত্য নয়!

34 1 0
                                    

৮.
"দ্যট ওয়াজ প্রিটি উইয়ারড ম্যান! ইভেন ফর ইউ!"
ফাহরিল এর কথায় ওর দিকে তাকালো সামিন। কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই ধানমন্ডি লেক এই কত আড্ডা গান হয়ে গেছে, জীবনের প্রথম আজ একজন মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে হাসিমুখে ওর সাথে কথা বলতে এগিয়ে এসেছে। সামিন খুব সহজে অবাক হয় না, তবে আজকের ঘটনা টা বেশ অবাক করা ই ছিল, মানতেই হবে। এটা শুধুমাত্র এই কারনে নয় যে মেয়েটা এভাবে এগিয়ে এসেছে, সামিনের সবচেয়ে অবাক লেগেছে যেই মেয়েটা এগিয়ে এসেছে সে শুভ্রার বোন! শুভ্রা নয়। শুভ্রা এগিয়ে আসলে হয়ত এত অবাক হত না সামিন। ওর অদ্ভুত চরিত্রের সাথে কিছুটা হলেও পরিচিতি আছে সামিনের। কিন্তু ওর বোন! সামিন জোরে জোরে মাথা ঝাঁকালো! কিভাবে! এক পরিবারের সব মেয়েই কি এত টা অদ্ভুত হতে পারে! আর মেয়েটা যখন এগিয়ে আসছিল সামিন সত্যি ভেবেছিল হয়ত শুভ্রা পাঠিয়েছে। কিন্তু না। সে নিজেই এসেছে! এই ব্যাপার টা মানতে কেন যেন কষ্ট হচ্ছে!
শুভ্রা কে বসে থাকতে ও আগেই দেখেছে। ও একদম শুভ্রার দিকে মুখ করেই বসে ছিল। ওর ধারনা ছিল শুভ্রা ওকে দেখে চমকে উঠবে। যদিও সে অনেকবার এই দিকে তাকিয়েছে কিন্তু ওর দৃষ্টি ওর চোখের দিকে ছিল না। ও যেন ওকে ছাড়িয়ে অন্য কোন প্রান্তে তাকিয়ে ছিল! সামিন ভাবছিল শুভ্রা হয়ত  ওকে না দেখার ভান করে ইগ্নোর করছে। সামিনের তাতে কিছু যায় আসে নি। বরং মনে মনে খুশি ই ছিল। বন্ধু মহলে শুভ্রার মতন একজন সুন্দরী মেয়ের আগমন ঘটলে প্রচুর ঝামেলা। এটা সামিন চাচ্ছিল না। সামিন আবার মাথা ঝাঁকালো!
"কিরে মামা মাথায় গিয়ে পানি ঢালো! এভাবে ঝাঁকালে খুলে পড়ে যাবে!" তানভির হাসে। তবে ওরা কেউই এই ব্যাপার টা নিয়ে মজা করার স্টেজ এ এখনো পৌছায় নি। সবাই একটা ঘোরের মধ্যে আছে। শুভ্রার এই বোন টার প্রচুর ছবি দেখেছে সামিন। মাঝে মাঝে বিরক্ত ও হয়েছে যে এত ছবি কেন ওদের দুইজন এর। কিন্তু আজকে সামনাসামনি দেখে ও কেন যেন মিলাতে পারছিল না! মেয়েটাকে ওর প্রচুর অদ্ভুত লেগেছে। ছবি তে তো এমন লাগে না! সমস্যা টা কি। অদ্ভুত এক পরিবার!
সামিন বাসায় গিয়ে ঠিক করতে পারছিল না ঘটনা টা রিয়ানা কে বলবে কিনা। রিয়ানা বুদ্ধিমতী মেয়ে, হয়ত বুঝতে পারবে কিছু।
ঘটনা টা বলে সামিন চুপ করে রইল। ফোনের ওপাশ থেকে রিয়ানা ও চুপ। কয়েক মুহূর্ত পর রিয়ানা জিজ্ঞেস করল
"শুভ্রার বোন সে ও কি শুভ্রার মতন ই সুন্দর?"
"না। মেয়েটা অন্যরকম দেখতে। ওর ফিচার খুব শার্প তবে শুভ্রার মতন না।"
"আচ্ছা। আমার মনে হয় মেয়েটা আসলে জেনুইনলি ই তোমার গান শুনে মুগ্ধ হয়েছে। আর বৃষ্টি হবে হবে ভাব, গোধূলি বিকেল। এসব ও একটা ফ্যাক্টর। এগুলো মিলিয়ে মেয়েটা ঝোঁকে পড়ে করেছে ব্যাপার টা!"
"এর সাথে সুন্দরের কি সম্পর্ক ছিল?" সামিন জিজ্ঞেস না করে পারলো না।
"শুভ্রার মতন সুন্দর হলে তোমার মধ্যেও হয়ত একটা ঘোর বা আবেগ তৈরি হত। এত সুন্দর একটা মেয়ে আমার গানে মুগ্ধ হয়ে কাঁদছে, ব্যাপার টা বেশ রোমান্টিক না?"
"হুম। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই হয়ে গেল সব। আমি শুধু এটাই বুঝলাম না শুভ্রা কেন আসলো না! ওর বোন কেন আসলো? এটা অদ্ভূত না?"
"কেন? তুমি কি ধরেই নিয়েছো যে শুভ্রা তোমাকে পছন্দ করে পাগলামি করতেই থাকবে? হঠাত আসা আবেগ, হঠাত ই চলে যায়। মেবি সি মুভড অন..."
"হতে পারে!"
"শুভ্রা মুভ অন করায় মন খারাপ?"
"না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ব্যাপার টা অন্য কিছু।"
"অন্য কিছু কি?"
"এক্সপ্লেইন করতে পারছি না.."
"তাহলে শুভ্রার সাথে কথা বলে দেখো.."
"শুভ্রার বোন আমাকে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে!"
"বাহ, এক্সেপ্ট করেছো?"
"হুম।"
"চমৎকার! আচ্ছা তুমি দেখো কি হয় আমার অফিসের জরুরি কাজ আছে। আমি একটু বের হচ্ছি। পরে কথা হবে।"
রিয়ানা লাইন কেটে দিল। আজকে এই প্রথম সামিন রিয়ানার গলায় ঈর্ষা দেখলো! তাহলে এই মেয়েটাও ইনভিসিবল নয়!
সামিনের মাথায় অনেক জট পেকে গেছে। সে মোটামুটি কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু একটা জিনিস সে বুঝতে পেরেছে, শুভ্রা উঠে না এসে, ওর বোন উঠে আসায় ও খুব কষ্ট পেয়েছে। রীতিমত অপমানিত লাগছে ওর। যেন ও রিজেক্টেড হয়েছে শুভ্রার কাছে! আর এই মেয়ে রিজেক্ট করলেও কি। ও তো শুভ্রা কে পছন্দ করে না! তবে এমন লাগলো কেন! এটার রহস্য টা কি!
সামিন একটা সিগারেট ধরালো। শুভ্রার এলোমেলো শাড়ি পড়া চেহারা, ওর ধানমন্ডি লেক এ বসে আনমনা হয়ে আকাশ দেখা, শুভ্রা যে ওর জন্য এত পাগলামি আর অস্থিরতা করেছে, এরপর ও যেন ওর মধ্যে একটা তাচ্ছিল্য ছিল। যেন ও এর ভিতরে নেই। কেউ প্রোগ্রাম করে দিয়েছে তাই করছে। ও একজন চমৎকার অভিনেতা তাই ওর অভিনয় টা কেউ ধরতে পারছে না! কোথায় যেন হিসেব মিলছে না।
৯.
খাবার টেবিল এ বসেও অভ্র খুব একটা কথা বলছে না। বিষয় টা খেয়াল করলেন রেবেকা।সাধারণত অভ্র ওদের বাসায় থাকতে আসলে শুভ্রা আর অভ্র সারাক্ষণ ই গুটুর গুটুর গল্প করতে থাকে। কিন্তু আজকে সব চুপ। কারন কি কে জানে। ঝগড়া তো হওয়ার কথা না, আর হলেও সেটার স্থায়িত্ব খুব কম ই হয়।
"কিছু হয়েছে নাকি অভ্র? এত চুপচাপ যে?"
"না চাচী। খুব টায়ার্ড।"
"ও। শুভ্রার একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ও মোটামুটি রাজি। তোমাকে বলেছে কিছু?" ছেলে ঢাকা ভার্সিটি এর টিচার।"
"না তো।" অভ্র বিষম খেলো
"পানি খাও। আর তোমার বোন কে বুঝিয়ে বলো। কতজন কেই তো ভাল লাগে। সবাই কে তো আর বিয়ে করা যায় না। ভাল প্রস্তাব সবসময় আসে না।তুমি ওকে বল, তোমার কথা মানে।"
"জি চাচী বলবো।" অভ্র হাত ধুয়ে উঠে গেল। মোটামুটি রাজি মানে কি! অভ্রর বিশ্বাস হচ্ছে না বিষয় টা।
"তুই বিয়ে তে রাজি?"
"আম্মু কে বলেছি আম্মু বললে বিয়ে করব। ছেলেটা খারাপ না। এমন ছেলের সাথেই আমার আল্টিমেটলি বিয়ে হবে দেরি করে কি লাভ?"
"তাহলে সামিন?"
"সে কি আমার হবার কথা?"
"হেয়ালি করিস না। সামিন কে নিয়ে কি ভাবছিস?"
"তুমি কি ভাবছো সেটা বল? আমার টা তো জানোই।"
"তুই আমার উপর রাগ করিস নি, এটায় আমি খুবি অবাক হয়েছি। তোর জায়গায় আমি থাকলে অনেক রাগ করতাম!"
"তুমি তো রাগ করার মতন কিছু করো নি। ওর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে সেটা প্রকাশ করেছো। এটা কি খারাপ নাকি?"
"আমি তোর সাথে মিথ্যা বলবো না। তোর যে প্রিয়, সে আমারো প্রিয়। আজকের মত এমন আমার কখনো লাগে নি। তবে তুই ভাবিস না যে আমি তাকে কেড়ে নিবো!"
"তুমি ওকে রিকোয়েস্ট পাঠাও নি?"
"কিভাবে জানলি?"
"সামিন জানিয়েছে। মেসেজ দিয়ে। ও যে এক্সেপ্ট করেছে এটাও জানিয়েছে।"
"ওহ। আমি তোকে কি বলবো বুঝছি না! কিন্তু আমি আসলেই ওকে চাচ্ছি না। মানে আমার ভাললাগছে। কিন্তু আমি কিছু করব না।শুধু দূর থেকে দেখবো! তাতে কি তোর আমাকে অনেক খারাপ মানুষ মনে হবে?"
"না তা কেন হবে? ও ভালোলাগার মতন ই মানুষ। তোমার ওকে ভাললাগে এতে দোষের কিছু নেই। তুমি চাইলে ওর সাথে মেসেজে কথা ও বলতে পারো। ও কখনো আমার ছিল ই না। ওকে আর তুমি কিভাবে কেড়ে নিবে?"
"আমার নিজেকে দোষী লাগছে। আমি তোর দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না।"
"অভ্র আপু। তুমি অনেক অনেস্ট আর বোল্ড একজন মেয়ে। এটা আমি এডমায়ার করি। তোমার সাথে আমার কোন কম্পিটিশন নেই। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এটা লুকিয়ে রাখত, তুমি রাখো নি। আমি সত্যি ই তোমার উপর বিন্দুমাত্র রাগ না। চল একটা মুভি দেখি।"
"থ্যানকিউ। ইউ আর দ্য বেস্ট সিস্টার ওয়ান ক্যান হ্যভ। কি মুভি দেখবি?"

আমার তোমাকে কখনো পাওয়ার কথা ছিল না! Where stories live. Discover now