চন্দ্রাহত

21 1 0
                                    

আকাশে আজকে সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। শুভ্রার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী শান্তা ওর রুমের কার্পেট এর উপর পা ছড়িয়ে বসে আছে। কারপেট টা সাদা, চাঁদের আলো তে পুরো রুম আলোকিত। খুব মৃদু সাউন্ডে সাউন্ড বক্স এ "বিটউইন দ্য বারস" বাজছে।  শুভ্রার জন্মদিন শেষ হতে আর কয়েক সেকেন্ড বাকি। শুভ্রা রুমের এক মাথা থেকে আরেক মাথা হেটে যাচ্ছে। খুব গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নাওয়ার আগে শুভ্রা এভাবে হাটে। ওর এই অস্থিরতা সম্পর্কে শান্তা অবগত। শান্তা কে পুরো ঘটনা টাই শুভ্রা খুলে বলেছে। শান্তা ওর জন্মদিন উপলক্ষে সারপ্রাইজ দিতে ওর বাসায় এসে বসে ছিল। শুভ্রা ফিরে আসার পর ওর মুখ থেকে সব শুনে আজকে রাতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুভ্রা অসম্ভব চাপা স্বভাব এর মেয়ে। সাধারনত ও তেমন কিছুই প্রকাশ করতে চায় না, যেহেতু আজকে এই পুরো ঘটনা টা সে বলেছে শান্তা কে, শান্তা ব্যাপার টাকে বুঝার চেষ্টা করছে। অনেক এংগেল থেকে চিন্তা করেও সে কোন কনক্লুইশন এ পৌছাতে পারছে না।
"আচ্ছা এই রিয়ানা মেয়েটা, মেয়েটা কি ওর প্রেমিকা?"
"প্রেমিকা না হলেও কাছাকাছি কিছু!"
"মেয়েটা কেমন দেখতে?"
"ভালই!"
"অভ্র আপু কি এখনো সামিন এর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে?"
"জানি না! ওর সাথে আমার এ বিষয়ে কথা হয় না। ও খুব অস্বস্তি বোধ করে এ ব্যাপার টায়!  বোধহয় অপরাধী ও ভাবে নিজেকে!"
"ভাবাই উচিত! বোনের ক্রাশ এর উপর ক্রাশ খাওয়া এটা কেমন কথা হল!"
"ধুর বাদ দে এই কথা।"
"এখন তুই কি ভাবছিস?"
"আমার ভাবা শেষ। আমি বিয়ে করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
"মানে? সামিন তোকে বিয়ে করবে?"
"আরে সামিন কে বিয়ে করবে?  আমি আরিফ ভাই এর কথা বলছি! উনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। হ্যা বলে দিবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
"যাকে তোর ভাললাগে না, তাকে বিয়ে করবি? পাগল নাকি!"
"উনাকে আমার ভাললাগে না কে বললো। উনি ভাল মানুষ। একটু বোরিং। কিন্তু মন টা ভাল।"
"হঠাত এই সিদ্ধান্ত নাওয়ার কারন? বিয়ে টা তো ছেলেখেলা না.."
"আমার কাছে সব ই খেলা। অল পিসেস অফ আ গেইম। ভুল চাল দিলেই শেষ।"
"তুই মনে করছিস যে আরিফ ভাই কে বিয়ে করা ঠিক চাল?"
"হুম। বিয়ে হল সেটেল করা। আমি সেটেল করবো ঠিক করেছি। আই এম টায়ার্ড অফ ওয়াকিং এলোন। আই নেভার সেইড দ্যট টু এনিওয়ান, বাট নাওয়াডেইস, আই ফিল সো এলোন..আই নিড সামওয়ান। এন্ড ইন্সটেইড অফ গোয়িং আফটার পিপল হু হ্যভ নো ইন্টারেস্ট ইন মি, আই ডিসাইডেড আই উইল সেটেল উইথ দ্য পারসন হু ইজ গোয়িং আফটার মি।"
"এটা কি তোর ফাইনাল ডিসিশন? "
"হ্যা"
"ওকে। কনগ্রাচুলেশান্স!"
"থ্যাংকইউ।"
"তাহলে সামিনের চ্যাপ্টার বাদ?"
"হুম।"
"বাহ। গুড। পাগলামির অবসান!"
শুভ্রা জবাবে হাসলো। হাসি টা শান্তার কাছে খুব মেকি লাগলো।
"তুই জোর করে খুশি হওয়ার চেষ্টা করছিস কেন?"
"আমি তো মন থেকেই খুশি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মন থেকে খুশি হওয়ার উপকরণ তো নেই চারিদিকে, তাই জোর করছি!"

বসুন্ধরা সিটি এর লিফট এ সামিন নোটিশ করলো শুভ্রা কে। ওর পাশে একটা ছেলে। লম্বা শ্যামলা। ছেলেটা বারবার তাকাচ্ছে শুভ্রার দিকে। সম্ভবত শুভ্রার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা ভীরে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। শুভ্রার পরনে কালো একটা শার্ট আর জিন্স। জিন্স এর হাটুর কাছে ছেঁড়া। এবং ওর মেলানকলিক চোখ গুলো কালো সানগ্লাস এ ঢাকা। সামিন শুভ্রা কে চিনতে পারতো না হয়ত। কিন্তু শুভ্রার সাথের ছেলেটা ওর নাম ধরে ওকে ডেকেছে বেশ কয়েকবার। শুভ্রা কে সবসময় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেছে সামিন। এই পোষাকে ওকে দেখে ওর কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। আরেকটা অবাক করা বিষয় শুভ্রার কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল কেটে কাধ ছুইছুই করা।ওকে কেউ ১৬/১৭ বছরের কিশোরী ভেবে ভুল করতেই পারে! শুভ্রার জন্মদিন এর প্রায় ৩ সপ্তাহ পরের ঘটনা এটা। শুভ্রাও আর যোগাযোগ করে নি, সামিন ও না। তবে শুভ্রার সোশাল মিডিয়া নিয়মিত চেক করেছে সামিন। এই ছেলের কোন ছবি কখনো চোখে পড়েনি। ছেলেটার সাথে যে ও ডেট এ এসেছে এটা শিওর। শুভ্রা ওকে দেখেছে নাকি দেখেনি এটা সামিন বুঝতে পারছে না। কালো সানগ্লাস টার কারনে ওর হাবভাব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।শুভ্রার একটা ফোন আসলো লিফট এই। ফোনালাপ টা সম্ভবত কোন বিদেশি এর সাথে হবে। খাটি ব্রিটিশ এক্সেন্ট এ কথা বলে চললো শুভ্রা। কেউ বলতেই পারবে না মেয়েটা ইংল্যান্ড এর নাগরিক নয়! লিফট থেকে বের হলো ও কথা বলতে বলতেই। কোন একটা ডকুমেন্ট ইউনিভার্সিটি তে পৌছানো নিয়ে আলাপ চলছে সম্ভবত। শুভ্রার ইংরেজি শুনে অনেকেই ওর দিকে ঘুরে তাকাচ্ছিলো। কিন্তু স্বভাবত ই সে কোনদিকে না তাকিয়ে কথা বলতে বলতে নেমে পড়লো। নামার ঠিক আগ মুহুর্তে ও ওর হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার হাত ধরলো এবং একসাথে নামলো দুজন। পুরো ঘটনা টা ঘটলো দুই সেকেন্ড ব্যবধানে। ওরা নামার পর ও সামিন লিফট এ দাঁড়িয়ে রইল, হঠাত করে ও ওর ভেতরে খুব সূক্ষ্ম ঈর্ষা অনুভব করলো। "ইটস রিডিকিউলাস! আই ডোন্ট লাইক হার দেন হোয়াই ডু আই কেয়ার ইফ শি হোল্ডস হ্যান্ড উইথ আ গাই!" সামিনের নিজের মনেই নিজেকে গালি দিলো "ইডিয়ট!"

আমার তোমাকে কখনো পাওয়ার কথা ছিল না! Donde viven las historias. Descúbrelo ahora