পারভীন বেগম সরে দাঁড়ালেন। তার চোখে মুখে কৌতুহল। তৌহিদ সোজা নুশরাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নুশরাত কিছু বলার আগেই তৌহিদ বললো,
- মিসেস নুশরাত চৌধুরী আপনাকে নিজের স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করার দায়ে গ্রেফতার করা হলো। প্লিজ আমাদের সাথে কো-অপারেট করুননুশরাতের ভ্রু-যুগল কুঞ্চিত হয়ে এলো৷ সে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে যাচ্ছে। আজ লোকটি তার সামনে তার শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রতিবেশী, বন্ধু তৌহিদ ভাই হিসেবে নয় বরং একজন নিষ্ঠাবান পুলিশ ইন্সপেক্টর তৌহিদুর রহমান হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নুশরাত স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
- তৌহিদ ভাই, আমার এরেস্ট ওয়ারেন্ট কি দেখতে পারি?
- অবশ্যই।তৌহিদ পকেট থেকে এরেস্ট ওয়ারেন্টটি বের করে নুশরাতের হাতে দিলো। এরপর জড়তাবিহীন কন্ঠে বললো,
- যে ছুরি দিয়ে মাহিরকে খুন করা হয়েছিলো সেটা পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, সেটায় আপনার এবং কেবল মাত্র আপনার ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া গেছে। এবার হয়তো আপনি আমাদের সাথে এতে রাজি?নুশরাত কিছু বললো না। মাথায় কিছুই আসছে না। যে দোষ সে করেই নি সেই দোষে আজ সে দোষী। এখন চিৎকার চেঁচামেচি করে কোনোই লাভ নেই। তাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। পারভীন বেগম তৌহিদের হাত ধরে বসলেন, আকুতির স্বরে বললেন,
- তৌহিদ, নুশরাত কিছু করে নি। বাবা, ওকে ফাসানো হচ্ছে। ওকে নিয়ে যেও না বাবা। তুমি তো ওকে চেনো। ও খুন করে নি।
- আন্টি, আইনের কাছে আমাদের হাত বাঁধা। আমাকে ক্ষমা করবেন।পারভীন বেগম নুশরাত কে আগলে ধরে বলেন,
- আমার মেয়েকে আমি যেতে দিবো না। তোমরা আমার মেয়েকে কোথাও নিয়ে যাবে না।পারভীন বেগম কাঁদছেন। তার মেয়েকে আজ মিথ্যে দোষে দোষী করে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাও কোনো ছোটখাটো দোষ নয়, খুনের আসামী হিসেবে। সে জানে তার মেয়ে কখনোই এমন কোনো কাজ করবে না। নুশরাত তার মার চোখের দিকে তাকায়। ধীর কন্ঠে আশ্বাস দেয়,
- মা, চিন্তা করো না। আমার কিছু হবে না।পারভীন বেগম না চাইতেও ছেড়ে দেন নুশরাতকে। তার চোখ থেকে নোনাজল গড়াচ্ছে। নুশরাতকে লেডি কন্সটেবলরা হাতকড়া পড়ায়। তারপর জীপগাড়িতে তোলা হয় তাকে। পারভীন বেগম অশ্রুশিক্ত চোখে তাকে দেখে যাচ্ছেন। তার কিছুই করার নেই। নিজের মেয়েকে নির্দোষ প্রমাণ করার কোনো পথ তার সামনে খোলা নেই______