ডিভোর্স পেপার হাতে পেতেই কোনো চিন্তা না করেই ঝটপট সই করে দিলো নুশরাত। তার মুখের হাবভাব অত্যন্ত স্বাভাবিক। বোঝা যাচ্ছে না তার মনে কি চলছে। কারণ তার হাত কাঁপছে না, না চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়েও স্বাভাবিক সে। মেয়েকে সূক্ষ্ণদৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছেন পারভীন বেগম। বিয়ের ন'মাসের ভেতরেই তার মেয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে দিবে তা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো। তিনি বাঁধা দেবার যে চেষ্টা করেন নি এমনটি নয়, কিন্তু মেয়ে যথেষ্ট বড়; নিজের সব সিদ্ধান্ত সে একা নিতেই পছন্দ করে। এমনটা নয় যে সে কোনো স্কুলে পরোয়া বাচ্চা, দু তিনখানা চড়, কিল মারলে জেদ ছেড়ে দিবে। নুশরাতের ঠিক বিপরীতে তার প্রাক্তন স্বামী মাহির বসে রয়েছে। মাহিরের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। একটু পর পর খালি ঠোঁট কামড়াচ্ছে, নখ কাঁটছে। সে বারবার কিছু বলতে যেয়েও বলে উঠতে পারছে না। তার দুপাশে তার বাবা-মা বসে রয়েছেন। মাহিরের বাবা মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা জাজ কোর্টের যুগ্ম জেলা জাজ। ঢাকা শহরে তার বেশ নামডাক রয়েছে, সবার কাছে তিনি ন্যায়ের প্রতিমূর্তি। অবশ্য আজকাল সরকারী কর্মকর্তা মানেই সম্মানের হকদার, তার উপরে যদি হয় বিচারক তাহলে তো কথাই নেই। মঈনুদ্দিন সাহেব তার গাম্ভীর্যকে অটুট রাখলেন। নুশরাতের এমন কয়েকদিনের নোটিসে ডিভোর্সের আবদার নিয়ে তার যেনো কোনো মাথাব্যাথাই নেই। অপরদিকে মাহিরের মা, হেনা বেগম চোখ মুখ খিঁচে বসে রয়েছেন। তিনি এই ছোটলোকঘরের মেয়েকে মোটেই পছন্দ করেন না। ছেলেটা কি দেখে এই অভদ্র মেয়েটিকে বিয়ে করেছে আল্লাহ ই জানে। এখন সমাজে কি তার কি মুখ থাকবে! স্বামীর বদৌলতে সমাজের উচ্চমানের মানুষ বর্গের সাথে তার উঠাবসা। নুশরাতের সই করা হয়ে গেলে মঈনুদ্দিন সাহেব ডিভোর্স পেপারটায় ভালো করে চোখ বুলান। কোথাও কোনো ত্রুটি হোক তার পছন্দ নয় সেটা। তখনই নুশরাত তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠে,
- আমার দেনমোহর এবং এ্যালিমনির টাকাটা কবে পাবো?
- কিসের এ্যালিমনি? ঠিক বুঝলাম না নুশরাত?মঈনুদ্দিন সাহেব ডিভোর্সের পেপার থেকে চোখ তুলে তীক্ষ্ণ কন্ঠে প্রশ্নটি করেন। তিনি ভ্রু যুগল একত্রিত করে চোখজোড়া ছোট করে তীর্যক দৃষ্টিতে নুশরাতকে দেখছেন। তিনি নুশরাতের উত্তরের অপেক্ষা করছেন। নুশরাত ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি একে বললো,
- বাবা, আপনার পক্ষ থেকে এমন কিছু মোটেও আমি কল্পনা করি নি। ব্যাপার না আমি বুঝিয়ে বলছি, দ্যা ডিভোর্স এক্ট ১৮৬৯ অনুযায়ী যেকোনো নারীর এ্যালিমনি পাবার অধিকার রয়েছে।