নুশরাতের বুঝতে বাকি রইলো না কেস কোথায় যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে বিচারক রবিনকে তার পক্ষ রাখতে আদেশ দেন। রবিন একটা ছোট নিঃশ্বাস ছাড়ে তারপর বলে,
- জনাব, এই খুনটি নিতান্ত একটি রোবারি কেস, একজন চোর চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে। নিজেকে বাঁচাতে মালিককে ছুরি মেরেছে।
- অবজেকশন মাই লর্ড, আমার উকিল বন্ধুটি এতোটা নিশ্চিত কিভাবে হচ্ছেন, এটা সামান্য চুরির জন্য খুন!বিপক্ষের উকিল হুংকারের সাথে কথাটা বলে উঠে। রবিন একটু হাসে, তারপর ধীর কন্ঠে বলে,
- কারণ আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমার প্রথম প্রমাণ যে চুরিটি আমার বিপক্ষের উকিল বন্ধু পেস করেছেন সেই ছুরিটি দিয়ে খুন হয় নি। এই ছুরি দিয়ে খুন হওয়া সম্ভব নয় কারণ ছুরিটি নিতান্ত ধারহীন। আমি প্রমাণ করার জন্য আমার মাননীয় আদালতের কাছে অনুমতি চাচ্ছি।
- অনুমতি দেওয়া হলো।বিচারক সাহেব একটু চিন্তা করে কথাটা বললো। রবিন তার এসিসট্যান্ট কে কাঠগড়ায় হাজির হবার আহ্বান জানালো৷ ছুরির ধার পরীক্ষা করার জন্য একটি আপেল কাঁটতে বলা হলো তাকে। কিন্তু সেই আপেলটি কাঁটা তো দূরে থাক একটু আঁচড় ও লাগে নি আপেলের গায়ে। রবিন এর পর বললো,
- স্যার আমার দ্বিতীয় প্রমাণ একজন সাক্ষী। তিনি আর কেউ নন, বরং এই কেসের ইনচার্জ উত্তরা থানার ওসি তৌহিদুর রহমান। আমি তাকে কাঠগড়ায় আনার অনুমতি চাচ্ছি।
- অনুমতি দেওয়া হলো।বিচারকের অনুমতি পেয়ে পেসকার তৌহিদকে কাঠগড়ায় ডাকে। তৌহিদ কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। নুশরাত এই এক সপ্তাহ পর তৌহিদকে দেখছে। চোখের নিয়ে গাঢ় কালি, শ্যামবর্ণ চেহারা আরো কালো লাগছে। চুলগুলো উশকো খুসকো হয়ে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কত নির্ঘুম রাত না জানি তার কেটেছে। তৌহিদকে নুশরাত ছোট বেলা থেকে দেখে আসছে। লোকটাকে তার কাছে অনুভূতিহীন জড় পদার্থের ন্যায় মনে হয়৷ যে বয়সে সাধারণত ছেলে মেয়েরা বাউন্ডেলেগিরি করে সেই বয়সে একটা পরিবারের ভরণপোষণ সামলানো টা কম সাহসের কাজ নয়। হুট করে বাবা মারা যাওয়ায় একটা সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে নেমে আসে। সেই সংসারটাকে আজ অবধি আগলে রেখেছে তৌহিদ৷ তাই তো এতো বয়স হয়ে যাবার পরও বিয়ে নামক অধ্যায়ের সূচনা সে ঘটায় নি তার জীবনে। নুশরাত এক দৃষ্টিতে তৌহিদকে দেখে যাচ্ছে। সে নির্বিকারচিত্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখে ভীতির ছাপ রয়েছে যদিও, কিন্তু নুশরাত তার কারণ ঠাহর করতে পারছে না। ক্ষমতার চাপে বিচারক অবধি বিপক্ষের উকিলের হ্যা তে হ্যা মিলাচ্ছে অথচ তৌহিদ অকপটে রবিনের সাক্ষী হতে রাজী হয়ে গেছে। তার কি চাকরির মায়া নেই! নাকি এটাও মঈনুদ্দিন সাহেবের কোনো ছক! রবিনের আত্নবিশ্বাস অটল, সে বেশ জড়তাবিহীন ভাবেই তৌহিদকে প্রশ্ন করলো,
- তো তৌহিদ সাহেব, আপনি কি আদালতকে জানাবেন একসপ্তাহ আগে আপনি বিল্ডিং এর পরিত্যাক্ত অংশ থেকে কি পেয়েছিলেন?
- জ্বী, অবশ্যই। আমি বৃহস্পতিবার রাতে পুরো বিল্ডিং টা আরো ও একবার বেশ ভালো করে খুঁজি। প্রথম সোফা থেকে যে ছুরিটা পাওয়া গিয়েছিলো তার ধারটা পরীক্ষা আমাদের করা হয় নি। যখন আমরা ছুরির ধার পরীক্ষা করেছিলাম তখন জানতে পারি ছুরিটির ধার কোনো মানুষ খুন করতে যথেষ্ট নয়। তারপর যখন বিল্ডিং টা খোঁজা হয় তখন আমি এই পলিথিনটা পাই। এই পলিথিনে একজোড়া গ্লাভস এবং একটি ধাঁরালো ছুরি পাওয়া যায়। ফোরেন্সিক টেস্টে জানা যায় ছুরিটা দিয়েই মাহির চৌধুরীকে খুন করা হয়েছে। গ্লাভসে যার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে সে একজন চোর যার নাম সাদ্দাম। তার ক্রিমিনাল রেকর্ড ফাইলে রয়েছে। কিন্তু আফসোস আমরা সাদ্দামকে ধরতে পারবো না। কারণ বিগত বৃহস্পতিবার ওভারড্রাগের কারণে তার মৃত্যু হয়। বনানী থানা লাশটি উদ্ধার করে।