বাড়ি ফিরে আদরের পোষ্য ফেয়ারিকে খেতে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করে না তারা কেউই। তীর্ণার তখনো চোখে জল; অরুণেশ থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। রঞ্জাই উঠে কফি করে আনে।
--- মা, ওঠো তো। বাবা, কফিটা নাও। দুনিয়া শেষ হয়ে যায়নি। হ্যাঁ, ক্ষতিপূরণ পাইনি আমরা; কিন্তু আমি মুক্তি তো পেয়েছি! অতো ভাবছ কেন! সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনেক সাধ্যসাধনার পর অরুণেশ বলেন, ওদের কতো টাকা দিতে হবে রে?
রঞ্জা মনে মনে কিছুটা হিসেব করে নিয়ে বলে, সাড়ে তিন-চার লাখের কাছে। আমার আছে দেড় মতো। বাকিটা জোগাড় করছি, তুমি ভেবো না।
তীর্ণা ফুঁপিয়ে ওঠেন। তখন গয়নাগুলো যদি বন্ধক না দিতিস!
রঞ্জা ঝাঁঝিয়ে ওঠে। গোল্ড লোনটা না নিলে বিল দিতাম কী করে সেকন্ড অ্যাঞ্জিওর সময়? আমাদের কাছে কি অতো লিকুইড ক্যাশ ছিল? বরং ভালো হয়েছে, বাঁধা রেখেছিলাম, বিক্রি করিনি। এখন কিনে অতো সোনা ফেরত দিতে হলে আরো বেশি টাকা লাগত।
--- আমার জন্য এতো ঝামেলা হলো। আবার কেঁদে ফেলেন তীর্ণা।
--- আহহ, তিনাই! তুমি একটু কান্নাকাটিটা কম করো তো! বিরক্ত হন অরুণেশ। কাঁহাতক এমন ঘরেবাইরে বর্ষাকাল সহ্য করা যায়!
--- রঞ্জু, তুই ভাবিস না। তোর স্কুলে একবার কথা বলে দেখ তো কিছু অ্যাডভান্স পাওয়া যায় কি না। আমি কাল ব্যাঙ্কে যাচ্ছি। নইলে তোর কাকা-পিসিরাও মরে যায়নি সবাই! তারাও আছে! আমরা ওদের মতো বড়োলোক নই কিন্তু চার লাখ জোগাড় করতে পারব না এমন অবস্থাও এখনো হয়নি।মানবহৃদয় স্বাভাবিকভাবেই দুঃখদুর্দশা থেকে, পরাজয় থেকে, গ্লানি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আনন্দই তার চিরন্তন প্রার্থনার বস্তু। রঞ্জা উঠে পড়ে, বলে, সেদ্ধ ভাত বসিয়ে দিচ্ছি।
রান্নাঘরটা পুরনো কিন্তু গোছানো। রয়েছে ছিমছাম কাউন্টার, পাকাপোক্ত শেল্ফ এবং ক্যাবিনেট। রঞ্জার পছন্দের উজ্জ্বল মাখন-হলুদ রঙ করা, তার ওপর নানারকম ফুল আর কুকুরছানা বিড়ালছানা পাখির ছবি এঁকেছিল রঞ্জা বছর দুই আগে। তবে আলো জ্বালিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতেই প্রথমে ওর যা চোখে পড়ল তা এইসব কোনো সুন্দর জিনিসই নয়।