মাস ছয়েক পরে।
হোম অফিস-কাম-কম্পিউটার রুম থেকে দৌড়ে রান্নাঘরে যায় রুদ্র। সেখানে তখন মৈত্রেয় চিৎকার করে লাফাচ্ছে। সঙ্গে ঝড়ের বেগে আমেরিকান খিস্তি। কফিমেকার থেকে সদ্য বার করা কফি মাগ মেঝেয় পড়ে টুকরো, সারা মেঝেয় কাচ। তার ওপর ফুটন্ত গরম জল পড়েছে ওর খালি পায়ের পাতায়, নীচে। লাল লাল ফোসকা তৈরি হয়েছে তিন চারটে।
--- ওয়াট হ্যাপেনড!
--- গড ড্যাম ইট, রুডি! দ্য ফাক, ম্যান! কফির মধ্যে আরশোলা পড়ে সেদ্ধ হয়েছিল! বার করে রাখতে গেলাম, হ্যান্ডলে আরশোলা! ইট ফাকিং ক্লাইমড আপ মাই আর্ম!
--- তুই সরে আয়, কাচ পড়ে আছে। কোনোওমতে হাসি চেপে বলে রুদ্র। মৈত্রেয় আরশোলায় ভয় পায়৷ খুব কিউট, কিন্তু বললেই রেগে কাঁই হয়ে যাবে।
--- তুই হাসছিস! তুই হাসছিস! ইউ ডেয়ার লাফ!
--- না না, হাসছি না। চলে আয়। পায়ে ঠাণ্ডা জল দে। আই'ল ক্লিন আপ দিস মেস।--- এটা কী করে সম্ভব? অ্যাঁ? তুই জানিস আমার মাইসোফোবিয়া আছে! আমি এতোটুকু নোংরা টলারেট করতে পারি না! তুইও যে খুব স্লভেনলি তা নয়! আমাদের বাড়িটা নরমাল ব্যাচেলরদের বাড়ির মতো নোংরা নয়, পিরিয়ড! তাহলে এতো আরশোলা আসছে কী করে? কোথা থেকে আসছে! পায়ে কুলিং প্যাড রেখে বরফ বোলাতে বোলাতে চেঁচায় মৈত্রেয়।
হতাশভাবে মাথা নাড়ে রুদ্র। সেও জানে না। কোলকাতা থেকে ফেরার কিছুদিন পরেই এই আরশোলার উপদ্রব আরম্ভ হয়। হঠাৎ, কথা নেই বার্তা নেই, বেবি বুমের মতো ককরোচ বুম। আর সেসব কী আরশোলা রে ভাই! নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ অবস্থা। এর মধ্যে ওরা দু'বার আরবানপ্রোর লোকজনকে ডেকে পেস্ট কন্ট্রোল করিয়েছে। কোনো লাভ হয়নি। মাঝখান থেকে ইদানীং মৈত্রেয়র ফ্ল্যাটেও দেখা যাচ্ছে তাদের। জামাকাপড়, ব্যাগট্যাগে করে পৌঁছে গেছে হয়তো! রান্নাঘরের সর্বত্র তো বটেই, সোফার খাঁজে, জামাকাপড়ের কাবার্ডে, জুতোর ক্যাবিনেটে, এমনকী প্রাণের চেয়ে প্রিয় এলিয়েনওয়্যার ল্যাপটপের ভিতর থেকেও উঁকি দিচ্ছে খুদে খুদে মিনিয়েচার আরশোলা। যতো মারো, যতোই স্প্রে করো, লেমন গ্রাস এসেন্স ছড়াও সর্বত্র, তারা নাছোড়!