--- সমিরকাকু, একটু জেনে নিও তো জিনিসপত্রগুলো কোথায় পাঠাবো। আর গয়না লিস্ট মিলিয়ে ফেরত নিতে কে আসবে।
--- ওরা তো জিনিসপত্র ফিরিয়ে নিতে চাইছে না রে মনা! তুই জিদ করছিস কেন! খামোখা এক্সট্রা হাজার দশ-পনেরো টাকা খরচা হবে পাঠাতে।
--- হোকগে। আমি পাঠাবো, ব্যাস। শুধু কোথায় পাঠাবো এইটুকু জেনে বলে দিও। কাউকে তো রিসিভ করতে হবে জিনিসগুলো! ওরা কোথায় থাকে আমি জানি না।দিন সাতেক পরে হক-সাহেবের অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোন করেন।
--- দিদিভাই, স্যার বলছিলেন ওই পার্টি বলেছে ছবিটবি থাকলে কোর্টেই দিয়ে দিতে। আর বাকি জিনিস ওদের চেতলার বাড়িতে দিলেও চলবে, চেন্নাই পাঠানোর দরকার নেই।ফোন রেখে মুচকি হাসে রঞ্জা। আচ্ছা।
বারো তারিখ আসে যেভাবে আসে নয় দশ বা এগারো। কোর্ট চত্বরে, শ'য়ে-শ'য়ে পেঙ্গুইনের ভিড়ের মধ্যে সামনাসামনি হয় ওরা তিনজন। গয়নার প্যাকেট মিলিয়ে নেন দু'পক্ষের উকিল। কাগজপত্রে সই হবার আগে মৈত্রেয় বলে, তুমি কিন্তু আরেকটু ভেবে দেখতে পারতে রঞ্জা। আই কোয়াইট লাইক ইউ।
রঞ্জা হাসে। আই লাইক ইউ টুউ। বাট হি ইজ ইন বিটুইন।
ওরা তিনজনেই হেসে ফেলে। দু'পাশের দুই উকিল সন্ত্রস্ত চোখে তাকান। সইটই হয়ে যাবার পর রুদ্র বলে, তুমি গাড়ি আনোনি? আমাদের বাড়িতে তোমার বাড়ি থেকে দেওয়া কিছু জিনিস ছিল, সেগুলো নিয়ে এসেছি আমরা। বাসে করে তো নিয়ে যেতে পারবে না।
রঞ্জা হাসিমুখেই বলে, আমাদের গাড়ি নেই। আমি ট্যাক্সি ডেকে নিচ্ছি।
ওরা টুকটাক কথা বলতে বলতে রঞ্জার ট্যাক্সি এসে যায়। এসইউভির ট্রাংক খুলে সেখান থেকে জিনিস নামায় রুদ্র। মৈত্রেয় সেগুলো সাবধানে গুছিয়ে তুলে দেয় রঞ্জার ট্যাক্সিতে। বিনিময়ে হক-সাহেবের অ্যাসিস্ট্যান্ট বার করে আনেন দু'টো ভারী ব্যাগ। রঞ্জা সেগুলো দেয় রুদ্রকে।
--- হিয়ার, রুডি৷ কিছু অ্যালবাম আছে। ফিল্মগুলো নেই অবশ্য। কিছু পেপারস আছে। কিছু সেমি-প্রেশাস জুয়েলরি আছে যা তুমি আমার জন্য কিনেছিলে। কিছু মেমেন্টো এটসেটরা আছে।
--- এসব নিয়ে আমি কী করব!
--- জাস্ট দিয়ে দিও কাউকে। আমিই বা কী করব। আই ডোন্ট ওয়ান্ট দেম এনি মোর।
মৈত্রেয় ওর হাত থেকে নিয়ে নেয় ভারী ব্যাগগুলো। ইটস অলরাইট।
--- তোমাদের বাকি জিনিস আজকেই পৌঁছে যাবে। শাড়িটাড়ি মেয়েদের জিনিসপত্র যা ছিল সব চেতলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। অ্যাপ্লায়েন্স, ব্রিক-ব্রাক সব চেন্নাই গেছে, পাঁচদিন পরে পৌঁছবে।
--- দ্যাটস ভেরি কনসিডারেট অফ ইউ, রঞ্জা।
--- ওয়েল, তোমরা ভালো থেকো? চলি তাহলে? বেস্ট অফ লাক! ট্যাক্সির দরজা খুলতে খুলতে বলে রঞ্জা।
রুদ্র চুপ করে থাকে। মৈত্রেয় বলে, ওক্কে রঞ্জাই। তুমিও ভালো থেকো৷ বেস্ট অফ লাক টু ইউ টুউ।রঞ্জার গাড়িটা বেরিয়ে যাবার পর মৈত্রেয় বলে, শি ইজ কোয়াইট সামথিং অ্যাজ এভার। ভাঙবে তবু মচকাবে না।
রুদ্র ঠোঁট মোচড়ায়। ওরা এখন একসঙ্গেই থাকে। প্রথাগত বিয়ে করে সামাজিক ধোঁকার টাটি বজায় রাখার প্রয়োজন নেই কোনো৷ রঞ্জার জন্য অপরাধবোধও সেরকম নেই। রঞ্জাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছিল অ্যাডজাস্ট করার জন্য। ও রিজিড না হলে এতো ঝামেলাই হতো না। মেনাজ-আ-ত্রোয়া বহু পুরনো কনসেপ্ট।
--- তুই ছাড় তো। আই'ল নেভার ফরগেট দ্যাট স্টান্ট শি পুলড অন আস! বাড়ি ঢুকে দেখছি কিচ্ছু নেই! একটা টুল অবধি নেই। সাচ আ বিচ!
--- হুঁ। ভেঞ্জফুল ক্রিচার! হা হা করে হাসে মৈত্রেয়। স্টিল, তুই খুব খারাপ করে হ্যান্ডল করেছিলি। আচ্ছা, তোর একটুও অবাক লাগছে না?
--- কী নিয়ে?
--- এই যে, কোনো মেলোড্রামা ছাড়াই সই করে দিল, সব ফেরত দিয়ে দিল। ভালো করে কনটেস্টই করল না। আমার খুব ফিশি লাগছে কিন্তু। এতো ভিন্ডিক্টিভ একটা মেয়ে হঠাৎ পুরো ভোল পালটে দেবী মাতা হয়ে গেল, অসম্ভব।
--- তুই ওকে নিয়ে অবসেসড। বাদ দে না। মিটে গেছে তো। গেম ওভার।
--- ডার্লিং, তুমি যা যা ছুঁয়েছ আমি তার সবটুকু নিয়েই অবসেসড। মুহূর্তে বিদ্যুৎ বয়ে যায় মৈত্রেয়র চোখে, ঠোঁটে, আলগা হাসিতে। রুদ্র তাকিয়ে দেখেই আবার স্টীয়ারিং-এ মন দেয়।
--- কোলকাতার রাস্তায় এরকম করিস না, প্লিজ। অ্যাক্সিডেন্ট করে ফেলব।
হা হা করে হাসে মৈত্রেয়। ও রঞ্জাকে নিয়ে অবসেসড নয়। ও শুধু রুদ্রকে পাগল করে দেবার নিজের যে ক্ষমতা, তাই নিয়ে অবসেসড।