সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মনীষা অরুণের ঘরে গেলো ওর সাথে শেষবারের মতো বোঝাপড়া করতে। অরুণকে অন্তিম বারের মতো বোঝাতে ও জিজ্ঞেস করতে যে অরুণ ওকে যা করার আদেশ দিয়েছে , সেটা ভেবেচিন্তে বলেছে তো ? এরপর কিন্তু আর ফেরার কোনো রাস্তা থাকবে না !
- "অরুণ , তুমি দুপুরে যে শর্তটা আমায় দিয়েছো , সেটা নিয়ে একবারও ভেবে দেখেছো যে এর পরিণাম কতোটা মারাত্মক হতে পারে ! তুমি সহ্য করতে পারবে সেটা ? দুপুরে তুমি প্রথমে আমাকে নিজের কাছে ফেরাতে চাইলে। আমি কেন ফিরতে পারবো না সেটা সম্পূর্ণভাবে তোমাকে বুঝিয়ে বললাম। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে আমি রবির হয়ে যাবো ? তাও আবার তুমি জীবিত থাকতে ! সেটা কখনো সম্ভব ?? আমি তোমাকে ভালোবাসি অরুণ , আর আমি সবসময়ে তোমারই থাকবো। কিন্তু এখনকার এই পিকিউলিয়ার পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে আগের মতো করে তোমার কাছে পূর্ণরূপে ফিরে আসা সম্ভব নয় , সেটা তুমি জানো। তাও তুমি আমাকে ভুল বুঝে এরকম অভিমান করে আমাকে এই অদ্ভুত শর্ত দিয়ে বসলে , কেন ??"
- "আমি তোমার উপর কোনো অভিমান করিনি মনীষা। আমি যা বলেছি খুব ভেবে চিন্তেই বলেছি। তুমি যদি আমার না হতে পারো , তাহলে রবির হয়ে যাও। এভাবে দোটানার মধ্যে নিজেকে রেখো না আর। পূর্ণভাবে আমার কাছে ফিরে আসতে পারবে না, তাহলে পূর্ণভাবে রবির কাছে তো চলে যেতেই পারো। এভাবে পেন্ডুলামের মতো ঝুলে থেকো না আমাদের দুজনের মধ্যে , তাতে তোমারই মানসিক অশান্তি বাড়বে বৈ কমবে না। "
পরী তখনও ঘুমোইনি। সরল মনে সে হঠাৎ তার মা কে জিজ্ঞেস করে বসলো , "মা , আজকে কি তুমি আমাদের সাথে শোবে ?"
মনীষা তখন করুণ ভাবে জবাব দিলো , "নাহঃ , সোনা , আজ আর তা হওয়ার নয়। হয়তো আর কোনোদিনই তা হবে না। তোমার বাবা-ই ফেরার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।"
- "কোথায় বন্ধ করেছে ? তুমি কি stupid , ওই তো ঘরের দরজা খোলাই রয়েছে , সেখান দিয়েই তো তুমি ঘরের মধ্যে ঢুকে এলে। "
মনীষা গলা চাপা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল। সে তার মেয়ের এই সরল কথা গুলোর কি জবাব দেবে তা বুঝেই পাচ্ছিলো না। সে পরীর কাছে এসে পরীকে আদর করে বললো , "হ্যাঁ সোনা , তুমি ঠিকই বলেছো। তোমার মা খুব stupid একটা মেয়ে। নাহলে তোমার মা এরকম সিচুয়েশনে কখনো পড়ে নাকি। আসলে তোমার মা তো সবসময়ে অন্যের ইচ্ছেটা কেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে এসেছে , গুড গার্ল হয়ে সব কথা মেনে নিয়েছে , তাই তোমার মা এতো কষ্ট পাচ্ছে। "
এই বলে মনীষা কেঁদে ফেললো। ছোট্ট পরী নিজের মায়ের চোখের জল মুছতে মুছতে বললো , "মা , তুমি তো বলেছো সবসময়ে গুড গার্ল হয়ে থাকতে , সবার কথা মেনে চলতে , তাহলে তুমি গুড গার্ল হয়েও এতো কাঁদছো কেন ? গুড গার্ল হওয়াটা কি খারাপ ?"
মনীষা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , "নাহঃ সোনা , গুড গার্ল হওয়াটা একদমই খারাপ নয়। আসলে তোমার মায়ের সমস্যাটা অন্য জায়গায় ,
তুমি তো এখন খুব ছোট তাই এসব তুমি বুঝবে না। কে জানে পরবর্তীতে হয়তো আমার এসব বাধ্য হয়ে করা অনৈতিক কাজ গুলোর জন্য তুমি আমাকে দোষারোপ করবে , ঘৃণা করবে নিজের মা কে , কিন্তু একদিন ঠিক আসবে যেদিন তুমি সব বুঝতে পারবে। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবো , তোমার জীবনটা যেন আমার মতো চক্রব্যূহে ঘেরা না হয়।"
কথাগুলো সে পরীকে বলছিলো ঠিকই, কিন্তু শোনাচ্ছিলো অরুণকে। অরুণ মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। বেচারী শিশুটি বুঝলোই না ওর মা ঠিক কি বলতে চাইলো ওকে। শুধু এইটুকু বুঝলো যে আজকেও তার মা রবি আংকেলের সাথে থাকবে , রবি আংকেল কে "ঘুম পাড়ানোর জন্য "। কারণ তার মা তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে তার ঘরের ও মনের দরজা তার মায়ের জন্য খোলা থাকলেও তার "Stupid মা" আজকে তার সাথে ঘুমোতে পারবে না। কারণ তার বাবা এক অদৃশ্য "নো এন্ট্রি" বোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে তার মায়ের সামনে।
বেশ কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত নিঃস্তব্ধতা ছেয়ে রইলো। মনীষা আশা করছিলো অন্তত একবার অরুণ তাকে আটকানোর চেষ্টা করবে। নিজের ভুলটা বুঝে নিয়ে মনীষাকে এই পাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখবে। তাই মনীষা চাতক পাখির মতো অরুণের দিকে চেয়ে রইলো , একটা শেষ আশা নিয়ে।
মনীষা তখন বারংবার অরুণকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে সে কি সত্যি চায় তার মনীষা অন্য এক পুরুষের সাথে স্ত্রী-সুলভ আচরণ করুক ?? কিন্তু অরুণের কাছ থেকে আর কোনো মৌখিক প্রতিক্রিয়া না পেয়ে মনীষা ধরে নিতে বাধ্য হলো যে , "মৌনম সম্মতি লক্ষণম"। অরুণ চায় মনীষা রবির হয়ে যাক , সারাজীবনের মতো।
সে খুব ক্ষুব্ধ হলো অরুণের প্রতি। যাকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো সেই অরুণ আজ মৌনভাবে মেনে নিচ্ছিলো তার অন্য কারোর হয়ে যাওয়াটা কে। তাই সে রাগের মাথায় তক্ষুনি অরুণের সামনে রবিকে ডাকলো। মনীষার ডাক শুনে রবি তৎক্ষণাৎ হাজির। মনীষা তখন ইচ্ছে করে অরুণের সামনে রবিকে বললো , "রবি, চলো। আজকের রাতটা তোমার জীবনের সেরা রাত হতে চলেছে। কথা দিচ্ছি , তোমাকে আমি আজ ঘুমোতে দেবো না। "
দাঁতে দাঁত চেপে এই কথা গুলো সে বললো রবিকে। রাগে তার বুদ্ধি লোপ পেয়েছিলো। তার তখন খেয়াল ছিলোনা যে তার ছোট্ট মেয়েও সেখানে উপস্থিত রয়েছে। পরীর সামনেই পরীর মা রবি আংকেল এর হাত শক্ত করে চেপে ধরে ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো। পেছন থেকে পরী ডাকলো , "মা। ...., তুমি যাচ্ছো?? "
মেয়ের আওয়াজ শুনে একবারের জন্য মনীষার পা থমকে গেলো। সে একবার পেছন ফিরে নিজের মেয়ের দিকে চেয়ে তাকালো , আর বললো , "হ্যাঁ সোনা , রবি আংকেল এর সাথে আজ আমার কিছু জরুরী কাজ রয়েছে। সেই কাজটা তোমার বাবা-ই আমাকে দিয়েছে। তাই আজকে সারারাত রবি আংকেল এর সাথে একটা জরুরী কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকবো। তুমি লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পড়ো , কেমন। কাল সকালে আবার দেখা হবে। আমি আসি....। "
এই বলে মনীষা আর পেছন ফিরে তাকালো না। তার চোখ দিয়ে দু'ফোটা জল বেড়িয়ে এলো তবুও সে নিজের পা কে থামালো না। রবিকে নিয়ে সটান ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। একবারের জন্যও আর অরুণের দিকে তাকিয়ে নিজেকে দূর্বল করলো না সে। মনীষা এভাবেই অরুণের ঘর তথা জীবন ছেড়ে রবির সাথে নতুন ঘর ও জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলো , তাই আর পেছন ফিরে তাকিয়ে মায়া বাড়িয়ে কোনো লাভ ছিলো না।
রবিকে নিয়ে সে নিজের ঘরে পৌঁছে সঙ্গে সঙ্গে দরজা ভেতর দিয়ে বন্ধ করে দিলো। রবি তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছিলো। হয়তো সে মনীষাকে বোঝাতে চাইছিলো যে মনীষা যেন কোনোরকমের হটকারী সিদ্ধান্ত না নেয়, যার জন্য তাকে পরের দিন সকালে পছতাতে হয় , অনুশোচনায় মরে যেতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু মনীষা এখন আর কোনো কথা বলা বা শোনার মতো অবস্থায় ছিলো না। অনেক বলেছে , অনেক সবাইকে বুঝিয়েছে সে, নিজের মনের অবস্থার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় , কেউ বোঝেনি তাকে। সবাই শুধু নিজের পয়েন্ট অফ ভিউটাই সামনে রেখে এগিয়েছে। তাই আজকে আর সে কারোর কোনো কথার কোনো কৈফিয়ত দেবে না। এখন শুধু সে যা ইচ্ছে তাই করবে , কারোর কথা না শুনে , বেপরোয়া হয়ে। মনীষা এখন না কারোর স্ত্রী , না কারোর মা। সে এখন দায়মুক্ত , নিজেই নিজের মর্জির মালিক। তাই এখন শুধু হবে অ্যাকশন , ধুন্ধুমার অ্যাকশন।
তৈরি থাকুন। ...........
YOU ARE READING
ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর স্ত্রীয়ের পরকীয়া - Manali Basu
Romanceগল্পটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক দের জন্য গল্পটির লেখক - মানালী বসু একজন মৃত্যু পথযাত্রী স্বামী(অরুন) নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ তার স্ত্রী (মনীষা) ও সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য,,,, নিজের প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে তার বন্ধুর (রবি) হাতে শারীর...