তারাপুর থেকে বাণগাওঁ হয়ে দহাণু যাবার রাস্তায় আধঘণ্টা মতো পরে যে ইন্ডিয়ান অয়েলের পেট্রোল পাম্পটা, তার পাশেই একটা গাড়ি ধোয়ানোর ঠেক খুলেছে নতুন। পানমশলা বিড়ি-সিগেরেটের দোকান, কাটা তেল অবশ্যই রাখে; রাখে দিশিও। মালিক গায়েব, বছর চোদ্দ-পনেরোর একটা ছেলে ঘাড় গুঁজে মোবাইল দেখছিল। তার প্রাণের দোস্তকে ভালো করে চান করিয়ে দিতে বলে একটা সিগেরেট ধরালো দিলখুশ। বিরারের পরেই ৪৮ নম্বর থেকে নেমে যাবার হুকুম ছিল। এক্সপ্রেস হাইওয়েতে প্রচুর ক্যামেরা। চিঞ্চানি কোস্টাল হাইওয়েটাও ছেড়ে দিল দিলখুশ, পাবলিক যতোটা এড়ানো যায়। একটু ঘুরপথ হলো বটে।
ছেলেটা অনিচ্ছুক। আড়মোড়া ভেঙে উঠল যেন ওই একটা খেলনা শিম্পাঞ্জি, হাতপায়ে জোর নেই। জল চালু করা থেকে সাবানের ফেনা স্প্রে করা — সবকিছুতেই তার ঢিমেতাল।
মরুকগে। এখনও অনেক সময় আছে। জিওর পুরোনো মোবাইলটা বার করে আরেকবার চেক করে নিল। সাড়ে চারটেয় পৌঁছতে হবে কোস্ট রোডের ওপর সীগাল রিসর্টে। এখনও আড়াই ঘণ্টা আছে হাতে। রোড ব্লক না থাকলে অনায়াসে পৌঁছে যাবে তার দোস্ত।
ওর বৌ সারিকা বলে যে ছেলে-বৌয়ের চেয়েও দোস্তকে বেশি ভালবাসে দিলখুশ। সেই তেরো সালে ঘরে আনার পর থেকে ওই টুকটুকে লাল মিনি ট্রাকের গায়ে একটা আঁচড় অবধি লাগতে দেয়নি সে। খুব বেশি ভারী জিনিস তোলে না, লোহা-লক্কড় তো একেবারেই না। একবার এক আইটি দিদিমণি মুম্বাই থেকে পুণে অবধি তার টবের গাছপালা নিয়ে যেতে বলেছিল। টাকা ভালোই পেত তবু যায়নি সে। দোস্তের গায়ে যে অতো কাদামাটি লাগবে, সেসব ও প্রাণে ধরে দেখতে পারবে না। হালকা-পলকা কাজ করেই যথেষ্ট রোজগার হয়। তার ওপর আছে এই সাইড বিজনেস।
সিগেরেটটা আধখানা খেয়ে নিভিয়ে পকেটে রাখে দিলখুশ। আজকাল নেশার জিনিস কমই খায়, সে মদই বলো আর বিড়ি-সিগেরেটই বলো। একটা মেয়ের খুব শখ তার। ছোট বোনটা সাত বছর বয়েসে মরে গিয়েছিল বলেই কি না কে জানে, তবে প্রথম সন্তান ছেলে হওয়ায় সকলে খুব খুশি হলেও দিলখুশ নিজে ছিল নিম-খুশি। মেয়ের বাপের মতো আহ্লাদ কার! দোস্তকে তার নিজের মেয়ের মতো লাগে, লোকে বললে ভাববে পাগল। কিন্তু টুকটুকে লাল জামা পরা ফুটফুটে একটা মেয়েই যেন। দু' পাশের রিয়ার ভিউ মিররে তাই লাল রিবন আর প্লাস্টিকের গোলাপ ফুল বেঁধে দিয়েছে দিলখুশ। একটা মেয়ে চাই তার। সারিকার মতো ফর্সা হলে তো আর কথাই নেই।