দিলখুশ ফিরে যায় দোস্তের কাছে। জামা পাল্টায়, জ্যাকেট পরে। মাথায় ক্যাপ পরে। চামড়ার মোকাসিন খুলে রেখে একজোড়া কালো স্নিকার্স পরে নেয়। গ্লাভস পরে হাতে। জ্যাকেটের পকেটে রাখে নতুন পাওয়া ছোট্ট দূরবীন, নাইটভিশন-ওয়ালা। হাতে একটা খেঁটে গামছা, জলের বোতল আর মশার লোশন নিয়ে চলে যায় ট্রাকটার কাছে। অনেকটা সময় কেটে গেছে। টুকটুক করে বেরোলেই হয়। ওই বিশাল গাড়ি, ধীরেসুস্থে চালাতে হবে। জায়গাটা ভালো করে দেখে নিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দেয় সে, ট্রাক ঘুরিয়ে গেট দিয়ে বেরোয়। রিসর্টের পিছনের রাস্তাটা সরু আর কাঁচা, তায় প্রচুর বালি। দোস্তকে নিয়ে আসতে কোনো অসুবিধে হয় নি, কিন্তু সিগনার আলাদাই গল্প। খুব ধীরে ধীরে ট্রাকটাকে বার করে হাইওয়েতে তোলে দিলখুশ। তারপর রওনা দেয় নারগোল ব্রিজের দিকে।
পশ্চিম পারে সূর্য সহজে বিদায় নিতে চায় না। এখন ব্রিজে উঠতে উঠতে তার ডানদিকে সমুদ্রের বুকে অনিচ্ছুক বিদায়ের রক্তাক্ত চোখ। জলে রক্তের ঢেউ। বাতাসে নোনা-আঁশলা ঘ্রাণ।
ব্রিজ পেরিয়ে একটু পরেই বাঁদিকে যে রাস্তাটা, সেটা চলবে না। অনেকটা খাড়াই, আর গাছপালা কম। এখানটায় শুধু পতিত জমি আর নয়ানজুলি, চাষবাস নেই। জমির ধারে-ধারে নুন ফুটে আছে, বের বাবুল মিসোয়াকের ঝাড়। তার এক কিলোমিটার পরে আর একটা কাঁচা রাস্তা বাঁদিক থেকে এসে জুটেছে। এইখানেই থাকতে হবে তাকে। সিগনা নিয়ে নেমে পড়ে সে হাইওয়ে থেকে। একটু ভিতরে খানিকটা চওড়া জায়গা। ট্রাকের মুখ ঘুরিয়ে নেয় রাস্তার দিকে। এখানে খাড়াই কম, আর রাস্তার মুখটাও কিছুটা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে একটা ঝুপসি নিম গাছ।
সবে সাতটা দশ। মশার লোশন বার করে গ্লাভস খুলে মুখে হাতে পায়ে ভালো করে মেখে নেয় সে। টিউবটা রেখে দেয় পকেটে। গ্লাভস পরে নেয় আবার। আলগোছে জল খায় একটু। ইয়ারফোন লাগিয়ে কিশোরকুমার শোনে।
সাড়ে সাতটায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। ব্রিজের আলো বহু দূর। হাইওয়ে থেকে চলন্ত গাড়ির হেডলাইট আসছে কেবল মাঝেমাঝে। এ রাস্তায় রাতে গাড়ি অনেক কম। মুম্বাই থেকে যারা দমন-দিউ যায় তারা দিনের বেলাতেই ভিড় করে বেশি, সমুদ্র দেখার জন্য। রাতে চালানোর জন্য আটচল্লিশ নম্বর জাতীয় সড়ক রয়েছে।