দ্বিতীয় পর্ব

15 1 0
                                    

কথাটার অবশ্যই কোনো উত্তর দেয় না দিলখুশ। বলে, শোনো, চিন্তা কোরো না। আঈএর কাছে টাকাপয়সা দিয়ে এসেছি। তেমন-তেমন বোধ হলে সোজা নার্সিং হোমে ভর্তি হয়ে যেও। একদম দেরি করবে না।

সারিকা আরো খানিক ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, ছেলের নামে অভাব-অভিযোগের বিল কাটতেও ছাড়ে না। ওকে বোঝাবার চেষ্টা করে লাভ নেই। বেশি কিছু বললেই বলবে, সাইডের কাজকর্ম ছেড়ে দাও। আরে, ছেড়ে দেবো বললেই দিতে দিচ্ছে কে? যতোদিন ওদের হাতে আছি, গাড়ি নিয়ে দিল্লি থেকে ত্রিবান্দ্রম ঘুরতে পারছি। আর কাজ করব না বললে কখন কোথায় কোন্ বালি-বোঝাই লরি এসে পিষে দিয়ে যাবে, কেউ তার একটা গোঁফের টুকরোও দেখতে পাবে না আর। এ কথা তার চেয়ে ভালো করে আর কে জানে? দিলখুশ ভাবে, একটা মেয়ে হলে সে ভোরাজিকে বলবে, স্যার, ঘরে ছোট মেয়ে আছে, আর এসব পোষায় না। মাঝেমাঝে ডাকবেন করে দেবো, কিন্তু এবার একটু ছাড়ান দিন না।

হাতে এখনও অনেকটা সময়। জায়গাটা বুঝে গেছে দিলখুশ। একটু আগে ওখান দিয়েই তো এলো। দুটো ব্রিজের মাঝে এক-দেড় কিলোমিটারের দূরত্ব হবে। জনবসতি শূন্য। দুটো রাস্তা দেখেছিল মনে হচ্ছে। আগে থেকে গিয়ে আবার দেখে নিতে হবে। চা শেষ হয়ে গেছে, কাপটা ছুঁড়ে ফেলে বাউন্ডারি ওয়ালের গায়ে। তারপর সিগনাটার দিকে এগোয়।

বিশালাকৃতি ট্রাক এইটা। গাঢ় নীল রঙের ওপর ধুলোর আস্তরণ। বিপুলকায় একটা বুনো হাতি যেন, হাঁটু ভেঙে বসে জিরিয়ে নিচ্ছে, এখুনি গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়বে। সুরতের নাম্বার প্লেট। কাকে ফাঁসাচ্ছে কে জানে! এই ধরনের যন্ত্রদানবের প্রতি তার কোনো প্রেম আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি কিছু নেই। ভয় আছে বরং। বিএমডাব্লিউটার কী দশা হতে চলেছে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। আহা রে, কোন্ ভিআইপির গাড়ি, কখনো হয়তো চোট খায়নি। ইশ। যাকগে, যা করেন ঝুলেলাল, সে তো নিমিত্ত মাত্র।

সিগনার ড্রাইভার কেবিনের দরজা খোলা আছে।  সীটের ওপর চাবি রাখা। প্রশস্ত জায়গা, একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যেত কিন্তু সেটা করা চলবে না। এখন বাজে প্রায় পাঁচটা। সাড়ে সাতটার আগে তাকে পৌঁছে যেতে হবে। যেতে বড়জোর কুড়ি তিরিশ মিনিট। তাহলেও হাতে দেড় ঘণ্টার ওপর সময় উদ্‌বৃত্ত।

পুত্র্যার্থেWhere stories live. Discover now