দোস্তের কাছে গিয়ে ওর দরজায় কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছিল দিলখুশ কিছুক্ষণ। এরকম অঘটন তার ষোলো বছরের অভিজ্ঞতায় ঘটেনি বললেই চলে। হ্যাঁ, ভুল হয়েছে কদাচিৎ, ভুল মানুষ মরেছে, আহত হয়েছে। কিন্তু বাচ্ছা আর মহিলাদের জ্ঞানত কখনও কিছু করেনি সে।
যাই হোক, এখন আগে নিখোঁজ হয়ে যেতে হবে কয়েকদিন। দ্রুত জামাকাপড় পাল্টে ফেলে, টুপি জুতো গামছা সব ভরে ফেলে একটা ব্যাগে। জিওর ফোনটার সিম কার্ড খুলে নেয়, সাবধানে কুচি কুচি করে কেটে একটা সিগারেটের প্যাকেটে রাখে টুকরোগুলো। অন্য ফোনটা সুইচ অফ করে দেয়। এখনই বেরিয়ে যেতে হবে এখান থেকে।
দোস্তকে নিয়ে রিসর্টের গেট দিয়ে বেরোচ্ছিল, রাস্তা থেকে হঠাৎ বাঁক নিয়ে প্রচণ্ড স্পীডে ওর ঘাড়ে এসে পড়ল একটা উইঙ্গার। প্যাসেঞ্জার নেই, ড্রাইভার শেষ মুহূর্তে স্টিয়ারিং ঘোরাবার চেষ্টা করার পরেও বিকট শব্দে ধাক্কা লাগল বাঁদিকের দরজায়। সে ধাক্কায় রিয়ার ভিউ মিররটা বেঁকে চেপ্টে গেল দরজার সঙ্গে, খ্যাঁস করে দীর্ঘায়িত শব্দ হলো ঘষা লাগার।
হে ঝুলেলাল, তার দোস্তের যেন কিছু না হয়! ভাগ্যিস সে স্পিড নেয়নি! ইঞ্জিন বন্ধ করে লাফিয়ে নেমে দেখতে গেল দিলখুশ। উইঙ্গারের ড্রাইভারও নেমে এসেছে। মদে চুর, কিন্তু ভালোমানুষ ধরনের। টলতে টলতে দু' হাত তুলে বলল, সরি ভাউ, মাফ করা, ভাউ।
অন্যসময় হলে দিত দু'ঘা, কিন্তু এখন ঝামেলা পাকালে চলবে না। আয়নাটা এমনিতে ভাঙেনি, শুধু দুমড়ে ঢুকে এসেছে ভিতরের দিকে। প্যাসেঞ্জার সাইডের বডিতে লম্বা স্ক্র্যাচ পড়েছে, বেশ গভীর আঁচড়। কিন্তু তুবড়ে-টুবড়ে যায় নি তো! বেশ অবাক হলো দিলখুশ। যতো জোরে আওয়াজ হয়েছিল, ততো কিছুও ক্ষতি হয়নি। মামুলি পেইন্ট জব। এ কীরকম হলো? জয় ঝুলেলাল! তার দোস্তকে রক্ষা করেছ দেবতা, তার অপরাধের শাস্তি তার দোস্তকে পেতে হয়নি, তভান জো আভার! লাখ কুর্ব! তভান জি মেহরবানি!
গাড়িতে উঠতে উঠতে দেখে উইঙ্গারের ড্রাইভারটা উপুড় হয়ে বমি করছে। তাকে জলদি জলদি উদেরোলালের কাছে ঘর-ওয়াপসি হবার পরামর্শ দিয়ে হাইওয়েতে উঠল দিলখুশ। কোস্টাল হাইওয়ে ফাঁকা, পড়েই যথাসম্ভব স্পিড তুলল। খিদেতেষ্টা কিছুই আর মাথায় নেই, সোজা দমন ঢুকতে হবে আগে। দমনের পথে চল্লিশ কিলোমিটার নিমেষে ফুরিয়ে গেল যেন। রাজীব সেতু পার হয়ে এয়ারপোর্ট রোড ধরল সে। এয়ারপোর্টের পিছন দিকে কোস্টগার্ড এলাকা পেরিয়ে কুন্ড ফালিয়ার কাছে ওদের রোজের ঠেক। বহু পুরোনো ধাবা আছে প্যাটেলদের। সোজা ওইখানে গিয়ে উঠল।