সাইকোপ্যাথ

699 43 27
                                    


পার্থ বাবুর অচৈতন্যতা ভাঙল। তিনি আসলে স্বপ্ন দেখছিলেন; নিজের স্বপ্ন। কিছুক্ষণ আগে যা তিনি মহিলাটির সাথে করেছিলেন। হ্যাঁ! তিনি নিজেই খুনটি করেছিলেন।মুহূর্তের মধ্যেই পার্থ বাবুর সব ঘটনা মনে পরে গেলো । এটা তার বারো নম্বর খুন। খুন করতে তার ভালই লাগে। হুম;তাই তিনি এতদিন যতগুলো খুন করেছেন সব গুলোই কোনও মটিভ ছারাই। তিনি হলেন একজন প্রকৃত সাইকপ্যাথ। খুন করে মজা পান বলে খুন করেন; আর কিছুনা। পার্থ বাবুর মনে পরে গেল তার ছোট বেলার কথা যখন তিনি মায়ের হাত ধরে ডাক্তার এর কাছে কাউন্সিলিং এ যেতেন।
তিনি যখন সুস্থ হওার পথে তখন তার মা মারা যান।বাবা অবশ্য আগেই মারা গিয়েছিলেন তাই মা মারা যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে তার ভাই এর সমস্থ দায়িত্ত তার কাঁধের ওপর এসে পরে। ব্যাস্ততা আর কাজের চাপ এই দুটোর ফলে তার আর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি।কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার মানসিক ব্যাধি বারতেই থাকে। আর শেষ পর্যন্ত তিনি আজ এই অবস্থায়। সব কিছু ঠিক ঠাকই চলছিলো এতদিন কিন্তু শেষ অভধি লোকাল পুলিশ তার কেস টা সিবিয়াই এর কাছে হ্যান্ড ওভার করে দেওয়ার পর থেকে সব কিছু যেন বিগরে যায়। ওই কালো সুট প্যান্ট পড়া লোক গুলো আসলে সিবিয়াই এজেন্ট। যাই হোক এখন আর বাচার কোনও উপায় নেই তার কাছে,কারণ তারা পার্থ বাবুর মুখ চিনে ফেলেছে ,মৃত্যু তার অনিবার্য। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে যতগুলো সম্ভব তার ভালো লাগার কাজ গুলো করতে হবে, তাইতো নাকি?
বিছানা থেকে উঠলেন তিনি। ঘরে লাইট জ্বলছে, হুম এটা অরুন এর গেস্ট রুম টা। তার ডান কাঁধ টা অজস্র ব্যাথা করছে। পার্থ বাবু জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। এখনো রাত তবে আর বৃষ্টিটাও আবার শুরু হয়েছে।কিন্তু খুব দুর্বল মনে হচ্ছে নিজেকে তার। কোনওমতে তিনি তার ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুম এ এলেন। সেখানেও লাইট জলছে, সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন আরুন বাবু। তাকে দেখা মাত্রই তিনি বলে উঠলেন... "কিরে তুই উঠে এলি কেন? যা এখনি গিয়ে শুয়ে পর। আরকটু ভোর হলে তোকে মেডিকাল কলেজ এ নিয়ে যাব। ততক্ষণ তুই শুয়ে নে। এখানে তুই একদম সেফ আছিস"
বন্ধু কি বলল তা পার্থ বাবু গুরুত্বই দিলেন না।শুধু একভাবে তাকিয়ে থাকলেন আরুন বাবুর দিকে। তার শরীর দেখে আবার পার্থ বাবুর মনে সেই খুন করার অদম্য পাশবিক প্রব্রিতি জেগে উঠল। আরাক খানা তাজা প্রান, কি চমৎকার। একদম নিখুদ একটা মানুষ এর শরীর। একে শেষ করতে পারলে যেন তার জীবন সার্থক। তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারছেন না, একে খুন করতেই হবে। এই ভবে খানিকটা নিজেকে প্রস্তুত করে নিচুু স্বরে বললেন...
"সেতো বুঝলাম আমি সেফ। কিন্তু তুই সেফ আছিস কি?"
বলা মাত্রই তার বন্ধু কে কোনও রকম সুযোগ না দিয়ে নিজের পকেট এ থাকা তার সবচেয়ে পছন্দের চাকুটা দিয়ে দিলেন এক কোপ আরুন বাবুর গলায়। তারপর সেই চাকুটার গায়ে লেগে থাকা রক্তের ওপর তাকালেন ।এই চাকুই তার সবসমইয়ের প্রিয় সঙ্গি, এই চাকু দিয়েই এক সময় পার্থ বাবু  তার বাবা কে খুন করেছিলেন...... আহ! কি স্বর্গীয় আনুভুতি! এবার আরএক কোপ বসালেন তার বুক এ... রক্তে গোটা ঘর ভেসে গেল। তার পর একের পর একটা কোপ......কি শান্তি! এর চেয়ে ভাল কিছু আর হয়না। আর ঠিক সেই মুহুরতেই পার্থ বাবুর পেছন দিক থেকে তার মাথায় কিছু একটার আঘাত পার্থ বাবুর চোখ এর সামনে অন্ধকার নেমে এল। তিনই আবার অচৈতন্য হয়ে পড়লেন!

পরের দিন সকালে আনন্দবাজার পত্রিকায়

অবশেষে ধরা পরলেন চোদ্দ জনের হত্যাকারী শ্রী পার্থ রাঞ্জন গুহ। লোকাল পুলিশ ও সিবিয়াই জানিয়েছে যে অনেকদিন ধরেই তিনি তার হত্যালিলা চালাচ্ছিলেন অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে , কিন্তু কাল রাতে দুই সিবিয়াই এজেন্ট সেই হত্যাকারির পরিচয় ফাঁস করেন। কলেজ স্টীটে এক বন্ধুর ফ্লাটে ঢুকে তিনি তার হত্যালিলা চালান বছর ৩৫ এর যুবক আরুন আচার্যর ওপর। ঠিক সেই মুহূর্তে আরুন বাবুর স্ত্রী, বিভা আচার্য, খুনির মাথায় আঘাত করায় খুনি অচৈতন্য হয়ে পরে এবং ধরা পরে। পুলিশ সুত্রে জানা যায় যে তিনি সম্পূর্ণই মানসিক বিকার গ্রস্থ যিনি এতগুল মার্ডার কোনও মটিভ ছারাই করেছিলেন .................................................

সাইকোপ্যাথিWhere stories live. Discover now