প্রত্যেক মেয়েই মা-বাবার অনেক আদরের হয়। আর প্রত্যেকটি মেয়েরই নিজস্ব জগত থাকে যেখানে সে নিজেকে রাজকুমারী আর বাবা-মাকে রাজা-রানী ভাবে। তেমনই এক রাজকুমারীর নাম আলো।
জন্মের পর থেকে এক মুহুর্তের জন্যেও মায়ের আচল ছাড়া হয়নি মেয়েটা। মা-বাবার কাছে তার সমস্ত আহ্লাদ। একমাত্র মেয়ে বলে, বাবা-মা তার সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে এসেছে।
এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত আলো তার বাড়ির পাশের স্কুলেই পড়েছে। ওর জীবনে খুব বেশি ইচ্ছা নেই, শুধু সারাজীবন সে বাবা-মায়ের সাথেই থাকতে চায়।
কিন্তু মেয়েরা চাইলেই কি সব হয়, একসময় ঠিকই বাবা-মাকে একা রেখে তাদের পাড়ি জমাতে হয় শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। 😫
সেদিন বিকালবেলা আলো ছাদে কাপড় আনতে গিয়ে দেখে বাসায় কারা যেন এসেছে। মা ওকে ডাক দিয়ে নিচে নামতে বলে।
ও নিচে নেমে দেখে দুজন মহিলা বসার ঘরে বসে বাবার সাথে কথা বলছে। আলোকে দেখে তারা কাছে ডাকলেন।
১ম মহিলাঃ মা, তোমার নাম কি?
আলো তার নাম বলল।
২য় মহিলাঃ শুনলাম তুমি অনেকদূর পড়াশুনা করেছো, আরো কি পড়বা?
আলোঃ বাবা পড়ালে পড়বো। বলেই আলো ওর বাবার দিকে তাকালো। বাবা চুপ করে আছে।
১ম মহিলাঃ রান্না করতে পারো?
আলোঃ আম্মুকে সাহায্য করি। বলেই ও মনে মনে ভাবছে, ইনারা আমাকে এসব প্রশ্ন কেন করছেন? আবার ভাবলো বাবার পরিচিত লোকজন তো অনেকেই আসে, ইনারাও হয়তো তেমন কেউ হবে।
মাকে নাস্তা আনতে দেখেই আলো উঠে গিয়ে নাস্তা নিয়ে এসে সবাইকে খেতে দিলো।
মুরব্বিদের সামনে বসে থাকতে ওর কখনোই ভালো লাগেনা। আর যদি তারা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, তখন তো একেবারেই না।😒 আলো আসছি বলেই রুমে গিয়ে বসে রইলো।
একটু পর মা এসে আলোর পাশে বসলেন,
মাঃ মা, তোর একটা ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। ওখানেই বাসা নিয়ে থাকে। ওদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামেই। যারা এসেছিলেন, উনারা ছেলের ফুপু আর কাকী।
আলো মায়ের কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা। এসব কি হতে যাচ্ছে?
আলোঃ আমি বিয়ে করবো না, মা।
মাঃ এভাবে বলতে হয়না মা। সব মেয়েকেই একসময় শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়। আমরা আর কয়দিন, যাবার আগে সুস্থভাবে তোকে সংসারী দেখে যেতে চাই।
আলো মায়ের কথা শুনে কান্না করে দিলো। আলো কাঁদছে আর মাও কাঁদছে। এমনসময় বাবা দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন।
বাবাঃ আলোর মা, তুমি একটু বাইরে যাও। আমার ওর সাথে কথা আছে।
আলো বাবার কথা শুনে আরো ভয় পেয়ে গেলো..আলোর বাবা আকবর সাহেব তার মেয়েকে যথাসাধ্য বোঝালেন। আলো রাজী হলো কিন্তু এক শর্তে। সে ছেলের সাথে কথা বলতে চায়। যদি কথা বলে ছেলেকে তার ভালো লাগে, তাহলে সে এ বিয়ে করবে নয়তো না।
আকবর সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুম থেকে চলে গেলেন।
এদিকে আলো বসে বসে প্ল্যান করতে লাগলো কিভাবে ওই ছেলেকে শায়েস্তা করা যায়।আর অপরদিকে সৌরভ, যার সাথে আলোর বিয়ের কথা চলছে, ঢাকার একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে সবে জয়েন করেছে। বাসা নিয়েই মাকে নিয়ে আসবে ভাবছে, এমনসময় ওর মা ওকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললো। এর আগেও এমনভাবে মা তাড়াহুড়া করে বাসায় ডেকে পাত্রী দেখিয়েছে। সেজন্য সে মাকে স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছে ওর বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই।
সকাল সকাল বাসের টিকিট করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল সৌরভ। পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।
চাচা-চাচীদের সালাম করে মায়ের রুমে গেলো।
সৌরভের মা সালেহা বেগম স্বামীকে হারিয়েছেন বছর পাঁচেক হলো। আপনজন বলতে এই এক ছেলে।
সৌরভঃ এই অবেলায় শুয়ে আছো কেন মা?
সালেহা বেগমঃ শরীরটা ভালো না রে।
সৌরভঃ আবার জ্বর বাঁধিয়েছো? বলেই মায়ের কপালে হাত দিয়ে দেখতে গেলো। ওর মা হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, আর কতদিন আমাকে তোর চাচা-চাচীদের ঘাড়ে ফেলে রাখবি?
সৌরভঃ ওহ, এই কথা! তুমি চাইলে আজকেই তোমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবো(মুচকি হেসে)
সালেহা বেগমঃ ওখানে আমি একা একা কি করব শুনি?
সৌরভঃ একা কোথায়? আমি থাকবো তো।
সালেহাঃ তুই যখন অফিসে যাবি, আমার কিছু হলেও তো দেখার কেউ নেই।
সৌরভঃ এসব কি কথা বলো মা? আচ্ছা, তোমার কাউকে নিয়ে যেতে হয় তো গ্রাম থেকে সাথে নিয়ে যেও।
সালেহাঃ হ্যাঁ নিবোই তো। তোকে বিয়ে দিয়ে আমার ছেলের বউকে সাথে করে নিয়ে যাবো।
সৌরভঃ মা....
সালেহাঃ কোন কথা না। সবসময় নিজের কথা ভাবিস। একবার মায়ের কথা ভেবেছিস? আমি এবার তোকে বিয়ে দেব, ব্যাস..
সৌরভঃ তোমার যা মনে চায়, তাই করো। বলেই সৌরভ ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সালেহা বেগম এমন উত্তরের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। ছেলে বের হওয়া মাত্রই ভাবীর ঘরে গিয়ে সুসংবাদ দিয়ে আসলেন এবং ছেলেকে নিয়ে মেয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করতে বললেন।এদিকে আলো সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকে। এখনো পর্যন্ত ছেলের ফোন নাম্বার পায়নি যে দেখা করে বিয়ে ভাঙার কথা বলবে। এমনসময় মা ডাক দিলো।
চলবে....