সকাল থেকেই সারা বাড়িতে হুলস্থুল কাণ্ড বেধে গেলো। কে কি পড়বে, বরের বাড়ি কি কি পাঠাবে, কি কি রান্না হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার রান্না করতে ভালোই লাগে। আজ কত কি রান্না হবে, কিন্তু আমাকে কেউ রান্না ঘরে যেতে দিচ্ছে না। এক ফাঁকে গিয়েছিলাম, আমার কাজিনরা টেনে এনে এখন রুপচর্চা করতে বসিয়েছে। কাল বিয়ে, এখন রান্নাঘরে গেলে নাকি আমার স্কিন খারাপ হয়ে যাবে। সবাই মনে হয় পাগল হয়ে গেছে। 👀
কিছুক্ষণ পর ওদের বাড়ি থেকে কল আসলো। সৌরভের চাচাতো বোন সুমি ফোন করেছে। আমি রিসিভ করতেই বললো, আমাদের বাসায় আমার থেকে ছোট কিন্তু ছোটদের থেকে বড় কে আছে?
আমি বললাম, আমার ফুপাতো বোন ঝিনু আছে।
সুমিঃ ওকে দাও, ওর সাথে কথা আছে।
আমি কিছুই বুঝলাম না।সুমি তো ঝিনুকে চেনেনা তাও কেন কথা বলতে চাইছে, তাও আবার ফোন দিয়ে। যাই হোক, ঝিনুকে ডেকে দিয়ে আমি আমার রুমে গেলাম।গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। এখন আমার আরো বেশি খারাপ লাগতে লাগলো। আর একটা দিন, তারপরেই আমাকে বাবা-মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমার খুবই কান্না পাচ্ছে, কিন্তু চারপাশে এত মানুষ যে আমার কান্না করতে লজ্জা লাগছে।
পরেরদিন দুপুরের দিকে বরযাত্রী এলো। দেখতে দেখতে আমার বিয়েটাও হয়ে গেলো। আমার তখনো মাথা ঘুরছে। বিশ্বাসই হচ্ছেনা এগুলো আদৌ হয়েছে কিনা। সবাই কাঁদছিল, আমিও কাঁদছিলাম কিন্তু, আমার মধ্যে তখনো কোন অনুভূতি কাজ করছিল না..
শুধু বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। বিকেল গড়াতেই আমরা ছেলেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।
ছেলেদের বাড়ির সব আনুষ্ঠানিকতা সারতে সারতে রাত হয়ে গেলো। আমার তখন ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।
রাত ১১টা বাজে। আমার শাশুড়ি মা এসে সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। তিনি আমার পাশে বসে বললেন,
- মা, এখন থেকে এই বাড়িটা তোমার, এই সংসার তোমার। আমার রাজত্ব এবার ফুরানোর পালা। তবে আমার ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো। ও খুব কম কথা বললেও, আজ পর্যন্ত কাউকে আঘাত করে কিংবা কষ্ট দিয়ে কোন কথা বলেনি।
নতুন পরিবেশে এসেছো, মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হবে। সবাইকে আপন করে নিতে পারলে দেখবে কোন কষ্টই থাকবে না..
অনেক রাত হয়েছে। আমি যাই বলে তিনি চলে গেলেন।