২৪ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার
টংগীবাড়ি গুলিস্তান হতে সরাসরি বাসে যাওয়া যায়, আবার লঞ্চে করেও যাওয়া সম্ভব। নিবিড়ের মতে লঞ্চে বেশি আনন্দ হবে, তাই লঞ্চে যাওয়াই স্থির হল। দুপুরে আমার বাসায় চলে এল ব্যাগ নিয়ে। দুজনে বের হয়ে গুলিস্তান হতে ঘোড়ার গাড়িতে করে সদরঘাট নামলাম। আজ রাতে হলুদের অনুষ্ঠান, সকলেই হলুদ পোশাক পড়বে। নিবিড় একটা হলুদ পাঞ্জাবী নিয়েছিল সদরঘাট থেকে, তবে বেশি ঢোলা হয়ে গিয়েছিল। আমাকে নিয়ে সেটা পাল্টে সাইজ বদলে নিল এবং একই সাথে জোরজবরদস্তি একই রঙের, একই নকশার এবং একই সাইজের আরেকটা পাঞ্জাবী আমার জন্যে নিয়ে নিল। এমনিতে আমার হলুদ বা অন্য হালকা রঙের পোশাক তেমন পছন্দ নয়, কিন্তু দোস্তিতে জবরদস্তি খাটে না- তাই বাধ্য হয়ে ওর উপহার আমার গ্রহণ করতে হল।
সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ল ৩টায়। পুরো সময়টা আমরা দোতালার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার পূর্বপুরুষেরা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার অধিবাসী ছিল। কিন্তু সেখান থেকে তাদের চলে আসার কারণে আমার মুন্সীগঞ্জে তেমন আর যাওয়া পড়ে নি। ছোট থাকতে একবার গিয়েছিলাম অবশ্য, কিন্তু সেই স্মৃতি ধোঁয়াটে। কাজেই নিবিড়ের সাথে যখন যাচ্ছি, আলাদা একটা রোমাঞ্চ ভর করছিল আমার মগজে।
লঞ্চ থামল কাটপট্টি ঘাটে। সেখান থেকে এক অটোতে করে অর্ধেক, আরেক অটোতে করে বাকি পথ পেরিয়ে টংগীবাড়ী পৌঁছে গেলাম। জায়গাটা গ্রাম নয়, শহরও নয়। এর মাঝামাঝি এক এলাকা। রাস্তার পাশে দোকান-পাট, মার্কেট স্কুল, মন্দির-মসজিদ সবই আছে, কিন্তু ভেতরের দিকে তাকালে আবার গ্রাম বলে মনে হয়। গেটের সামনে 'শুভ বিবাহ' লিখা দেখেই বাড়ি চিনতে পারলাম। নিবিড়ের সাথে ভেতরে গেলাম। ওর মা আর ছোট বোন তিশা আগের দিনই চলে এসেছে। পুরো বাড়িতে সম্ভবত এই তিনটা মানুষই এখন আমার পরিচিত।
উঠোন আর কলপাড় পেরিয়ে টিনের ঘরের কোণা দিয়ে কিছুটা ভেতরের দিকে নিয়ে গেল, সেখানে আরেকটা টিনের ঘর। নিবিড়ের সাথে জুতো খুলে ভেতরে ঢুকলাম। কাঠের মেঝে, দুটো ঘর। ভেতরে অনেকগুলো মানুষ। আমাদের কাছাকাছি বয়সের দু'তিনজন মনে হয় দেখলাম। একজন খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত, নিবিড় বলল ওকে সবাই 'কুতায়' বলে ডাকে! কারণ ও 'কোথায় আছো' কে বলে 'কুতায় আছো', 'কোথায় যাচ্ছ' কে 'কুতায় যাচ্ছ'। তাই এখন ওর নামই হয়ে গেছে কুতায়! তবে ওর ভালো নাম হল সৌরভ।
YOU ARE READING
বিয়ের আমন্ত্রণে মুন্সীগঞ্জে
Non-Fictionনিবিড় রায় নামের আমার এক বন্ধুর আমন্ত্রণে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ী গিয়ে সেখানে পাঁচদিন থেকে সনাতন ধর্মের এক বিয়ের অনুষ্ঠান সচক্ষে দেখলাম। আমার সেই ভ্রমণের পাঁচদিনের অভিজ্ঞতা নিয়েই এই ভ্রমণকাহিনী। যেকোনো ধরনের গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণযোগ্য। #5 in Bangl...