আমাদের বাড়ি-২

209 22 51
                                    

বিকেলের এই সময়টা মোটামুটিভাবে নিরিবিলি। বাবারা কেউ বাড়িতে নেই। কাজের লোকেরা সবাই নিচতলায় আছে। মায়েরাও বিশ্রাম নিচ্ছে। আয়ান আর ঝিকমিক ঘুমের ভান করে পড়ে আছে।আয়ান মাঝে মাঝে চোখের পাতা অল্প খুলে মায়ের গতিবিধির উপর নজর রাখছে।

“আরে আর বলিস না‚ আমার বিখ্যাত বড় জা....”, মা খালামণির সাথে কথা বলছে। তার মানে অন্তত আধা ঘন্টা ধরে রেডিও চলবে। আয়ান আর ঝিকমিক তৈরি হয়েই আছে।মা কথা বলতে বলতে পাশের ঘরে গেলেন আর সঙ্গে সঙ্গেই টিভির শব্দ পাওয়া গেল।দুই ভাইবোন তাড়াতাড়ি উঠে কোনো শব্দ না করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আয়ান আগে থেকেই চকলেটগুলো পকেটে নিয়ে নিয়েছে। পূর্ব কোণের ছাদে ওঠার সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে তবে একটু দম নিল।তারপর পিছনের বাগানে নামার প্যাঁচানো লোহার সিঁড়ি বেয়ে খানিকটা নেমে দাঁড়ালো আয়ান। সেখান থেকেই শুনতে পেল বড়চাচী টিভি দেখছে। এই ব্যাপারে তাদের মায়েদের দুর্দান্ত মিল!

রাস্তা পরিষ্কার দেখে আয়ান উপরে উঠে এল। ঝিকমিককে পাহারায় রেখে সে আকাশদের ভাগের ছাদের সিঁড়ি দিয়ে নেমে সোজা আকাশদের বারান্দায় চলে এল। আকাশও ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিল। বারান্দায় পায়ের শব্দে চোখ খুলে উঠে বসল। আয়ানকে দেখতে পেল সাথে সাথেই। হাতের ইশারায় আয়ানকে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। আয়ান কোনো কথা না বলে পকেট থেকে চকলেটগুলো বের করে আকাশের হাতে ধরিয়ে দিয়েই দৌঁড়ে ছাদে চলে এল। আকাশও চুপচাপ ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ল।

এদিকে আয়ান আর ঝিকমিক এক দৌঁড়ে ঘরে এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।

“উফফ... বড়দের কাছ থেকে কত কিছু যে লুকাতে হয়!!”

দু’জনেই যখন বড় বড় দম নিয়ে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল। মনে হয় মা আসছে।

“আয়ান‚ঝিকমিক ওঠো। আর অভিনয় করতে হবে না”, মায়ের বজ্রকন্ঠ শোনা গেল।

মা তাহলে সত্যিই এসেছে! অভিনয় করে লাভ হবে না বুঝে ওরা দু’জন উঠে বসল।

“তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?”

দু’জনেই খুব ভয় পেয়ে গেল। মা দেখল কখন!

দুজনের কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে মা আবার জিজ্ঞেস করল‚“ ওই বাড়িতে কেন গিয়েছিলে? নিষেধ শুনতে ভালো লাগে না‚ তাই না?”; সশব্দে দুজনের গালে দুটো চড় পড়ল। আর তারপরই শুরু হল বিরামহীন বকুনি।

আয়ান বলে উঠল‚ “তোমাদের মারামারির জন্য আমাদের খেলা নিষেধ হবে কেন? ওরা তো আমাদেরই ভাইবোন! ”

মা আয়ানকে আরেকটা চড় মারলো।

“আজ থেকে সবরকম খেলা বন্ধ ”,বলেই মা দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে চলে গেলেন।

অন্যদিকের বারান্দা থেকে আকাশ ছোটচাচীর কথা ঠিকমত শুনতে না পেলেও বুঝতে পারলো ঠিকই। তার চোখে পানি চলে এল। সেটা দেখে ঝলক জিজ্ঞেস করল‚

“কি হয়েছে‚ ভাইয়া?”

“আয়ান আর ঝিকমিককে ছোটচাচী ঘরে বন্ধ করে দিয়েছেন ”

“চকলেট আনার জন্য ‚তাই না?”

“হুমম ”

“আর খেলা হবে না?”

আকাশ কোন উত্তর দিল না। ঝলকের মন খারাপ হয়ে গেল।

**********************************************

আজ একটু আগেই বাড়ি ফিরলেন শরীফ। সাধারণত সন্ধ্যাবেলায় তিনি ফেরেন না। ঘরে ঢুকেই ক্লান্ত হয়ে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন। বাবাকে দেখে তিয়াশ বল ফেলে বাবার কোলে গিয়ে বসল। তিয়াশকে আদর করতে করতে শরিফ বললেন ‚

“বুঝলে শাহানা,আরিফ উত্তরের জমিরও দখল চায়।তবে আমিও ছেড়ে কথা বলব না”

শাহানা পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে পাশের খাটে বসলেন।

“কিন্তু তোমাদের পৈত্রিক ব্যবসা তো একটাই। সেখান থেকে ওকে সরাবে কিভাবে?”

শরীফ পানি খেতে খেতে চিন্তা করতে লাগলেন। কিছু তো একটা করতেই হবে।

আজকের দুর্দান্ত কীর্তি-কলাপের জন্য আরেক দফা ঝাড়ি বাবার কাছ থেকে পাওনা ছিল আয়ান আর ঝিকমিকের।রাতের খাবারের পর সেটাও পূরণ হয়ে গেল।

বড়রা যে কেন এত নিষ্ঠুর হয়! বাবা আর বড়চাচার ঝগড়া না থাকলে কত ভালো হত!!

চলবে......

কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত Nơi câu chuyện tồn tại. Hãy khám phá bây giờ