পাঠ-৩ মিতু ও কলা খাওয়া

110 6 8
                                    

ছোটবেলায় মনে মনে কলা খাওয়ার গেমটাতো কে না খেলেছে। খুবই সহজ একটা কৌশল। কিন্তু যারা জানত না তাদের কিন্তু মাথাই খারাপ করে দেয়া যেত তখন। আর কৌশলটা জানার জন্য সবসময় পিছে পিছে ঘুরত। কিংবা বলবে আরেকবার ধরত। লিটিল ম্যাজিশিয়ান যদি রাজি নাও থাকে তখন নিজেই বলবে, "আমি কলা খেয়েছি, ওর কাছ থেকেও ততগুল নিয়েছি এখন তুমি কয়টা দেবে??"

( এখন আমি বলব যাহা একটুও নয় মিছে, চল তোমায় নিয়া যাবো ১৯ বছর পিছে )

এই মুহূর্তে আমি আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার সামনে বসে আছি। ক্লাস সম্ভবত টু/থ্রি। তার মাথা খারাপ করার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।

_"মনে মনে কিছু সংখ্যক কলা খাও।
_"কি খাউ?"
_" খাউ না,মানে, কলা খাও।

মেয়েটা এমন ভাব করল যেন এমন আশ্চর্যের কথা জীবনেও শুনে নাই।
বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল।
_"কেন?"
আমিও তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে আবার বললাম
_"কিছু সংখ্যক কলা খাও। যে কোন সংখ্যক মনে মনে!! "
_" কিসের কলা? শুধু শুধু কলা খাব কেন?"
_"একটা খেলা খেলব, মজা হবে অনেক"
_"এতো মজার দরকার নাই"_এই বলে সে তার ড্রইং খাতা বের করে তার কাজে বিজি হয়ে গেল। এর মাঝে আমার দিকে খনিকের জন্য তাকিয়ে থাকল । কি মজা হবে তা জানার ওর কৌতূহল হচ্ছে, আবার বিশ্বাসও হচ্ছেনা আমাকে, যদি ওকে বোকা বানিয়ে অপদস্ত করি??

কিছু কিছু মেয়ের চোখের দৃষ্টি ভিশন ঠাণ্ডা আর শান্ত হয়। কিন্তু যার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকবে তার ভিতরটা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ও এমন একজন। আমি উঠে যাচ্ছিলাম!!
_"এই শোনও! আচ্ছা খেয়েছি। এখন?''
আমি তড়াক করে আবার বসে পরলাম।
_"এবার যে কয়টা খেয়েছ সে কয়টা জিহানের কাছ থেকে নাও।" জিহান আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে পেটুক। কিছু খাওয়ার পর তার অবশিষ্ট থুঁতনির নিচে আটকে থাকে। সেটাও একসময় খেয়ে ফেলে।
মিতু মুখটা একটু বিকৃত করে একবার জিহানের দিকে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে অনিচ্ছার সাথে বলল,
_"ঠিক আছে, নিলাম। এখন এগুলো কি করব? খাবো নাকি থাকবে?" এই বলে খিল খিল করে হাসতে লাগল।
_" খাও_ এবার আমি দিলাম তোমাকে ৮টা। "
_"এবার কি করব?
_"অর্ধেকটা ফেলে দাও, এবং জিহানের গুলো জিহানকে ফেরত দাও?"
মিতু তার মুখের কোণে হাসি লুকিয়ে অবাক হবার মত ভান করল,
_"খাওয়ার পর সেগুলো কিভাবে ফেরত দেব?"
মেয়েটা ভালো পেকনা করতেছে'তো। এখনতো মনে হচ্ছে, মেয়েটা খেলাটা জানে, আমাকেই গাদ্দু বানাচ্ছে।
_ '' না দিতে পারলেতো আর কোন কথাই নাই_ '' উঠে চলে যাবো কিনা ভাবছি মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে এখন।
_'' ok ok, তারপর? '' আমি বিরাট বিজ্ঞের মত ভাব করে বললাম,
_" তোমার কাছে আছে আর ৪টা।"_ আমি ওর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য ওর দিকে বুক ভরা আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম!! B-)
মেয়েটা খানিক্ষন চুপ করে থেকে বলল, "হয় নাই।" ওর কথা শুনে আমি হতবাক
_"হয় নাই মানে? কিয়ের হয় নাই? অবশ্যই হইছে!! নইলে,জোগ বিয়োগ ভুল করছ।"

_'' মেয়েটা মুখটা বাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল, '' আচ্ছা যাও হইছে!! এখন এখানে বসো!'' মেয়েটা তার জায়গা থেকে একটু সরে বসল।

আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম বটে, কিন্তু ওর পাশে বসলাম। আর তখনি হঠাৎ করে ও আমার ঘারের উপর হামলে পড়ে বলল,




''সিস্টেমটা কি গুরু?? তোমার জাদুর সিক্রেটটা বল আমাকে''

_ আমি ওর এরকম আচরনে একেবারে হা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর ও খিল খিল করে হাসতে থাকল। আর আমি প্রথমবার ওর প্রতি আমার মুগ্ধতাটা ধরতে পারলাম।

সে আমার এতো কাছে তার মুখ এনেছে যে, আমি উত্তেজনায় নিশ্বাস নিতে পারছি না! ও মাই গড আমি এখন কি করবো, চাকাম করে কিস করে দিবো কিনা! ও মাই মাই মাই গো....
______

মেয়েটিকে আমি ভীষণ পছন্দ করতাম সেটা আমার এক বন্ধু তার এক বান্ধবীকে বলে দিয়েছিল। সেই বান্ধবী গিয়ে তাকে বলে ফিয়েছে! এবং সেটা শোনার পর সে আমাকে দেখে প্রায় মুচকি হাসি দিত! আর আমি এতোই লাজুক ছিলাম যে সেই লজ্জায় আমি স্কুল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছি।

মিতুর সাথে আমার আর কোনোদিন দেখা হয়নি। কোনোদিন না। আজ ২০ বছর পরেও মাঝে মাঝে তার নাম লিখে ফেসবুকে সার্চ করি.. কিন্তু ঐ নামটুকু ছাড়া যে আর কিছুই জানিনা তার সম্পর্কে....

তাই সেও আমার জীবনে এক ক্ষনিকের অতিথিই হয়ে রইলো.... c:

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Dec 03, 2019 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

ক্ষণিকের অতিথিWhere stories live. Discover now