এক ঘন্টার গল্প - কেট চোপিন

186 2 1
                                    

মিসেস মালার্ড হৃদরোগে ভুগছিল। বিষয়টা জানা থাকায়, তার স্বামীর মৃত্যু সংবাদটি খুব সর্তকতার সাথে যতটা যত্ন নিয়ে বলা সম্ভব সেভাবেই প্রকাশ করা হল।

তার বোন জোসেফাইন খবরটা বলেছিল, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্যে, প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতের মাধ্যমে আধো-গোপনীয়তায়। তার স্বামীর বন্ধু রিচার্ডও ছিল এ সময় কাছে। রেল দূর্ঘটনার বার্তাটি যখন খবরের কাগজের অফিসে এসে পৌঁছায় সে-ই তখন অফিসে ছিল। ব্রেন্টিলি মালার্ডের নাম ছিল তালিকায় সবার উপরে। খবরের সত্যতা নিশ্চিতের জন্য তাকে কেবল দ্বিতীয় টেলিগ্রাম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল, এবং অন্য কোন রূঢ় বন্ধু বা কম খেয়ালি বন্ধু এই খারাপ খবরটি বহন করে আনার আগেই সে তড়িঘড়ি করে বলে দিয়েছিল।

এ ধরণের খবরের ক্ষেত্রে অন্য মহিলারা, খবরের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে শরীর অবশ করা যে রকম ভঙ্গি করে, ও সে রকম করে নি। তৎক্ষণাৎ, হঠাৎ বন্য উদ্দমতায় তার বোনের বাহু আকঁড়ে ধরে কেঁদেছে। কষ্টের গমক কমতেই একাকী তার রুমে চলে গিয়েছিল।

খোলা জানালার দিকে মুখ করে রাখা আরামদায়ক হাতলযুক্ত চেয়ার ছিল ওখানে। চরম শারীরিক পরিশ্রান্তিতে দেহকে ছেড়ে দিল চেয়ারের গদিতে, মনে হয় যেন এ কান্তি তার আত্মাকেও ছুঁয়েছিল।

বাসার সামনের গাছগাছিলর ওপর দিয়ে খোলা প্রান্তরে চোখ রেখে দেখলো বসন্তে নতুন জীবন পেয়ে গাছগুলো তিরতির করে কাঁপছে। বাতাসে বৃষ্টির চমৎকার ঘ্রাণ। একজন ফেরিওয়ালা জিনিসপত্র বিক্রির জন্য নিচের রাস্তায় চেঁচাচ্ছে। দূরে কেউ একজন গান গাইছে, দূরবর্তী সেই গানের সুর তার কাছে ক্ষীণ হয়ে পৌঁছায়, এবং ছাদের কার্নিশ থেকে অসংখ্য চডুই পাখির কিচির মিচির শোনাযাচ্ছিল।

পশ্চিমুখীয় জানালায় একটা মেঘ আর একটা মেঘের উপর গিয়ে স্তুপ তৈরি করেছে, তার ভেতর দিয়ে এখানে ওখানে টুকরো টুকরো নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে।

মালার্ড মাথাটাকে প্রায় চেয়ারের কুশনে ছুঁড়ে দিয়ে বসে, অনেকটা নিশ্চল, কেবলমাত্র ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার বাষ্প যখন গলার ভেতর দিয়ে বেড়িয়ে আসে এবং তাকে কাঁপিয়ে দেয় ঐ সময়টুকু ছাড়া। যেন কোন শিশু ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।

বিদেশী গল্পসংগ্রহOù les histoires vivent. Découvrez maintenant