পর্ব-১২

655 35 5
                                    

#মাতেয়ারা
#পর্ব_১২

রাতে ঘুমোবার আগে ইরিন ছাদে আমাকে ডাকতে এলো। ছাদের লাইট জ্বালিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখে ভেংচি কেটে হাসলো।
তাঁর আপাদমস্তক বিছানার চাদরে মোড়ানো।  
---ঘরে যাবেন না..? ঘুম পায় নি?
---এরকম গায়ে চাদর মুড়িয়ে আছো কেন?
---খালি গায়ে এসেছি। চাদরে লজ্জা নিবারণ করছি।
---মানে?
ইরিন আমার দিকে মুখটা এগিয়ে গলার স্বর মোটা ভারী ভাব এনে চোখ পাকিয়ে বললো,
---মানে হলো, হে নরাধম, আমি নগ্নগাত্রে এসেছি। তুমি কি দেখতে চাও বৎস? এই নগ্ন নারী শরীর দেখিবার জন্য তুমি কি উৎসুক? তোমার চোখের সেই সহ্যক্ষমতা আছে তো? 
আমি একটু পেছনে সরে দাঁড়ালাম। ইরিনের একদম বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে সত্যিই সে চাদর খুলে ফেলেছে।
---তুমি ঘরে যাও ইরিন। আমি অন্য ঘরে শিফট করবো। তোমার প্রাইভেসি চাই তো, এই রুমটা সম্পূর্ণ দেওয়া হলো।
---এত রেগে গেলেন কেন বলুনতো? আমি হলে থাকলে আপনার সমস্যা কি?
---আছে। অনেক সমস্যা আছে। ইউনিভার্সিটিতে সবাই অন্যকিছু মিন করবে। ভাববে, আমাদের বনিবনা হচ্ছে না। এতে ঝামেলা বাড়বে। তোমারও বিপদ বাড়বে, আমারও!
ইরিন মাথা চুলকে বললো,
---সেটাও ঠিক। হল ব্যাপারটা তাহলে বাদই দিই? আপনার মাও যা ক্ষেপলেন। কি বলেন?
আমি কোনো কথা বললাম না। মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। হুহহহহহ...
ইরিন কথা বলতেই থাকলো,
---জানেন, আমাকে তো আমার সব বান্ধবীরা জিজ্ঞেস করে, আমি কেন আপনার সাথে গাড়ি করে ইউনিভার্সিটিতে আসিনা। মেয়েরা নাকি আপনার পাশের সিটে বসতে পারলে ধন্য হয়। আপনাকে যে আমি ভয় পাই, আমি কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই না। সবাই ভাবে আপনি আমাকে ভয় পান। ব্যাপারটা কি মজার না?
---এটা মজার ব্যাপার?
---না, এর সাথে আরো অনেক মজার কথাও বলে! 
---কিরকম? 
---বলবো না। লজ্জা করছে।
আমি ইরিনের দিকে তাঁকালাম। সে মিটিমিটি তাঁকিয়ে হাসছে।    
আমি নিজেই দুপুরবেলার মারামারির প্রসঙ্গ টানলাম,
---ইরিন, দুপুরের জন্য আমি স্যরি। আসলে আমি চাইছিলাম না তুমি এইসব ফালতু ঝামেলা টামেলা দেখো। মারামারি বাজে জিনিস। এসব থেকে দূরে থাকাই ভালো।
---তাহলে আপনি কেন করেন বলুনতো?
---আমি ওসব না করলে তো চলবে না, ইরিন। আমি ভালোমন্দ না দেখলে ছেলেপেলেগুলো তো সমস্যায় পড়বে। তাছাড়া এসব আমার রক্তে মিশে গেছে।
---তাও ঠিক।রক্তে মিশে গেলে কোনো কিছু ছাড়াও যায় না। আমি আসলে সবসময় শুনেছি আপনি নাকি খুব গরম মেজাজি! আর খুব দাপুটে। সবাই কি ভয় পায় আপনাকে! কিন্তু আমি তো কাউকে মারতে টারতে আর সরাসরি দেখিনি। আমার বান্ধবী নোরাই তো আজকে খবরটা দিলো। আপনি নাকি কাকে মারছেন। ভাবলাম, এই সুযোগে আপনার লাইভ পারফরম্যান্স দেখে নিই। এত বড় নেতা বিয়ে করে বসে আছি অথচ সে কি করে সবাইকে সাইজ করে সেটাই জানিনা, বলুন এটা কি হয়? কিন্তু আপনি তো আমাকে মারামারিটা দেখতেই দিলেন না। আচ্ছা আপনি এত হ্যান্ডসাম কেন বলুনতো? জ্যাকেট গায়ে ঘেমেটেমে আমার সামনে যখন বসেছিলেন না, এই যে এভাবে কাত হয়ে… হাতটা এরকম করে কপালে একটু খানি ছুঁইয়ে….
ইরিন অভিনয় করে দেখাতে লাগলো….
আমি মনে মনে বললাম, ব্যস কথার গাড়ি চালু হয়ে গেছে…
---কি হলো? কথা বলছেন না কেন?
---কি বলবো?
---আমার আরেকটা সুখবর কিন্তু আপনি শোনেন নি। হলের খবরটা শুনেই আপনার মা এত চেঁচালেন, বলার সুযোগ পেলাম কই?
আমি মনে মনে ঘাবড়ে গেলাম। ইরিন এবার না জানি কি সুখবর বলে?
---আমি আরেকটা টিউশনি পেয়েছি। মাসে বারোদিন পড়াবো। ছ'দিন গান শেখাবো, ছ'দিন ম্যাথ করাবো। পাঁচ হাজার টাকা। ভাবতে পারছেন? ফাইভ থাউসেন্ড! যাওয়ার ব্যবস্থা আমার। কিন্তু ফেরার সময় ওরা আমাকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেবে।

মাতোয়ারাWhere stories live. Discover now