পর্ব-২

142 2 1
                                    

তখন আব্বু আর চাচা আসল ভিত‌রে ভাইয়া কি একট‌া ওষুধ আন‌তে নি‌চে গে‌ছে আর রা‌কিব ভাইয়া আগে ‌থেকে ছিল। আব্বুরা আসায় ওদের থে‌কে মু‌ক্তি পেলাম। আব্বু ও‌দেরকে বলল, কি‌রে তোরা কখন আস‌লি? রা‌কিব ভাইয়া বলল, এদের কথা আর ব‌লি‌য়েন না রাত থে‌কে ঘুমাই নাই কান্না কর‌ছে ব‌সি ব‌সি দুইটায় আর আমা‌কেও ঘুমা‌তে দেয় নাই হাসপাতা‌লে আসার জন্য পাগল হ‌য়ে গে‌ছে পরে না পে‌রে একট‌ু ভোর হ‌তেই নি‌য়ে আসলাম। য‌দিও তখন আমার শরীরের অবস্থা খারাপ, একে তো বাস থে‌কে প‌ড়ে পাওয়া ক্ষতের ব্যাথা তার উপর হা‌তে স্যালাইন দেয়া, ইন্জেকশনও দেওয়া হ‌য়ে‌ছে তাছাড়া আমার ডেঙ্গু প‌রিস্থি‌তি বুঝ‌তে ডাক্তাররা টেস্ট করার জন্য বারবার রক্ত নি‌চ্ছে মোট কথা আমার অবস্থা খারাপ। প্রায় দশদিন হাসপাতা‌লে ছিলাম। সেই যে দ্বিতীয় দিন রু‌হি আর দিয়া আস‌ছে ও‌দেরকে আর বা‌ড়ি‌তে নি‌তে পা‌রে নাই। প্রথম দ‌ু-দিন আম্মু ছিল সা‌থে কিন্তু আম্মু হ‌লো হা‌র্টের রো‌গি তাই রু‌হি আর দিয়া আম্মু‌কে ব‌াসায় চ‌লে যে‌তে ব‌লে আর আমিও জোর করায় প‌রে বাসায় চ‌লে যায়। চাচা-চা‌চিরা, জেটুরা, আমার সব ভাই বোনরা সব সময় আমার খবর নি‌য়ে‌ছে। এই দশ দি‌ন আমার প্র‌তি সবার ভা‌লোবাসা দে‌খে নি‌জের কা‌ছে অন্য রকম এক অনুভূ‌তির সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে যে কথা না বল‌লে নই তা হ‌চ্ছে রু‌হি আর দিয়া, ওরা সবটা সময় আমার পা‌শে ছিল একমুহূ‌র্তের জন্যও আমা‌কে একা রে‌খে কোথাও যায়‌নি। ঠিক সম‌য়ে আমা‌কে ঔষুধ খাওয়া‌নো খাবার খাওয়া‌নো থে‌কে শুরু ক‌রে সব কর‌ছে ওরা। মা‌ঝে মা‌ঝে যখন আমার টেস্ট করা‌নোর জন্য ডাক্তার রক্ত নি‌ত তখন আমার সি‌টের দু পা‌শে দুজন ব‌সি সে কি কান্না মনে হইত যেন ও‌দের থে‌কে রক্ত নি‌য়ে নি‌তে‌ছে, ও‌দের কান্ড দে‌খে আমি হাস‌তে হাস‌তে শেষ। য‌দিও আমি ও‌দের সব কিছু স্বাভ‌াবিক ভা‌বেই নিতাম। ভাবতাম ছোট ‌থে‌কে একসা‌থে বড় হ‌য়েছি তাই হয়ত আমার শরীর খারাপ ব‌লে ও‌দেরও খারাপ লাগ‌ছে। আজ হাসপাতাল থে‌কে বাসায় ফিরলাম। হাসপাতা‌লে যাওয়ার পর প্রথম তিনদিন একটা সুন্দর আমার বয়সী নার্স আসত কি সুন্দর তার হ‌া‌সি আমি তো ক্রাশ খাই গে‌ছিলাম, আম‌ার খোজ খবর নিত নাম ব‌লেছি রিশা। প‌রে কি হইল জা‌নি না রিশার আর দেখা পাইলাম না তাই এক বাল‌তি আফ‌সোস নি‌য়ে বা‌ড়ি ফি‌রে এলাম। বা‌ড়ি আসলাম আজ তিনদিন হ‌লো এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। ত‌বে ইদা‌নিং দিয়া আর রু‌হির ভিতর অনেকট‌া প‌রিবর্তন লক্ষ ক‌রা যায়। দিয়া যদিও রু‌হির থে‌কে আট ম‌া‌সের বড় তবু একজন আরেক জনর সা‌থে সমবয়সীর মত আচরন ক‌রে। ‌কিন্তু ইদা‌নিং একজন আর একজ‌নে প্র‌তি কেমন যেন আচরণ ক‌রে যেন একে আপ‌রের শএু। সারা‌দিন যে কো‌নো তুচ্ছ বিষয় নি‌য়ে ঝগরা ক‌রে। এতে আমি প‌রি বড় বিপ‌দে কারণ ওরা ঝগরা ক‌রে আর ঝগরা মধ্য‌ে আমা‌রে টা‌নে মা‌নে বিচার আনে মোর কা‌ছে। আমিও একটা বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নি‌য়ে আসি প্রথ‌মে প‌রে যখন দে‌খি যে এদের কে আমি না আমার বাপও সামলাইতে পার‌বে না তখন আমার কা‌ছে শরীর খারাপ লা‌গে ব‌লে ও‌দের সাম‌নে থে‌কে প্র‌তিবার কে‌টে প‌রি আর ঘু‌মের ভান ধ‌রে থা‌কি। দিনদিন ও‌দের এই আচর‌ণের নতুন মাএা পা‌চ্ছে। যেমন আজ আমি দুপু‌রে খাওয়ার পর আমার রু‌মে শু‌য়ে শু‌য়ে মোবাইল গুতাইতে ছিলাম এমন সময় দিয়া আস‌লো এসেই আমার পা‌শে বসল ব‌সে এটা সেটা বল‌তে‌ছিল আর আমার চু‌লে হাত দি‌য়ে ‌বি‌লি কে‌টে দি‌তে‌ছিল আর আমি মোবাই‌লে মন‌যোগ দি‌য়ে ওর কথা না শু‌নেই হু হা ব‌লে উওর দিচ্ছিলাম। আর এমন সময় রু‌হি আসল আমার রু‌মে এসেই দিয়াকে রাগি ক‌ন্ঠে বলল, এই তুই এইখা‌নে ক‌রিস সারাদিন তাও জিবরা‌নের রু‌মে ওর চু‌লে হাত দি‌স কে‌নো। দিয়াও রা‌গি স্ব‌রে বলল, এটা আমার ছোট আব্বুর বাসা আমার যখন ইচ্ছা তখন আসব আর এটা আমার ছোট আব্বুর ছেলে তোর ভাইয়া আমার ইচ্ছা আমি ওর চু‌লে হাত দেই আর জড়ি‌য়ে ধ‌রি তা‌তে তোর কি? ব‌লেই দিয়া আমাকে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। ও‌তেই হ‌লো রু‌হি তে‌ড়ে এসে দিয়া‌কে টে‌নে আমার উপর থে‌কে স‌রি‌য়ে দিয়ে বলল, ছাড় ও‌রে ফালতু কোথাকার, আমার ভাই মা‌নে ভাই হ‌বে তোর, ব‌লেই একজন আরেক জ‌নের সা‌থে হাতাহা‌তি লে‌গে গে‌লো। আমি এতক্ষণ ও‌দের কান্ড দে‌খে হা হ‌য়ে গেলাম। তারপর ও‌দের দুজনরে কো‌নো ম‌তে ছা‌ড়ি‌য়ে বললাম, আমার ভাই না তোর ভাই মা‌নে কি আ‌মি তো তো‌দের দু জ‌নেরই ভাই না‌কি চেহারা বান্দর মার্কা ব‌লে ভাই প‌রিচয় দি‌তে লজ্জা লা‌গে ব‌লেই হাস‌তে লাগলাম। আমার কথা শু‌ণে দিয়া বলল না মা‌নে ত‌ুই আমার ভাই না তুই তো আমার ফ্রেন্ড খালি ফ্রেন্ড না আমার বয়‌ফ্রেন্ড ব‌লেই হাস‌লো। আমি বললাম, যা ফাম দিছ না ফাম দিছ না। দিয়া বলল, ফাম কি‌সের আর তোর বান্দর মার্কা চেহারা মা‌নে? বান্দর মার্ক‌া চেহারা তো ওর ব‌লে রু‌হির দি‌কে ইশারা করল ব্যাস আবার লা‌গি গেল এইবার আর ম‌নে হয় না আমি সামলাই‌তে পারবো তাই আম্মু‌রে ডাকলাম, আম্মুউউউ কই তু‌মি দেখ এই দুইটা কি শুরু কর‌ছে, নি যাও ও‌দের‌কে এইখান থে‌কে। আম্মু আসি বলল, আমি পার‌বো না তোর বোন তুই সামলা ব‌লেই চ‌লে গেল। আমি ও‌দের‌কে বললাম, তোরা কি থাম‌বি না‌কি আমি এইখান থে‌কে চ‌লি যাইতাম। ওমা দে‌খি থা‌মি গেল আমি তো নিজের চো‌খে বিশ্বাস কর‌তে পার‌তেছি না যে এরা এত তাড়াতা‌ড়ি থা‌মি গেল তাও আবার আমার কথা। আমি‌তো হহপাক। রু‌হি এসে আমার বাঁ পা‌শে লম্বাল‌ম্বি ভা‌বে আমার পে‌টে মাথা রে‌খে শু‌য়ে পড়ল আর মোবাইল টিপ‌তে লাগল এটা‌ দে‌খে দিয়া আমার ডান পা‌শে একই ভা‌বে আমার বু‌কের উপর মাথা রে‌খে শু‌য়ে পড়ল আর মোবাইল টিপ‌তে লাগ‌লো। আমি যেন তা‌দের বা‌লিস এভা‌বেই চল‌ছিল ও‌দের অত্যাচার। দু‌দিন প‌রে কথা আমি সকা‌লে ঘুম থে‌কে উঠে বস‌ছি মাএ আম্মু আসি চিল্লা‌পাল্লা শুরু ক‌রে দিল, উঠ‌ছে লাট সা‌হেব দি‌নের বা‌জে ১০ টা।
- কি হই‌ছে চিল্লাও কা আমার ক্লাস নাই উঠে কি করতাম। (আমি)
- কি কর‌বি মা‌নে নি‌চে মেহমান আস‌ছে যায় দেখা ক‌রে আস (আম্মু)
- কে আস‌ছে যে?
- তোর রা‌কিব ভাইয়ার শশুর-শাশুড়ি আর মীম।
- ও আচ্ছা, আগে বলবা না যা‌চ্ছি।
- হুম, আগে মুখ হাত ধু‌য়ে যা।
- যা‌চ্ছি।
ব‌লে হাত মুখ ধু‌য়ে নি‌চে আসলাম। আস‌লে মীম হইল রা‌কিব ভাইয়ার একমাএ শালী সেই সুন্দর। অনার্স প্রথম ব‌র্ষে প‌ড়ে। ভাইয়া বি‌য়ের সময় প‌রিচয় হ‌য়েছিল আমা‌দের বাসায় আগেও আস‌ছে। নি‌চে এসে দেখলাম রা‌কিব ভাইয়ার শশুড় শাশুড়ি আর মীম সোফায় ব‌সে আছে সা‌থে বড় আব্বু আর বড় আম্মুও আছে। আমি ঘ‌রে ডু‌কেই সবাই‌কে সালাম দি‌লাম কেমন আছে খোজখবর নিলাম। তারপর মীম বড় আম্মুর পা‌শেই ব‌সেছিল আমি গি‌য়ে ও‌দের দুজ‌নের মা‌ঝে বসলাম। ব‌সে বড় আম্মু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরলাম। বড় আম্মু বলল, কি হয়‌ছে আমার ছে‌লেটার? শরীর এখন কেমন? নাস্তা করছস? আ‌মি বললাম, শরীর ভা‌লো আর নাস্তা ক‌রি নাই এখ‌নো করব। বড় আম্মু রাগ দেখি‌য়ে বলল, ত‌ুই ছে‌লে ভা‌লো হ‌বি না শরীর একটু ভা‌লো লাগ‌তে‌ছে আর অম‌নি শুরু হয় গে‌ছে আগের মত। যা ভিত‌রে যা তোর ভা‌বি আছে রান্না ঘ‌রে নাস্ত‌া দি‌তে বল তো‌কে। আমি বললাম, আচ্ছা যা‌চ্ছি যা‌চ্ছি মী‌মের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বললাম, চল ভিত‌রে যাবা? মীম আমার সা‌থে ভিত‌রের দি‌কে যে‌তে যে‌তে বলল, তোমার শরীর এখন কেমন আছে? একদম শুকায় গেছ! তুমি হাসপাতা‌লে ছি‌লে শু‌নে তে‌ামাকে ‌দেখ‌তে আসি গেলাম। আমি বললাম, কি বল আমা‌কে দেখ‌তে আসছ? কি কপ‌াল আমার সুন্দ‌রিরা আমি অসুস্থ শু‌নে আমা‌কে দেখ‌তে আস‌ছে আ‌মি আর ভা‌লো না থে‌কে পা‌রি? বল‌তে বল‌তে রান্না ঘ‌রে চ‌লে এলাম দে‌খি রুমি ভা‌বি রান্না ঘরে কি জা‌নি কর‌ছিল আমা‌কে দে‌খেই বলল, কি দেবর জান কেমন আছ ত‌ু‌মি? বস তোম‌া‌কে নাস্তা দেয়। আমি হে‌সে হে‌সে বললাম, দেবর জান কেমন আছে সেটা খবর নেয়ার সময় কই তোমার কা‌ছে তু‌মি তো তোমার আস‌ছে সেটা নি‌য়ে ব্যস্ত। ভা‌বি বলল, থাক‌বো না তো আমার একটা মাএ বোন বি‌য়ে হ‌য়ে গে‌লে তো আর সু‌যোগ পাব না তখন শশুড় বা‌ড়ি‌তে কেমন না কেমন থাক‌বে। আমি বললাম, আচ্ছা তাই? এতই যখন ভা‌লোবাসা তাহ‌লে এক কাজ কর। আমার সা‌থে বি‌য়ে দি‌য়ে ও‌কে এই বা‌ড়ি‌তে বউ ক‌রে নি‌য়ে আস তাহ‌লে তোম‌াকে আর কষ্ট ক‌রে দূ‌রে থাক‌তে হ‌বে না দুই বোন একসা‌থে থাক‌তে পারবা, ব‌লেই আমি হাস‌তে লাগলাম। ভা‌বি আর মীমও হাস‌তে লাগল। ভা‌বি বলল, না আমি কো‌নো বেকার ছে‌লের কা‌ছে আমার বোনকে বি‌য়ে দিব না ব‌লে হাসল। ভা‌বির সা‌থে আমি সব সময় দুষ্টুমি ক‌রি তাই ভা‌বিও আমার সা‌থে দুষ্ট‌ুমি ক‌রে। য‌দিও কথাটা আমি নেহাৎ মজার ছ‌লে ব‌লেছিলাম কিন্তু আমার কথাটা শু‌নে মীম হাস‌ছিল ঠি‌কি তবুও কেমন ক‌রে যেন তাকাল আমি ঠিক বুঝলাম না এই চাহনি মা‌নে ক‌ি ম‌নে ম‌নে ভয়ও পেলাম রাগ করল না‌কি।

‌জোড়া বিবাহWhere stories live. Discover now