পর্ব-৩

104 2 2
                                    

তখন‌ কার মত বিদায় দিয়ে চ‌লে আসার সময় বড় আম্মু বলল দুপু‌রে যা‌তে বড় আম্মু‌দের বাসায় খাই। আমি ঠিক আছে ব‌লে উপ‌রে আসার সময় মীম বলল আমি আসি তোমার স‌া‌থে? না মা‌নে তোমার আম্মুর সা‌থে দেখা হয় নাই তো। হ্যা, অবশ্যই এটা জিজ্ঞাসা করা লা‌গে। ভা‌বি কে ব‌লে মীমকে নি‌য়ে উপ‌রে এলাম আম্মু মীমকে দে‌খে অনেক খু‌শি হ‌লেন ও‌রে নি‌য়ে ভিত‌রে চ‌লে গেল সেখা‌নে আমার ভা‌বিও যোগ দিল আর আমার ভাই‌জি‌তো সোজা ওর কো‌লে উঠে বসল। ও‌দের আড্ডা জ‌মে গেল, এত উৎসুক জনতার ভি‌ড়ে আমি আর মীমের সা‌থে কথা বলার সু‌যোগ পেলাম না। তাই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নি‌য়ে গোসল কর‌তে চ‌লে গেলাম। গোসল করার সময় ম‌নে পড়ল হায় হায় আমি তো সা‌থে কাপড় নি‌য়ে আসি নাই যে গুলা পড়াছিল ওগুলা ভিজ‌ায় ফেল‌ছি ভাগ্য ভা‌লো সা‌থে তোয়েল‌ে টা আনছিলাম সা‌থে ক‌রে আম্মু‌রে যে ডাক‌বো ওই অবস্থাও নাই আম্মু‌কে ডাক‌লে য‌দি সা‌থে মীম আসি যায় তাহ‌লে তো মান ইজ্জত শেষ। তাই চিন্তা করলাম আম্মুরা তো কি‌চেনে ব‌সি কথা বল‌তে‌ছে আর বাথরুমটাও আমার রু‌মের সা‌থে এটাস্ট তাই তো‌য়ে‌লে প‌রে রু‌মে যায় কাপড় পাল্টায় ফে‌লি। যেই ভাবা সেই কাজ বাথরুম থে‌কে বের হ‌য়ে ওভারড্রপ থে‌কে কাপড় নি‌চ্ছিলাম হঠ‌াৎ ম‌নে হ‌লো আমার পিছ‌নে কেউ আছে আমি চম‌কে উঠে পিছ‌নে ফির‌তেই মিমের সা‌থে ধাক্কা খেলাম। ধ‌াক্কা খে‌য়ে ব্যা‌লেন্স রাখ‌তে না পে‌রে প‌রে গেলাম বিছানায় মীম প‌ড়ে গেল আমার উপর। সে কি এক অনুভূ‌তি আমি তো লজ্জায় শেষ। মীম তাড়াতা‌ড়ি আমার উপর থে‌কে উঠে গেল। তারপর দোষী দোষী এটা ভাব নি‌য়ে বল‌তে লাগ‌লো, স‌রি স‌রি আস‌লে আন্টি আমা‌কে আপনা‌কে মা‌নে তোমা‌কে ডাকার জন্য পাঠা‌লো এসে দে‌খি তু‌মি নেই তাই তোমার রুম দেখ‌ছিলাম আমি জানতাম না যে তু‌মি... মীম আরো কিছু বল‌তে চাই‌ছিল হয়ত নি‌জে‌কে নি‌র্দোষ প্র‌মা‌নিত কর‌তে তখন আমি ও‌কে থা‌মি‌য়ে দি‌য়ে বললাম আরে কি বল দোষটা আমার ছিল আমি খেয়াল ক‌রি নাই। তাছাড়া এতে তোমার কো‌নো দোষ নেই যা হ‌য়ে‌ছে হঠাৎ হ‌য়ে গে‌ছে ভে‌বে নাও এটা প্রাকৃ‌তিক নিয়‌মে হ‌য়ে‌ছে ব‌লে হাস‌তে লাগলাম। মীম বলল, আচ্ছা তা না হয় বুঝলাম তা প্রকৃ‌তি কি আরো দেখা‌বে ব‌লে ও হাস‌তে লাগ‌লো। ওর কথা‌তে আমার হঠাৎ ম‌নে পড়ল এই রে আমি তো এখ‌নো তো‌য়ে‌লে প‌ড়ে দাড়ায় আছি। ম‌নে পড়‌তেই আমি আমার দু হাত দি‌য়ে বুকের উপর দি‌য়ে ঢাকার চেষ্টা করলাম। ঢে‌কে আর লাভ নাই যা দেখার দে‌খে ফেল‌ছি ব‌লে মীম একট‌া দুষ্টু‌মি ভরা হাঁসি দি‌য়ে চ‌লে গেল। আ‌মি তাড়াতা‌ড়ি কাপড় প‌ড়ে নিলাম আম্মুর কা‌ছে গেলাম। আম্মু কে জিজ্ঞাস করলাম, দিয়া আর রু‌হি কই? আজ‌কে সকাল থে‌কে ও‌দেরকে দে‌খি নাই ‌যে। আম্মু বলল, রু‌হি ম‌নে হয় ক‌লে‌জে গে‌ছে সকা‌লে আস‌ছিল তুই ঘুম‌া‌ইতে‌ছিল দেখে ‌তো‌রে আর ডাকে নাই। আর দিয়া‌কে দেখি নাই ও ম‌নে হয় বাসায়। আমি ম‌নে ম‌নে চিন্ত‌া করলাম ‌দিয়ার আবার কি হল, শরীর খারাপ হ‌লো না তো আবার প্র‌তি‌দিন তো সকা‌লে আসি আমার সা‌থে গুতাগু‌তি শুরু ক‌রে দেয় এই সব কিছু‌ চিন্ত‌া কর‌তে কর‌তে দিয়াদের বাসায় চ‌লে গেলাম। দরজা খুলল রিসাদ আমা‌কে দে‌খেই বলল আরে ভাইয়া ভিত‌রে আস। ভিত‌রে যে‌তেই দেখলাম সেজু আম্মু সোফায় ব‌সে আছে আমি উনার কা‌ছে গেলাম উনার কো‌লে মাথা রে‌খে সোফ‌া সু‌য়ে পড়লাম। বললাম আমা‌কে তো দে‌খি ভু‌লে গেছ খবরও নাও না। সেজু আম্মু বলল, আমার ছে‌লে‌কে কি আমি ভু‌ল‌তে পা‌রি? আস‌লে একটু ব্যস্ত ছিলাম তো তাই। আমি বললাম, কি এমন ব্যস্ততা শু‌নি। উনি আমার হা‌তে একটা ছ‌বি দি‌য়ে বলল দেখ তো ছে‌লেটা কেমন? দিয়ার জন্য সম্মন্ধ্য এসে‌ছে ছেলে বিমান বা‌হিনী‌তে অফিসার প‌দে চাক‌রি ক‌রে। আমার চাচা‌তো বো‌নের ছে‌লে। ছ‌বি‌তে দেখলাম ছে‌লেটা অনেক সুন্দর কো‌নো অং‌শে ব‌লিউডের নায়‌কের ‌চে‌য়ে কম না। আমি বললাম, ছে‌লে তো সুন্দর চাক‌রি বাক‌রি ঠিক থাক‌লে দেখ‌তে পার। তো দিয়া কি ব‌লে? সেজু আম্মু বলল, ও তো রা‌জি হয়‌তে‌ছে না সকা‌লে ও‌কে বলার পর থে‌কেই ওর রু‌মে ডু‌কে ব‌সে আছে। সকালের নাস্ত‌াও খাই নাই। আমি বলল‌াম, ওর আবার কি হয়‌ছে? নাস্তা গুলো আমা‌কে দাও দে‌খি তো কি হয়‌ছে। ব‌লে নাস্তা নি‌য়ে ওর রু‌মে গে‌লাম ও দে‌খি বিছানায় ব‌সে আছে। আমি বললাম কি‌রে পাগলী কি হই‌ছে তোর হে? নাস্তা করিস নাই কেন? দিয়া কিছু বলল না ‌দে‌খি ওর ‌চো‌খে পা‌নি। আমি বললাম কি‌রে কান্না ক‌রিস কেন বল‌বি তো না‌কি? তুই তো জা‌নিস আমি কা‌রো কান্না সহ্য কর‌তে কর‌তে পা‌রি না কিন্তু তোরে কান্না কর‌তে দে‌খে আমার কি যে ভাল লাগ‌তে ব‌লে বুঝা‌তে পার‌বো না ব‌লে হাস‌তে লাগলাম। এটা শু‌নে দিয়া আমাকে মার‌তে শুরু করল। আমি বললাম আচ্ছা হা কর। দিয়া অন্য দি‌কে ফি‌রে রইল আমি জোর ক‌রে ওকে খাই‌য়ে দিলাম। আমি ও‌কে খাই‌য়ে দি‌চ্ছি আরও বাচ্চাদের মত ক‌রে খা‌চ্ছে। ও‌কে দে‌খে আমার অনেক হা‌সি ফেল কিন্তু হাসলাম না য‌দি আবার না খাই। খাওয়া‌নো শে‌ষে বললাম, চল নি‌চে চল। ওর রুম থে‌কে বের হ‌য়ে সেজু আম্মুকে দিয়াকে শু‌নি‌য়ে শু‌নি‌য়ে দুষ্টু‌মি ক‌রে বললাম দেখ‌ছো সেজু আম্মু খাই‌তে খাই‌ছে না‌কি শুধু অভিনয় কর‌তে‌ছে যে ব‌লইে দৌড় আমার পি‌ছে পি‌ছে দিয়াও দৌড়ায়‌তে‌ছে আর বল‌তে‌ছে দাড়া তুই দাড়া তু‌রে আজ‌কে যে আমি কি ক‌রি। এক দৌ‌ড়ে আ‌মি বড় আম্মু‌দের বাসায় চ‌লে আসলাম আমার পি‌ছে পি‌ছে আসি আমার চুল ধ‌রে টানাটানি শুরু কর‌ছে আমি কো‌নো রকম ওর থে‌কে ছাড়ি‌য়ে তাড়াতা‌ড়ি বড় আম্মুর পিছ‌নে গি‌য়ে লুকালাম। দিয়‌া ওখা‌নে আসতেই বড় আব্বু ও‌কে বলল কি দিয়া সকাল থে‌কে কই আছি‌লি? বড় আব্বু আর ভাব‌ীর আব্বু আম্মু থাকায় সেখা‌নে আমা‌কে আর কিছু করতে পারলো না। দিয়া গি‌য়ে মীমের সা‌থে বসল। আমি আস্তে আস্তে বাই‌রে বের হলাম দে‌খি রু‌হি ক‌লেজ থে‌কে আস‌ছে। আজ‌কে ও‌কে দে‌খে অনেক খু‌শি খু‌শি লাগ‌ছে। কা‌ছে আস‌তেই ও আমার নাক টি‌পে দি‌য়ে বলল কি হি‌রো বাই‌রে কি কর? আমি বললাম, আমার কথা রাখ আগে বল তো‌কে আজ‌কে এত খু‌শি খু‌শি লা‌গে কা? কোন পোলার ল‌গে ডে‌টিং ক‌রে আস‌তেছস? রু‌হি বলল, আরে কোন পোলার ল‌গে ডে‌টিং করব? আমি বললাম তাহ‌লে এত খু‌শি হওয়ার কারণ কি নিশ্চয় কিছু হয়‌ছে। বল আমা‌রে? ও বলল, কারণ তো একটা আছে ত‌বে এখন বলা যা‌বে না। ও আব‌ার বলল, বড় আব্বু‌দের বাসায় কে আস‌ছে নাকি এত মানুষের কথা বলার শব্দ আস‌তে‌ছে যে? আমি বললাম, হ্যা রা‌কিব ভাইয়ার শশুর বা‌ড়ি থে‌কে মীমর‌া আস‌ছে। রু‌হি বলল তাই ন‌া‌কি চল তো দেখা ক‌রে আসি। আমি রু‌হির সা‌থে আবার ভিত‌রে গেলাম। তারপর মীম আর দিয়ার সা‌থে আড্ডায় যোগ দিলাম। য‌দিও সকা‌লের ঘটনার কার‌ণে আমার এখ‌নো মী‌মের সা‌থে কথা বল‌তে লজ্জা লাগ‌ছে তাই ওর চো‌খের দি‌কে না তা‌কি‌য়ে কখা বলছি কিন্তু ও একদম স্বাভা‌বিক ভাব খানা এমন যেন কিছুই হয় নাই। কিছুক্ষন কথাবার্ত‌া ব‌লে সবাই মি‌লে দুপু‌রের খাবার খে‌তে বসলাম। ভাব‌ছিলাম মী‌মের পা‌শে বসে খা‌বো কিন্তু তা আর হ‌ইলো কই আমার দু পা‌শে দিয়া আর রু‌হি দু সিট দখ‌লে নি‌য়ে‌ছে। দিয়া‌কে আজ‌কে কেমন যেন মন মরা মন মরা দেখা‌চ্ছে। খাবার খাওয়া শে‌ষে বড় আব্বু আমা‌কে একটা কা‌জে এক জায়গাই পাঠা‌লো। সেখা‌নের কাজ শেষে ক‌রে বের হ‌তে কা‌রো সা‌থে ধাক্কা খেলাম। কার সা‌থে ধাক্কা খেলাম সেটা দেখ‌তে উপ‌রে তাকাতে দে‌খি রিশা। (পাঠকগণ রিশা‌কে ম‌নে আছে তো? ওই যে হাসপাতা‌লের নার্স ছিল) আমি বললাম, আরে রিশা তু‌মি? কেমন আছো? রিশা মুস‌কি একটা হ‌াঁসি দিল।

‌জোড়া বিবাহDonde viven las historias. Descúbrelo ahora