রিশা হাঁসি দিয়ে বলল, জিবরান না? আমি তো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? আমি হেসে বললাম, আমি ভালো ছিলাম তোমাকে দেখার পর আরো ভালো হয়ে গেলাম। রিশা হাসতে হাসতে বলল, আচ্ছা ! তাই নাকি? আমি বললাম, হ্যা! তাই। তা তোমার বাসা কি এই দিকে নাকি? ও বলল, হ্যা একটু সামনেই। তুমি এখানে কি কর?
- আমি একটু কাজে আসছিলাম এই অফিসে। কাজ শেষ এখন চলে যাচ্ছিলাম। তুমি কোথায় যাও? (আমি)
- ওহহ আচ্ছা। আমি একটু বের হলাম কিছু প্রয়োজনীয় কেনার ছিল তাই সামনের সুপারশপে যাচ্ছিলাম। (রিশা)
- ওহহ। আচ্ছা তোমার থেকে আমার একটা কথা জিজ্ঞাস করার ছিল।
- বাপরে! আমার কাছে কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল? তাও আবার তোমার! কি সৌভাগ্য আমার!!! আচ্ছা বল কি কথা। (রিশা)
- আমি যখন হাসপাতালে ছিলাম তখন হঠাৎ একদম কোথায় হারায় গেছিলা? যে আর একবার দেখতেও আসোনি?
রিশা একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকালো। তারপর বলল,
- এমনেই! ছুটিতে ছিলাম।
- মনে তো হয় না বলো তো কি হয়ে ছিল?
- আরে কিছু না বাদ দাও ওই সব। তোমার বউ কেমন আছে? (রিশা)
- আমার বউ??? বিয়ে ও তো করি নাই বউ আসবে কোথা থেকে?
- কি!!! দুস্টুমি করতেছো না আবার? (রিশা)
- আরে না সত্যি!! তোমাকে কে বলল যে আমি বিবাহিত?
- তোমার বউ বলছে! (রিশা)
- আমার বউ কোথায় পাইলা?? আশ্চার্য!!
- কেন দিয়া তোমার বউ না? (রিশা)
- কিহ?? দিয়া? ও তো আমার চাচাত বোন ! তোমাকে কে বলল যে দিয়া আমার বউ??
- দিয়া বলছে। ও যদি তোমার বউ না হয় তাহলে ও আমাকে এই রকম কেন বলল? (রিশা)
- ওইটা তো আমার মাথায়ও ধরতেছে না হয়ত দুষ্টুমি করছে। আর কিছু বলছে?
- হতে পারে তবে দুষ্টুমি তো আমার কাছে মনে হয় নাই। আর বলছে তোমার কেবিনে না যাইতে তাই আমি যায়নি। (রিশা)
- কি? দিয়া বলছে তোমাকে আমার কেবিনে না যাইতে? আমার তো মাথায় কিছু ধরতেছে না। আজকে বাসায় গেলে ওর সাথে কথা বলা লাগবে ও কেন এই রকম করল।
- আমার মনে হয় ও তোমাকে পছন্দ করে। এই জন্যই হয়ত তোমার কেবিনে আমি বারবার যাচ্ছি সেটা ওর পছন্দ হয় নাই। আর জানো তো মেয়েরা আর যায় করুক যাকে ভালোবাসে তাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারে না।
(রিশা একটু হেসেই কথা গুলো বলল)
- কি বল এগুলা দিয়া আমার চাচাত বোন আমি কখনো ওকে নিয়ে এর বাইরে কিছু চিন্তাও করি নাই।
- তুমি না করলেও দিয়া করে ফেলছে। (বলেই আবার হাসলো রিশা)
- না। আমার মনে হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে! নিশ্চয় ও দুষ্টুমি করছে তোমার সাথে। আমি আজকে বাসা গেলে ওর সাথে কথা বলব।
- বলে দেখতে পারো। দেখবা আমার কথায় ঠিক। (রিশা)
- ঠিক আছে।দেখবো। তোমার নাম্বারটা দাও রাতে তোমাকে ভুল প্রমাণিত করব দেখবা।
- আমি ভুল প্রমাণিত হলে তোমার থেকে খুশি আমিই বেশি হব। (রিশা কেমন যেন একটা হাসি দিল)
- কেন?
- সেটা না হয় ভুল প্রমাণিত হলেই বলব। (রিশা)
তারপর রিশা থেকে নাম্বার নিয়ে ওকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম বাসায়। রিশার কাছ থেকে চলে আসলাম ঠিকি কিন্তু ওর বলা কথা গুলো আমার মাথায় ঘুরছে রিশার কথায় কি ঠিক দিয়া কি আমাকে পছন্দ করে তাই বলেই কি ওকে বিয়ের কথা বলাতে ওর মন খারাপ?? আমার মাথায় কিছুই আসছে না। যাই হোক বাসায় এসে বড় আব্বুকে উনার দেয়া কাগজপএ গুলো উনাকে বুঝিয়ে দিলাম। বড় আব্বুদের ঘরে দেখলাম ভাবীর আম্মুর সাথে আমার আম্মু, সেজু আম্মু আর ছোট আম্মুরা বসে কথা বলছে। আমি সেজু আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, সেজু আম্মু দিয়া কোথায়? সেজু আম্মু বলল, ওতো মনে হয় মীমকে নিয়ে ছাঁদে গেছে। আমি আর কোনো কথা না বলে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি সেখানে দিয়ার সাথে মীম, রুহি আর রিশাদও আছে ওদের সামনে তো আর দিয়ার কাছে রিশার কথা বলতে পারি না তাই ওই কথাটা আপাদতের জন্য চেপে গেলাম। বললাম কিরে তোরা এখানে কি করিস? রুহি বলল, মীমকে নিয়ে ছাদে এলাম দেখাতে। তারপর সেখানে ওদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে সবাই নিচে চলে এলাম। সন্ধার একটু আগে ভাবীর আব্বু-আম্মু আর মীম চলে গেল। যাওয়ার আগে মীমকে বললাম চলে যাবে তাহলে? আবার কবে আসবে? মীম বলল, হ্যা। যবে তুমি আনবে (বলে একটা হাঁসি উপহার দিল এ যেন এক রহস্যময় হাসি)।
ওর উওরটা আমি ঠিক বুঝলাম না কি বলতে চাই মীম? মীম কি আমাকে পছন্দ করে? যদিও আমি মীমকে যেদিন প্রখম দেখি সেদিন থেকেই পছন্দ করি কিন্তু ওকে বলার মত সাহস পাইনি কারণ একে তো ভাবীর বোন, মীমকে বললে ও যদি কথাটা স্বাভাবিকভাবে না নিয়ে ভাবীকে নালিশ করে? তারপর বাসায় জানা জানি হবে। আর বাসায় জানা জানি হলে আব্বুকে বিচার দিবে আব্বুর কাছে বিচার গেলে আমি শেষ কারণ আমার আব্বু যে রাগি আমার তো ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবে। তাছাড়া মীমকে না বলতে পারার আরো একটা কারন আছে ওটা হলো মীমকে দেখে মনে করতাম ওর বয়ফ্রেন্ড আছে তাই ওকে কখনো বলা হয় নাই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না বলে ভুল করেছি আবার এ ও হতে পারে হয়ত মীম কখাটা এমনিই বলেছে আমি ভুল বুঝছি। মীম চলে গেল বড় আম্মুরা সবাই ঘরে চলে গেল। রুহি আগে উপরে চলে গেছে। আমার সাথে দিয়া উপরে উঠছিল। আমি ওকে বললাম, একটু ছাঁদে আয় তোর সাথে কিছু কথা আছে। দিয়া জিজ্ঞাসা সুরে বলল, কি কথা? আমি বললাম, আগে ছাঁদে চল। দিয়া আমার পিছন পিছন ছাদে আসলো। আমি দিয়াকে বললাম, তুই রিশাকে কি বলেছিলি? কথাটা শুনে হঠাৎই দিয়ার মুখ ফেকাসে হয়ে গেল বলল, কো. কো. কোন রিশা?
- রিশাকে চিনস না? ওই যে আমি যে হাসপাতালে ছিলাম সে হাসপাতালের নার্স ছিল। কি বলেছিলি ওকে তুই?
- কক ই? কি বলছি কিছু তো বলি নাই।
- কিছু বলিস নাই? বলিস নাই যে তুই আমার বউ?? কেন বলেছিলি এটা? আবার নাকি বলেছিলি আমার কেবিনে না আসতে??
দিয়া চুপ করে আছে কিছু বলছে না। আমি আবার বললাম কি হলো বল? হঠাৎ দিয়ার চাপা কান্নার শব্দ এলো কানে। চারপাশে সন্ধার অন্ধকার নেমে এসেছে।ছাঁদে আমি আর দিয়া ছাড়া আর একটা কাকপন্খিও নেই। ছাদের লাইটাও দেয়া হয় তাই দিয়ার মুখটা আবছা আলোয় পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ আমি কিছু বুঝে উঠার আগে দিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো চাপা কান্নার বেগটা আরে বাড়ালো। তারপর বলল, কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবি। তোমার সব কিছুই আমার কাছে ভালো লাগতে শুরু করে আর এই ভালো লাগাটা বাড়তে বাড়তে সেটা ভালোবাসাতে পরিনত হয়েছে। ওকে আমি অনেক করে ছাড়াতে চাইলাম এই ভয়ে যে কেউ দেখে ফেললে পরে সমস্যা হয়ে যাবে কিন্তু দিয়া এত শক্ত করে আমাকে ধরে আছে যে ওকে ছাড়াতে পারলাম না। ও আবার বলতে লাগলো তোমাকে অনেক করে বুঝাতে চাইছি কিন্তু তুমি বুঝনি। সেদিন যখন তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল তখন আমার ইচ্ছা তোমার কাছে উড়ে যায়। আর যখন রিশা নামের মেয়েটা তোমার কাছে বারবার আসছিল আমার তখন অসহ্য লাগছিল ওই মেয়েকে তাই ওকে বলেছি যে আমি তোমার বউ!!
ČTEŠ
জোড়া বিবাহ
Romanceএকই বিয়ের আসরে আকস্মিক ভাবে এক বরের সাথে দুই বধুর তিন পরিবারও অনুমতি নিয়ে বিবাহ হওয়ার কাহিনি নিয়ে লিখা। এটা আমার লিখা প্রথম বড় গল্প। আশা করি পড়ে মজা পাবেন। দয়া করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।