ছুটির পরে যায়েদ, অনুভব আর অভ্র দাঁড়িয়ে আছে উর্মিদের জন্য। ছুটি হয়ে গেলো ৫ মিনিট, কে জানে এখনো কী করছে ক্লাসে। অনুভব মাঠে পায়চারি করছে। একটু বাদেই উর্মিকে দেখতে পেলো সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে। ব্যাগটা এককাধে ঝুলিয়ে, হেসে হেসে নামছে। পিছনে তিন্নি আর জারিনও হাসছে। অনুভব মাঠের আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে গোল হয়ে হয়ে। আর উর্মি যে সুন্দরি কিছু কিছু ছেলে তাকিয়েও আছে। অনুভবের যা লাগছিলো, হায়রে যদি কোনো সিনিয়রের চোখে পড়ে যায়। তাহলে আমার প্রেম তো দরজা,জানালা,চাল সবজায়গা দিয়ে একসাথে বেড়িয়ে যাবে। ক্লাস থেকে নিশ্চিত কেউ উর্মির পেছনে ঘুরবে না। কিন্তু কোনো সিনিয়র যদি প্রোপোজ করে দেয়? আর উর্মি যদি হ্যা বলে দেয়? উহু,যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। এসব ভাবছে, আর দাত দিয়ে নখ কাটছে অনুভব। তিন্নি এসে বললো, " কীরে হারামাজাদা? নখ খাচ্ছিস কেনো? " তিন্নির পেছনে উর্মি আর জারিন দাঁড়ানো। অনুভব কিছু না বলেই যায়েদ আর অভ্রকে ডাক দিলো। ওরা আসতেই অনুভব অভ্র আর যায়েদকে উর্মি আর জারিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর উর্মিকে বললো, " উর্মি তোমরা ওদের সাথে কথা বলো। আমি আর তিন্নি একটু আসছি! " উর্মি মাথা নেড়ে হ্যা বললো। অনুভব তিন্নিকে বললো," এদিকে আয় কথা আছে "। তিন্নি কপাল কুচকে বললো, " কী কথা? দেখ একদম ক্লাসে তোর সোনামনির সাথে কী কথা হইছে ওসব জানতে চেয়ে এখন আমার মাথা খাবি না। যা বলার একদম বাসায় গিয়ে ধীরেসুস্থে বলবো! "
- " উফ, তুই এতো প্যাচাস কেনো? আয় না বাল! "
অনুভব আর তিন্নি উর্মিদের থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো। যেখান থেকে ওদের কথা উর্মিরা শুনতে পাবে না। তবুও অনুভব তিন্নিকে টেনে আরো দূড়ে নিয়ে গেলো। তিন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবার সময় উর্মি জিনিসটা লক্ষ্য করলো। যতই অনুভবের চাচাতো বোন হোক না কেনো, তবুও অনুভব তিন্নির হাত ধরায় উর্মি ভেতরে ভেতরে জ্বলছিলো।অভ্র আর যায়েদ যথেষ্ট ফ্রি হয়েই কথা বলছে উর্মি আর জারিনের সাথে। কথা বলে বুঝলো ওরাও বেশ ফ্রি। কথা বলার মাঝে মাঝেই উর্মি আড়চোখে অনুভব আর তিন্নির দিকে তাকাচ্ছিল ব্যাপারটা লক্ষ্য করে অভ্র। কথায় কথায় উর্মি অভ্রকে জিজ্ঞেস করে, " তা তোমরা প্রেম করো কে কে? " অভ্র হাততুলে বললো, " আমি করি! "। যায়েদ জারিনের দিকে তাকিয়ে বললো, " আমি করি না! "। জারিন বুঝলো যে যায়েদ ওকে বুঝিয়েই বলেছে। পাশ থেকে অভ্র খোচা মেরে বলে, " এখন সিঙ্গেল কিন্তু এর আগে দুইখান করছে! " সাথে সাথেই যায়েদের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। জারিনও একটু অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় যায়েদের দিকে। যায়েদের যেনো শ্বাসই আটকে গেছে অভ্রর খোচা খেয়ে, অভ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে " কিন্তু এর আগের প্রেম বেশিদিন ছিলো না। আর ব্রেকাপ যায়েদ করে নী। ছোটকালের প্রেম তো, তাই বেচারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে গেছে! " অভ্র কথা বলেই হেসে দেয় সাথে জারিন আর উর্মিও হেসে দেয়। অভ্রও হাফ ছেড়ে বাচে। যায়েদ কৃতজ্ঞতাবোধের দৃষ্টিতে তাকায় অভ্রর দিকে। উর্মি অভ্রকে বলে, " অনুভবের কী হাল? তার প্রাক্তন কতজন? " উর্মি অনুভবের চাহনি,আচরন আর হাব-ভাব দেখেই বুঝেছে যে অনুভব এখনও প্রেম করে নী। তবুও ডাবল শিওর হবার জন্য জিজ্ঞেস করলো। অভ্র হেসে বললো, " আরে ও এখনো কোনো প্রেম করে নাই। ভাই আমার একদম ফ্রেশ প্রোডাক্ট! " একসাথে সবাই হেসে দেয়। উর্মি বারবার আড়চোখে অনুভব আর তিন্নিকে দেখছে আর ভাবছে কী এমন কথা বলছে এতোক্ষন? যায়েদ জারিনের সাথে টুকটাক কথা বলছিলো। জারিনকে খুটিয়ে যথেষ্ট ইনফো বের করছে যায়েদ। উর্মি সেটা ভালোই বুঝতে পারছে, কিন্তু অনুভব হাদারামটা কথাই বলতে আসে না। আবার আসছে প্রেম করবে। কী ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে থাকে, এজন্যই এতোদিন সিঙ্গেল ছিলো এই বান্দা। এসব ভাবতে ভাবতে উর্মি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অনুভবের দিকে। অভ্র ব্যাপারটা লক্ষ্য করে মুচকি হেসে বলে, " কী উর্মি? অনুভবকে কীছু বলবে নাকি? ডেকে দিবো? " উর্মির ভাবনায় ছেদ পরে আর খানিক লজ্বাও পায়। উর্মি হেসে বলে, " আরে না না, আমি তো তিন্নির দিকে তাকিয়ে ছিলাম! "
অভ্রও ভনিতা করে বলে," ওহ আচ্ছা! "এদিকে অনুভব তিন্নির মাথা চিবোচ্ছে। এই বলে বলে যে উর্মিকে যদি কোনো সিনিয়র প্রোপোজ করে তাহলে কী হবে? আর তিন্নি বুঝিয়েই চলেছে যে তুই এতো চিন্তা করিস না। উর্মি এতোটা সস্তা প্রকৃতির না। ও হুট করেই হ্যা বলে দিবে না, আর ওর সাথে কথা বলে যা বুঝেছি ও তোকে কিছুটা পছন্দ করে। তোর স্বমন্ধ্যে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছিলো। আর আমি সব পজিটিভলি বলেছি। কিন্তু অনুভব নাছোড়বান্দা সে বার বার বলছে, তুই উর্মিকে বলবি যে। সিনিয়রদের সাথে প্রেম করে লাভ নেই। আর সিনিয়রদের সাথে প্রেম করার কুফল বলবি যাতে ও সিনিয়রদের সাথে প্রেম করার কথা স্বপ্নেও না ভাবে। এসব নিয়েই তর্কাতর্কি করছে ওরা। অবশেষে তিন্নি বললো, " হু আমি সব বুঝিয়ে বলবো। এখন যতক্ষন ক্যাম্পাসে আর রাস্তায় তোর সাথে থাকবো ততক্ষন আমায় জ্বালাবি না। যাই কথা থাক সব বাসায় গিয়ে বলবি। আর যদি বিরক্ত করিস তাহলে আমি ওর কানে এমন সাপের বিষ ঢালবো যে ও তোর সাথে প্রেম করা তো দূড়ের কথা তোর দিকে তাকাবে অবধি না। বলবো তোর ক্যারেক্টার লুজ, তোর জন্য তোদের বাসায় কোনো কাজের বুয়া অবধি কাজ করে না! "
অনুভব তো রিতিমতো কারেন্টের খুটির উপর উঠে গেছে তিন্নির এই উদ্ভট আর বানোয়াট অপবাদের হুমকি শুনে। অনুভব বুঝে গেছে তিন্নিকে আর ঘাটানো যাবে না, " আমি বাসায় যাবার আগে তোর সামনে শ্বাস অবধি আস্তে আস্তে নিবো। তবুও আমার চরিত্রটাকে এভাবে সোডা মেরে দেবার ভয় দেখাইস না বইন! "
তিন্নি সাথে সাথে অনুভবের গাল টেনে বলে, " এই না হইলে আমার বলদটা। এভাবেই আমাকে ভয় পেয়ে চলবি, তুই যখন এভাবে ভয় পেয়ে যাস। নিজেকে একদম নেত্রি-নেত্রি মনে হয়! "
অনুভব অসহায় পরিস্থিতিতে পড়ে বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে। অন্যসময় তিন্নি এসব কথা বললে তিন্নির সব চুল টেনে খুলে আবার তিন্নির মাথায় লাগিয়ে দিতো অনুভব। কিন্তু এখন সে উপায় নেই। পরিস্থিতির চাহিদা আর চাপে স্যান্ডুইচ হয়ে গেছে বেচারা!চলবে!
#thetanvirtuhin
ESTÁS LEYENDO
ত্রিকোনোমিতি
Romanceজীবনকে যত সহজভাবে দেখবেন জীবন ঠিক ততটা সহজ হবে। ভালোবাসা ব্যাতিত অন্যকিছু দিয়ে সম্পর্ক বিচার করতে যাবেন না। সময় আর নিয়মের উর্ধে কেউ নয়, আজ আপনি যাকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন কাল সে আপনাকে আগলে রাখার ক্ষমতা নিয়ে ফিরে আসবে। আজ আপনি যাকে উপহাস করছেন কাল সে আফ...