পর্ব ১

2 0 0
                                    

একঝাঁক বিরক্তি আর উত্তেজনা নামক দুটো বিপ্রতীপ অনুভূতি নিয়ে শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বের হলো তাওহীদ। শুক্রবার তার বিশ্রামের দিন। সারা সপ্তাহে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর এই একটা দিন সে পূর্ণ অবসর নিয়ে সারাদিন বাসায় থাকে। এটা আলসেমি না,এটা প্রাপ্যতা। সারা সপ্তাহে ক্লাস, পড়াশোনা, অফিস, থিসিসের মাঝে দুদণ্ড বসে থাকার সময় নেই। কিন্তু নানাভাবে ম্যানেজ করে শুক্রবারটা ওর শিডিউল ক্লিয়ার রাখে তাওহীদ। এদিনটা শুধু ঘুম, আর  ঘুম আর শুধুই ঘুমানোর জন্য। তাই বিভিন্ন সময়ে অনেকে অনেক ছলে বলে কৌশলে শুক্রবারে ওকে বাসা থেকে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারেনি। শুক্রবার তাকে হাত-পা ধরে টেনেও বাসা থেকে বের করা সম্ভব না। একদম না! 

   তবু আজ শুক্রবার, সকাল মাত্র ৯টা, আকাশে মেঘের ঘনঘটা .. আর সে কোনোরকমে এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে এখন রাস্তায় রিকশা খুঁজছে। মাকে বলে এসেছে ফিরতে বিকেল হবে। মিনিট দশেক পর একটা রিকশা পেয়ে রওনা দিলো সে। আকাশের দিকে একঝলক তাকিয়ে কপাল কুচকে গেল তাওহীদের । মেঘগুলো ধূসর থেকে এখন কালো বর্ণ ধারণ করেছে, চারপাশ থেকে ঘনিয়ে এসে একটা বড় এলাকা জুড়ে অন্ধকার করে ফেলেছে আকাশটা। আকাশের এরকম সাজগোজ করা একদম পছন্দ না তাওহীদের। যেকোনো মুহূর্তে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামতে পারে। ছাতাটা সাথে নেয়া উচিত ছিলো, বিরবির করে স্বগতোক্তি করলো সে।

  আজকে সকাল সকাল বেরোবার কারণ তার ছোট বেলার বন্ধু শুভ্র। আজ শুভ্র আর ঐশির অ্যানিভার্সিরি। গত সপ্তাহের  ওদের এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানটা যেন কম ছিল তাওহীদের জন্য যে পরদিন নিজের কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা খেতে ওদের অ্যানিভার্সিরিতে জোর করে যেতে হচ্ছে। বার্ষিকীটা শুভ্রর হলেও তাওহীদ সেখানে যাচ্ছে শুভ্রর বদলে প্রক্সি দিতে। হাও ফ্যাসসিনেটিং! কারণ শুভ্র এত দিন রেখে আজ সকালেই তার মাকে নিয়ে নানু বাড়ি পাড়ি জমিয়েছে।

যাওয়ার আগে সকাল সাতটার দিকে তাওহীদের কাছে এসে ঐশির জন্য কেনা গিফট টা রেখে গেছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সাতটার দিকে তাওহীদ থাকে দিনের গভীরতম ঘুমের মধ্যে নিমজ্জিত। এ সময় ফোন করে তাওহীদ কিছু বলার আগে ওপাশ থেকে শুভ্র ত্বরিত গলায় বলে ওঠে,
‘নিচে আয়, এমারজেন্সি!’
বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে যেমন আচমকা ফোন করেছিল তেমন আচমকাই ফোন কেটে দেয়। তাওহীদ কলব্যাক করতেই পারতো তবে সে ভালো করেই জানে এখন ফোন ধরবে না শুভ্র। চোখ কচলাতে কচলাতে নিচে গিয়ে দেখা গেলো ধবধবে সাদা শার্ট আর ফেডেড জিন্স পড়া হালকা-পাতলা গড়নের বিশাল লম্বা একটা ছেলে আরাম করে বসে দাড়োয়ানের কোয়ার্টারে দাড়োয়ানের সাথে চা খাচ্ছে। তাওহীদকে দেখে কাপটা রেখে হাতে ছোট্ট একটা ব্যাগ নিয়ে মাথার ঝাকড়া চুলগুলোতে হাত চালাতে চালাতে এগিয়ে এলো ছেলেটা।

ঘাসফুল Where stories live. Discover now