পর্ব ২

0 0 0
                                    

 

মিষ্টিকে যখনই কেউ জিজ্ঞেস করে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহর কোনটা, মিষ্টি এক কথায় উত্তর দেয় রাজশাহী। প্রতিবার। না প্যারিস, না নিউইয়র্ক, না ভেনিস, না মাদ্রিদ, না ভ্যানকুভার, না লন্ডন। রাজশাহী। অবশ্য এটা আলাদা কথা যে জন্ম নেওয়া থেকে শুরু করে হাঁটতে শেখা, দাঁত ওঠা, কথা বলা সহ জীবনের যাবতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ স্টেজ মিষ্টি রাজশাহীতেই পার করে এসেছে। তবু মিষ্টি নিশ্চিত যে ওকে যদি পুরো দুনিয়া ঘুরতে দেওয়া হতো তবুও ও ফেরত এসে বলতো যে ‘না। রাজশাহীই সবচেয়ে সুন্দর।’ তা সে যতদিন এর জন্যই রাজশাহী থেকে দূরে থাকুক না কেন।

এই যেমন অ্যাডমিশন কোচিং করার জন্য বাবা একরকম জোর করে ওকে ঢাকায় ফুপুর বাসায় পাঠাচ্ছে। বেজার মুখে বিছানার ওপর গুছিয়ে রাখা বাকি কাপড় গুলো ব্যাগে ভরা শুরু করলো মিষ্টি।

‘একা এতদূর রাস্তা কিভাবে যাবে আমার এত ছোট মেয়েটা! এখান থেকে এখানে হলে একটা কথা ছিল। ও যাচ্ছে এখান থেকে ঢাকা,আড়াইশ কিলোমিটার দূরে।’ রান্নাঘর থেকে মিষ্টির মা শিরিনের গলার আওয়াজ শোনা গেল।

‘একা তো আমি যেতে বলিনি কৌশিকের মা। সে নিজেই একা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমার কি করার আছে?’ ডাইনিং রুম থেকে এবার আতাহার আলমের গম্ভীর গলা ভেসে এলো।

‘সে অভিমান করে বললো আর তুমিও অমনি একা ওকে পাঠিয়ে দেবে? ছেলেটাকেও জোর করে সাত সমুদ্র পারে পড়তে পাঠিয়েছো। সেজন্য আজ দুইবছর ধরে আমার ছেলে ছুটিতেও বাসায় আসে না। এখন মেয়েটাকেও একইভাবে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছো। ওদের একবারও জিজ্ঞেস করেছো ওরা কি করতে চায়,কোথায় থাকতে চায়?’ মায়ের গলায় উত্তেজনা বাড়তে থাকলো।

‘যেদিন ওরা নিজেদের ভালো মন্দ বিচার করা শিখবে সেদিন ওদের কাছে কাউন্সেলিং নেবো আমি। তার আগ পর্যন্ত ওদের জন্য কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা আমাকেই বিচার করতে দাও।’ দৃঢ় গলায় নিজের বক্তব্য জানিয়ে দিলেন বাবা।

হুম। মিষ্টি নিজের রুম থেকে বাবা-মায়ের বিকালের বিতর্ক এপিসোড শুনতে শুনতে গোছানো শেষ করে খেয়াল করলো ব্যাগে আর জায়গা নেই। কাপড়চোপড় আর বইপত্র দিয়েই ব্যাগ ভরে ফেললে মিষ্টির জার গুলো নেবে কোথায়! মিষ্টির জার না নিলে ক্রাইসিসের সময় মিষ্টি করবে কি! মিষ্টি ছাড়া মিষ্টির একবেলাও চলে না।

ঘাসফুল Where stories live. Discover now