সবাই বলে, "সময় নাকি পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট করে দেয়"। আমার নিজস্ব মত একই কথা বলে। কিন্তু কলকাতা ক্ষেত্রে আমার মত কিন্তু উল্টো পুরাণ। আমার মনে হয় কলকাতা ভিন্ন, কলকাতা সৃষ্টি আদিকাল থেকে যেমন ছিল ঠিক বিংশ শতাব্দীর পরেও ঠিক তেমনি আছে। শুধু এখানকার মানুষ পাল্টে গেছে, তাই কলকাতা নিজেকে পাল্টে নিচ্ছে বারবার নিজের অজান্তেই।........!
হঠাৎ গায়ের উপর কিছু একটা উড়ে এসে পড়তে "বাস্তবে" ফিরে এলাম।
প্রিয়া টেবিলে পড়ে থাকা কাজের ফাইল টা আমার দিকে ছুঁড়ে মেরেছে।
প্রিয়া: "তুমি কোন জগতে ছিলে প্রিয়! নাকি অন্য কারো বিছানায় নিজেকে খুঁজছিলে।"
আমি জানি কথাটা রাগের চোটে বলেছে। তাই বিশেষ কিছু না বলে মেঝেতে পড়ে থাকা ফাইল টা উঠিয়ে সেটাকে বগলদাবা করে ধরে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। মুখে কালো মেঘ যেন থমথম করে রয়েছে। তারই অজ্ঞাত কারণে বোধহয় প্রিয়ার দু চক্ষু দিয়ে বজ্রপাতের সহিত এই অগ্নিবর্ষন। যতটা সম্ভব শান্ত চোখে আমার মনের মানুষটির চোখে চোখ রাখলাম।
প্রিয়া: "প্রিয়দর্শিনী, কিছু বলবে নাকি আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে। জান যে, তোমার ওই কালো ঘন চোখ আমায় অবস করে তাই ওভাবে তাকিয়ে আছো। কিন্তু তোমার কোনো ফাঁকি আজ কাজে আসবে না।"
যাইহোক, এ যাত্রায় বাঁচলাম, কিন্তু আমার পুরো নাম যখন উচ্চারণ করছে তখন কিঞ্চিত কিছু শুনতেই হবে।
বললাম," হুম, বলো , এবার এই অধম কী ভূল করেছে।" (ভাই, যতই দামি হোকনা বাবু, বউ-এর কাছে সবাই কাবু!!! আবার বউ যদি অফিসের "বস " হয়!)
প্রিয়া চোখের ইশারায় আমার বগলদাবা করে ধরে রাখা ফাইলটা চাইলে, আমি দুষ্টুমি করে এমনভাবে ফাইলটা দিলাম যাতে আমার হাত প্রিয়ার হাতের সংস্পর্শে আসে।
আর এর পরের প্রতিক্রিয়া আমার জানা। প্রিয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো আর অসাবধানতা বশত ফাইলটা হাত থেকে টেবিলের ওপর পড়ল, ফ্যানের দমকা হাওয়া ফাইলের একটার পর একটা পাতা ওল্টাতে থাকে।
প্রিয়া চোখ বন্ধ করা অবস্থা থেকেই হাত আর চোয়াল শক্ত করে বলে, " তোমাকে বারবার বলেছি, অফিসে তুমি কোন রকম ভাবেই প্রলোভন দেখাবেনা। আমি এখানে তোমার 'বস' "
আমি (মুচকি হেসে যতটা সম্ভব করুন সুরে): " আরে সরি বাবা ! আমি কি ইচ্ছে করে করেছি। এবার বলো কাজে কি ভূল হয়েছে।"
প্রিয়া মুখ বাঁকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল," তোমাকে বলা হয়েছিল গত দুমাসের সেনসেক্স ট্র্যাক করতে.................."
এ অনেক বকবক করবে এরই মাঝে আমাদের পরিচয় পর্ব চুকিয়ে নেওয়া যাক।
আমি প্রিয়দর্শিনী রায়, আর যে একটু আগে আমি তোমার 'বস' বলে চেঁচাছিলেন তিনি প্রিয়া, পদবীর দরকার নেই দুদিন পর আমারটাই বসবে। আমাদের নামের মিল থাকলেও মনের মিল খুব গাঢ় এমনটা একদম ভাববেন না। সবসময় ঝগড়া হয় এমনো না। কিন্তু রাতের পর রাত একে অপরের কাঁধে মাথা রেখে খোলা ছাদের নিচে কাটাতে ওস্তাদ।
আমি মফস্বল এলাকার প্রাণী, কাজেই সব বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান না থাকলেও বাবার সাথে চায়ের আড্ডায় প্রায় বলে থাকি," ধুসসস্, এদেশের আর কিছু হবে না।" আর মা রান্নাঘর থেকে বলে ওঠে,"তুমি মেয়ে মানুষ তুমি দেশের ভালো কি বোঝ"
মা-রা এরকমই হয়।
গুন বলতে বাবা খুব আঁকতে পারতেন, কথাই আছে না রক্ত কথা কয়। আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, বাবার মতো ভালো আঁকতে না পারলেও, অবাক করার মতো ক্ষমতা রাখি।
এই আঁকার জন্যই প্রিয়া পেয়েছি। তাই আঁকা কে কোনো দিন হাতছাড়া করিনি।
ছোট থেকেই পড়াশোনাই কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। ক্লাসের শেষ বেঞ্চের মালকিন আমি, পড়ার বই-এর উপর সবদিনই ব্যোমকেশ বক্সী ছিল। তবে ৩৩ টা গল্প পড়তে ৩৩ বছর না লাগলেও ২০ বছর পর বাবা জেদ ধরলেন যে ডাক্তার হতে হবে। ইচ্ছে না থাকলেও জোর করেই কলকাতা ই যেতে হলো ভালো শিক্ষার আশায়। কিন্তু কখন যে কলকাতাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানিনা। এক বছর কোচিং নিয়েও NEET লাগলো না। এবার শুরু হলো বাড়ির গঞ্জনা দেওয়া। মা তো বিয়ের কথা পর্যন্তও ভেবে বসলেন। কিন্তু বাবা বললেন আবার NEET দিতে। কিন্তু কেউ জানতে চাইলো না আমার কি ইচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ডিপ্রেসন এবং শেষে নেশা। ..........!
ফাইলটা টেবিল এ রাখার আওয়াজে আবার সম্বিত ফিরে পেলাম।
"প্রিয় তোমার ভুল গুলো ধরতে পারলে ?" বললো প্রিয়া।
আমি ছোট্টো ভাবে সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম, দরজার হাতলে হাত রাখতেই প্রিয়া বললো," যাওয়ার সময় অপেক্ষা করবে, একসাথে বাড়ি যাবো।"
আমি হুঁ বলে কেবিনের দরজা বন্ধ করে চলে এলাম।
আমি আমার কেবিন এসে রুম টাকে ভালো দেখতে লাগলাম, চেয়ারটা ঠিক টেবিলের পাশেই রাখা। আমি চেয়ার এ বসে টেবিলে পা রাখলাম। চোখ বন্ধ করে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার কল্পনার জগতে পাড়ি দিলাম।......
"ধুস রোজ রোজ সকালে উঠে কোচিং, মুড টাই নষ্ট করে দেই।" ,বিছানার টাইম ক্লোক টা দেখে নিজের অজান্তেই মন বিরহ সুর শুনল।
মনে ঠিক করে ফেললাম আজ নো কোচিং।
মেসের সবাই কোচিং যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো যাবো কিনা, আমি শুধু না সূচক মাথা নেড়ে বাথরুম এ চলে গেলাম।
স্নান পর্ব চুকিয়ে নিচের কাকার কাছে চপ মুড়ির খাতিরে নামতে হলো নীচে। অর্ডার দিয়ে ফাঁকা চেয়ারে বসলাম, কাকা মুড়ি ট্রে টা নিয়ে আসার সময় কেউ একজন হন্তদন্ত হয়ে আসার জন্য কাকার সাতে ধাক্কা খেয়ে ঘুগনীর বাটিটা আমার শার্ট ওপর পড়লো। কাকা ভয়ে চোখ বুজে ফেললেন। ক্যাফেতে তখন পিনপতন নীরবতা গ্রাস করলো।
“disgusting!” আর কিছু বলার আগেই মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে টিস্যু পেপার বের করে বললো,”sorry, sorry it’s my fault, যদি অসুবিধে না থাকে তাহলে ক্লিন করে দিই”
এবার আমি তার মুখের দিকে তাকালাম, সব কিছুই যেনো স্লো মোশানে হয়ে গেলো.......!
তার চোখ চঞ্চল শালিকের বেশে যেনো পাখনা মেলতে চাই, চাই কারো কাছে ধরা দিতে! কিন্তু আমি পারবো কি ধরতে?
ঠোঁট যেন রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা শহরে তার যুগলের ওঠা নামার ছন্দে।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা এর থেকে ভাল লাইন আছে কিনা জানা নেই, কিন্তু আমার মনে হয় এর থেকে ভালো আরো লেখক লিখতে পারতেন কিন্তু তিনিও হয়তো আমার মতো চুলেই হারিয়ে গিয়েছিলেন। আমার ঘোর করলো তার স্পর্শে বললো, “কি হলো খারাপ করে ফেললাম বুঝি আপনার দামী জামা”
আমি এবার অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, “না না ঠিক আছে এরকম তো প্রায় হয়। নতুন কিছু নয়”।
পাশ থেকে দোকানি কাকু হা করে দেখতে লাগলো।
আর আমি আরো স্নায়বিক হয়ে পড়লাম, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হতে শুরু করলো। আমি দ্রুত তার হাত থেকে টিস্যু নিয়ে বললাম, “ঠিক আছে আমি করে নিচ্ছি”।
সে তখন তার ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে আমার হাতে দিলো, “কোনো সমস্যা হলে একবার ফোন করো”।
আমি শুধু হু দিলাম।
তারপর আমি ক্যার্ডটাই চোখ রাখলাম.....
Union trading market prvt limited.
Marketing director- Ms.Priya (পদিবী উহ্য থাকলো)
Phone- +918967*****
আমি কার্ডটা পকেটে রাখলাম সামনে দেখি সে নেই। সঙ্গে সঙ্গে কিসের নিঃসঙ্গতা যেনো আমায় গ্রাস করলো। এদিক ওদিক তাকাতে দেখে দোকানি কাকা বললেন, “চলে গেছে”।
আমি (অবাক হয়ে): “মানে?”
কাকা: “তুমি যাকে খুঁজছো সে তার টিফিন নিয়ে চলে গেছে, আমার পাকা খদ্দের সে ওর বাপের বিরাট টাকা সেই জন্য.........
কাকার কথা গুলো তখন অনেক দূর থেকে আসা কোনো শব্দের মতো লাগছিলো।
আমি কাকার কথা শেষ না শুনেই আমার রুমের দিকে পা চালিয়ে দিলাম।
রুমে আসতে না আসতেই শত চিন্তা টোপ ফেললো।
ক্যাফেতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সিনেমাটোগ্রাফি স্পটলাইট শুরু হলো আর মন কেবল তিনটি জিনিসে আটকাতে থাকলো চোখ, ঠোঁট আর চুলে।
কেনো এরকম হলো আজ আমার সাথে ওতো একটা মেয়ে আমিও একটা মেয়ে তাহলে ওর কাছে কি রহস্য আছে? আমাকে কেনো আকৃষ্ট করছে? উত্তর কি পাবো নাকি অপেক্ষা করতে হবে আরো।
নাকি আমি........ ছি এটা ভাবাও পাপ, বাবাকে মুখ দেখাবো কি করে? মা কি বলবেন?
শহরে পাঠিয়েছি কি মুখে কলঙ্ক লেপনের জন্য! এবার নিজেকে ভয় করতে লাগলো।
একপ্রকার জোর করেই চিন্তা ভাবনা দূর করলাম।
কিন্তু আমি কি জানতাম ওই ঘুগনির বাটি আমাদেরকে এক সুতোয় বাঁধার কাজটি অতিসন্তর্পনে শুরু করে দিয়েছে কয়েক মুহূর্তের আলাপে।
আস্তে আস্তে সময় চলমান হলো, সেকেন্ড মিনিটে, মিনিট ঘণ্টায়, ঘণ্টা দিনে, চলে NEET এর সেকেন্ড পরীক্ষা। পরীক্ষা এলো গেলো আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই রেজাল্ট বের হলো। এবারেও চরম হতাশা হলনা ক্রেক।আবার বাড়ির লোকের শলা করে গঞ্জনা দিতে থাকলো। আমি বলেই দিলাম যে, “ আমার কোনো দিনই ডাক্তারি ভালো লাগেনি, আঁকা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিলো, তোমরা জানতে চেয়েছিল ?”
বাবার চোখ ছলছল করে উঠলো বললো, “ দেখ মা আমাদের ভুল হয়ে গেছে আমরা তোর ভবিষ্যত ভাবতে গিয়ে তোর কোমল মন পাথর দিয়ে পিষে দিলাম আমাদের ক্ষমা করিস, কিন্তু আমাদের দেশে আঁকার ভবিষ্যত কি আছে আমাকে দেখ”।
আমি কিছু না বলে বাবার কাঁধে মাথা রেখে কান্না করতে থাকলাম।
এরপর জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়লো মা শুধু বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলো আর বাবা চাইলো নিজের পায়ে দাড়ায়।
ফলে ঘুগনির বাটির সাথে নিজের বর্তমান অবস্থাও সেই আগন্তুক এর দিকে নিয়ে গেল।
সাহস করে একদিন ফোন করলাম নম্বরটিতে প্রথমে চিনতে না পারলেও ঘটনা স্মৃতিচরণ করতেই সে আমাকে মনে করে ফেললো।
আমার বর্তমান অবস্থার গল্প শোনাতে সে আমাকে তার কোম্পানিতে জব অফার করলো। বাবাকে সব বললাম প্রথমে নিরুৎসাহ থাকলেও পরে হা সূচক মন্তব্য করলেন। সবুজ সংকেত পেয়ে কলকাতায় গেলাম তার সাথে দেখা করতে।
লালবাজার এলাকার মস্ত বড় বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়ালো অটোরিকশা। বিল্ডিং এর হেডিং Union trading market prvt limited. দেখে মনে হলো ঠিক জায়গায় এসেছি। আমি সোজা রিসেপশন এ গিয়ে দম নিলাম। রিসেপশনিস্টকে বললাম আমার অ্যাপোইমেন্ট আছে ম্যাম এর সাথে সে নাম জিজ্ঞেস করতে বললাম, “প্রিয়দর্শিনী, প্রিয়দর্শিনী রায়”।
ম্যাম রুম নং 5 এ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি ধন্যবাদ বলে রুম 5 এর দিকে অগ্রসর হলাম।
রুম এ টোকা দিলাম, একবার, দুবার, তিনবারের বেলায় মিষ্টি সুর ভেসে এলো, “ come in”
ঢুকে দেখলাম সে আমার দিকে না তাকিয়ে আপন মনে ফাইল দেখছে।
আমি কি করবো বুঝতে না পেরে গলা ঝরা দিয়ে বললাম, “ ম্যাম আমি প্রিয়দর্শিনী, প্রিয়দর্শিনী রায়”।
এবার সে মুখ তুললো আর তুলতেই বুকে যেনো ঝড় উঠলো।
“ওহ তুমি আমি বুঝতে পারিনি” ব্যাস্ত হয়ে প্রিয়া এগিয়ে এসে হ্যান্ডসেক করে চেয়ার দেখিয়ে বসতে বলে।
আমি চেয়ার এ বলসে সে আমাকে অবাক করে আমার মুখোমুখি টেবিলের ওপরে বসে।
আমার বুকের ঝড় তখন আরো বেড়ে যায়। আমার চোখ আপনা আপনি ফ্লোর এ আটকে গেলো।
আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে প্রিয়া এখন আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। এটা ভেবেই নিজের অজান্তেই নিজের মনে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো আর বেশি লজ্জা পেলাম। এসি রুমে আমি ঘামতে শুরু করছি।
“ I am really sorry about you current situation, আমি জানি এখন চাকরির তোমার খুব দরকার। আর তোমার টিশার্ট নষ্টর দরুন আমার একটা কর্তব্য আছে। সেটা আমাকে এখন পূরণ করতে দাও। তুমি আমার P.A. হবে” একনাগাড়ে কথা গুলো বলে প্রিয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো উত্তরের আশায়।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম, আমার আমি মার্কেটিং, স্টক মার্কেট, শেয়ার মার্কেট কিছুই জানিনা।
তাকে আমার অসুবিধাগুলো বললে, সে বললো, “এত চিন্তা করতে হবেনা আমি শিখিয়ে দেবো”। খানিকটা খুশিই হলাম। যায় হোক আমি আবার মুক্ত হবো। আমি প্রিয়াকে , “ তোমার কাছে পেনসিল আছে?”
প্রতিউত্তরে বললো, “ কি করবে?”।
আমি কিছু না বলে ইশারাতে কাগজ আর পেনসিল চাইলাম।
সে এনে দিয়ে আবার টেবিলের ওপর বসলো। আমি ওই অবস্থায় তার একটা ছবি আঁকে দিলাম সে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো শুধু মুখ থেকে আওয়াজ বেরোলো ,” অবিশ্বাস্য!” .......
আমার কেবিনের দরজায় টোকা পড়তে কল্পনার চাদর ছিঁড়ে গেলো।
মিষ্টি সুর ভেসে এলো, “ এই প্রিয় এসো কখন বাড়ি যাবে সময়ের খেয়াল রেখেছো”।
আমি আসছি বলে দরজার দিকে এগোলাম। দরজা খুলতেই প্রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কিস করতে থাকে।
আমি: “এই কি করছো! আমরা এখনো অফিস এ আছি”।
প্রিয়া: “ ধেত এটা আমার অফিস আমি বস যা খুশি করতে পারি”
আমি: “ তাই তো বাড়ি চলো তারপর দেখছি কে কার বস”।
প্রিয়া: “ you making me shiver”
আমি: “ I am glad, চলো বাড়ি ফিরে তোমার shivering কাটাচ্ছি”
প্রিয়া কোনো কথা না বলে শুধু ঠোঁট কামড়ে হালকা হুম করে আমার হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে আমদের অফিসের পার্কিং স্পট আর দিকে নিয়ে গেলো যেখানে ওর গাড়ি পার্ক করা ছিল।
গাড়িতে বসে প্রিয়া বললো, “ তুমি কেবিনে বসে কি ভাবছিলে”
“তোমার আমার পরিচয় কিভাবে হলো তার প্রেম কিভাবে হলো এইসব” , আমি বললাম।
প্রিয়া: “ ওহহ, তাই তুমি কিন্তু আমার কাছে সহজে আমার কাছে ধরা দাওনি, এত সময় কাউকে দিইনি কিন্তু তোমাকে প্রথম দেখাতেই কেমন যেনো সব জেদ, রাগ, অভিমান সব যেনো কোথায় চলে যায়, মনে হয় শুধু তোমার মুখ তোমার চোখ তোমার হাসি এগুলোই আমার অভিমান আর এগুলোই আমি”।
আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না গলা ভারী হয়ে এলো, নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আমার কোলে রাখা প্রিয়ার হাতের ওপর পড়লো।
প্রিয়া হাত দিয়ে চোখের জল মোছাতে এলে আমি তার হাতটা ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বললাম, “ সত্যি আমি নিজেকে চিনতে অনেক দেরি করেছিলাম, আমি সমাজের ভয়ে তোমার থেকে ধুরে যাবার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু তোমার যে ভালোবাসা আমাকে বারবার কিনারে নিয়ে গিয়েও আবার ফিরিয়ে এনেছে। শুনেছি চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে কিন্তু আমি সমমেরু হয়েও আমরা দুজন দুজনকে আকর্ষণ করলাম। তাইতো আমরা সমপ্রেমি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি প্রিয়া খুব। যতদিন বাঁচবো ততোদিন এ শরীর তোমার। তুমি আছো শুধু এই শরীরে। প্রত্যেক শিরায় , প্রত্যেক ধমনীতে, প্রত্যেক লোমকূপে। তোমার এই পবিত্র শরীর অন্য কেউ ছুঁলেই আমি আমি মারা যাব। প্রিয়া শুধু তোমার পরশ আমার বাঁচার আশ্বাস জাগায়”।
প্রিয়া আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে বললো, “ প্রিয় আমি তোমার শরীর চাইনা চাই তোমার বিশুদ্ধ মন যেখানে তুমি আমায় বাঁচিয়ে রাখছো শুধু সেটা দিলেই হবে খুব ভালোবাসি তোমায় প্রিয়দর্শিনী। আমার প্রিয়”।
তারপর আর কোনো কথা নয়, দুটো যুবতীর নিঃস্বার্থ প্রেমের সাক্ষী থাকলো ফাঁকা পার্কিং প্লট আর প্রিয়ার নিজস্ব গাড়ি।
উপযুক্ত বাতাসের অভাবে আমার আর প্রিয়ার ঠোঁট গুলো আলাদা করতেই হলো মন না চাইলেও।
প্রিয়া বললো, “ চলো বাড়ি যায় রাত হলো অনেক”
সারা রাস্তা প্রিয়া ড্রাইভ করলেও আমার হাতে প্রিয়ার হাত সময় ধরা ছিল। লিফটে উঠে আমাদের ফ্লোর এর বোতাম টিপতেই প্রিয়া আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে আমার মুখে ঘাড়ে গলায় হালকা হালকা চুমু দিতে থাকে।
আদিম নেশা যেনো ভর করেছে করেছে প্রিয়ার দুই আঁখিতে। আমার ঠোঁটটা তার মুখে নিয়ে চরমভাবে কিস করতে থাকে। যেনো আমার ঠোঁট আমৃতসুধার উৎস।
আমি নিজেকে সীমার মধ্যে না বেধে রেখে প্রিয়ার কাছে সমর্পণ করলাম। আমি তার ঠোঁটে প্রতি চুম্বন দিয়ে তাকে আরো পাগল করে দিলাম। সে আমার জামার একটা একটা করে বোতাম খুলে আমার বুকে কিস করতে থাকে। আমি তার ঘনো কালো আমার হাত অদৃশ্য করে দিলাম।
প্রিয়া এবার আমাকে অবাক করার মতো ব্যাপার করলো। প্রিয়া তার হাঁটুর ভাঁজ করে বসে (kneel down বলে) আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে আমার প্যান্ট খুলতে থাকে। আমার হৃৎপিন্ড তখন আমার বুকে হাতুড়ি মারছে। প্রিয়া তারপর আমার পেটে কিস করে। তারপর আমি আর থাকতে না পেরে আমি প্রিয়াকে কোলে করে নিয়ে খাটে শুইয়ে আমি আমার আদিম খেলায় মেতে উঠি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পড়লাম আমার বুকে ভার অনুভব করলাম। চেয়ে দেখি প্রিয়া আমার বুকে মাথা রেখে শান্ত বালিকার মতো ঘুমিয়ে আছে।
মনে মনে বললাম, “কি মেয়েরে বাবা কাল সারারাত আমাকে ঘুমাতে দেয়নি এখন শান্ত মেয়ের মতো আমার বুকে ঘুমিয়ে!কি সুন্দর লাগছে ভগবান সব রূপ যেনো আমার প্রিয়াকে দিয়েছে আমি এর কাছে কিছুই নই”।
টুং টুং ইউ হ্যাভ ওয়ান ম্যাসেজ- প্রিয়ার ফোনের যান্ত্রিক সুর ভেসে এলো।
আমি ফোনটা আমি হাতে নিয়ে দেখি একটা অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে, কিছুটা ভয়ের সাথে মেসেজ নোটিফিকেশন এ চাপলে ফোন পাসওয়ার্ড চাইলো।
আমি অফিসের কেউ হবে ভেবে রেখে দিলাম।
প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, “ কি করছিলে আমার ফোন নিয়ে”
আমি: “কিছু না একটা মেসেজ এসেছিল দেখছিলাম”
প্রিয়া কিছু না বলে একবার ফোন আর আমার দিকে তাকালো দিয়ে আমার ঠোঁটে কিস করে ফোনটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেল ফ্রেশ হবার জন্য।
আমরা ব্রেকফাস্ট করে অফিসে যাবার জন্য বেরোলাম। রাস্তায় প্রিয়া বেশি কথা বললো না।
ভাবলাম ফোনে না বলে হাত দিয়েছি তাই আপসেট। পরে sorry বলে নেবো ভেবে আর কিছু বললাম না।
অফিসে এসে সটান প্রিয়া নিজের কেবিনে চলে যায়। আমিও আমার কেবিনে আসে সেন্সেক্স এর ফাইল আপডেট করি।
অন্ধকার ঘর ঝাপসা আলোতে একটা টেবিল বোঝা যাচ্ছে টেবিলে একটা কম্পিউটার, তার screen এর আলোতে বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন হুডি পরে কম্পিউটার এর সামনে বসে আছে। স্ক্রীন-এ প্রিয়ার ছবি ওয়ালপেপার লাগানো। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা ব্যাক্তিটি কম্পিউটারে Lynux environment ওপেন করে
টাইপ করলো – “cd Xploitspy” enter টিপে command দিলো “ access the front camera”
কিছুক্ষনের মধ্যে প্রিয়ার ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা এই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তির কম্পিউটারে ভেসে উঠল।
ফোনটা প্রিয়ার টেবিলে ফোন স্ট্যান্ড রাখা রয়েছে। প্রিয়া বুঝতেই পারলোনা যে কেউ তার ফোন হ্যাক করেছে।
প্রিয়ার দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ হলো।
“ come in”
শুনতে পেয়ে আমি দরজার হাতল ঘুরিয়ে ভেতরে গেলাম।
“প্রিয়া এইনাও তোমার সেনসেক্স এর ফাইল” , আমি বললাম।
প্রিয়া কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে ফাইলটা নিয়ে ওলটে পাল্টে বললো, “ঠিক আছে”
আবার নিজের কাজে মন দিল।
আবার আমার রাগ হলো আমি বললাম, “ সকালে তোমার ফোনে না বলে হাত দিয়েছি তাই কি রেগে আছো?”
প্রিয়া অবাক হয়ে বললো, “ এরকম কেনো মনে হলো তোমার?”
“ মানে সকালের পর থেকে ভালো কথা বলছো না তাই” , আমি বললাম
প্রিয়া: “ না সেরকম কিছু নয় প্রচুর কাজের চাপ তাই, সকালের জন্য দুঃখিত”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে প্রিয়ার কাছে গিয়ে তার ঠোঁটে কিস করলাম, প্রিয়ার কোনো রেসপন্স না পেয়ে, তাকে ছেড়েদিয়ে বললাম তুমি কাজ করো আমি আসছি।
প্রিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় বললো, “ দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করবো”
আমি হুঁ! বলে বেরিয়ে এলাম।
কমপিউটারে বসে থাকা ব্যাক্তিটি প্রিয়া আর প্রিয়দর্শিনী সব কথা শুনতে ও দেখতে পাচ্ছিলো প্রিয়ার ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরার মাধ্যমে, প্রিয়া আর প্রিয়দর্শিনীর চুম্বন দৃশ্য দেখে টেবিল শক্ত ভাবে খামচে ধরলো ব্যাক্তিটি।
প্রিয়া এখন ফোনটা স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে মুখের সামনে ধরলো। এখন কম্পিউটার screen এ প্রিয়ার মুখ ভেসে উঠলো, অজ্ঞাত ব্যাক্তিটি কম্পিউটারের screen মুখ ঠেকিয়ে প্রিয়া ক কিস করলো।
ব্যাক্তিটি তার কম্পিউটার এ আর একটি নতুন উইন্ডো খুলে তাতে কমান্ড দিলো –“remote access” সাথে সাথে প্রিয়ার ফোন ব্যক্তিটির কম্পিউটারে ভেসে উঠলো।
প্রিয়া ইনবক্স খুলে সকালের ম্যাসেজ টা দেখছে, “ you are only mine Priya”
এবার কম্পিউটারের এপাশে বসে থাকা ব্যাক্তিটি মেয়েলি কণ্ঠে হেসে বললো, “ yeah, babe you are only mine”