আবুল হাসান

6 0 0
                                    

॥ এক ॥

হিন্দু-পাকিস্তান উপমহাদেশের পশ্চিম উপকূলস্থিত প্রধান বন্দরসমূহ এবং লংকা। দ্বীপের সাথে আরব ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক প্রাচীন। অজ্ঞানতার যুগ থেকেই জনকয়েক আরব ব্যবসায়ী লংকা দ্বীপে বসবাস শুরু করে। ইতিমধ্যে আরব দেশে এক নতুন ধর্মের আবির্ভাব হয়। কিন্তু এ ধর্ম আরব ব্যবসায়ীদের বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে না। তবে ইরানী ও রােমীয়দের বিরুদ্ধে আরবদের বিস্ময়কর বিজয়বার্তা তাদের মনে জাতীয় গর্ব সঞ্চার করে। আরবের তুলনায় ইরানকে সভ্য দেশ বলে গণ্য করা হত। এ জন্য ভারতের বাজারে আরবের তুলনায় পারস্যের পণ্যের আদর ছিল বেশী। তা ছাড়া ভারতে শাসকরা ইরানকে খুব শক্তিশালী প্রতিবেশী বলে মনে করত। আরবদের তুলনায় ইরানী ব্যবসায়ীরা বেশী সম্মান পেত। শাম থেকে কোন কাফিলা এলে প্রাচীন রােমের শক্তিতে অভিভূত ভারতবাসী তাদেরকে আরবদের চেয়ে বেশী খাতির করতাে। কিন্তু আবুবকর সিদ্দীক এবং উমর ফারুকের বিস্ময়কর বিজয়বার্তা প্রতিবেশী জাতিদের মনে আরবদের মর্যাদা সম্বন্ধে বিরাট পরিবর্তন আনে।
লংকা দ্বীপ ও ভারতের অন্যান্য স্থানে যে সব আরব ব্যবসায়ী বাস করতাে তারা তখনাে আরবের আভ্যন্তরীণ বিপ্লবে প্রভাবান্বিত হয়নি। অধর্মের বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয়কে এরা ইরানী ও রােমকদের বিরুদ্ধে আরবদের বিজয় মনে করে বিশেষ উৎফুল্ল হয়েছিল। আরবদের নতুন ধর্মের প্রতি তাদের পূর্ব ঘৃণা এখন আকর্ষণে পরিবর্তিত হলাে। এ সময় যাদের আরব দেশে যাবার সুযােগ হয়েছে তারা এই নতুন ধর্মে পূর্ণ আশীষ নিয়ে ফিরে এসেছে।
লংকায় আরব ব্যবসায়ীদের নেতা ছিল আবদুশ শমস। এর পূর্ব পুরুষেরা অনেকদিন থেকে এ দ্বীপে বাস করে আসছে। তার জন্ম এই দ্বীপেই। প্রবাসী আরব বংশীয় এক কন্যার সাথে হয় তার বিয়ে। যৌবনকাল থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তার সমুদ্র ভ্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল লংকা হতে কাঠিয়াবাড় উপকূল পর্যন্ত। তার স্ববংশীয় আত্মীয়-স্বজন আরব দেশে কে কে আছে, কোথায় বা আছে তাও তার জানা ছিল না। ইয়ারমুক ও কাদিসিয়ায় মুসলমানদের বিপুল বিজয়বার্তা দুনিয়ার সর্বত্র যখন পৌঁছে যায় তখন অন্যান্য আরবদের মতাে সেও মাতৃভূমি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে।

মুহাম্মদ বিন কাশিমWhere stories live. Discover now