অনুশোচনা

8 0 0
                                    


" আজই যে পৃথিবীতে আমার শেষ দিন - এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে চলেছে। সামান্য কিছু টাকার লোভে একজন বৃদ্ধকে হত্যার অপরাধে আমাকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।আমি আমার সারা জীবনে মৃত্যুকে ভয় পাইনি। দারিদ্র্যতা আর একাকীত্বের এই জীবন থেকে মুক্তি পাওয়াই বরং এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে আরো বেশি সুখের। কিছুক্ষণ পরে আমার ফাঁসি হবে এটা নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই।  আমি খালি ভাবছি আমার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করা উচিত নাকি না?
মাঝে মাঝে আমি ভাবছি যে , আমার অনুশোচনা বোধ করা উচিৎ। আবার কখনও আমি ভাবছি তা উচিৎ হবে না। যাই হোক না কেন আমি একটি বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী যে , আমার সেই বৃদ্ধকে হত্যা করার জন্য অনুশোচনা বোধ করা উচিত নয়।

আপনি কী ভাবছেন? আমি এমন নিষ্ঠুর এবং নির্মম খুনি যে, কাউকে হত্যা করার পরও আমি বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করছি না! আপনার এই ধারণা ভুল। তাহলে এখন আপনি কী মনে করছেন? কেন আমার মধ্যে মাঝে মাঝে অনুশোচনা বোধ হচ্ছে?আপনি বোধহয় কল্পনা করছেন যে আমার অপরাধ লুকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে আমার মনে নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা আসছে। কিন্তু আপনি এবারও ভুল।

আমি বৃদ্ধকে হত্যা করার জন্য অনুশোচনা বোধ করছি না কারণ আসলে আমি তাকে হত্যা করিনি। বরং উল্টো আমি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। আমার অনুশোচনা বোধ করার কারণ হলো আমার আগ বাড়িয়ে মানুষকে সাহায্য করতে যাওয়ার অভ্যাস। আমার শৈশব থেকে, আমি সবসময় চেষ্টা করেছি মানুষকে সাহায্য করার জন্য । মানুষ বিপদে পড়লে আমি কেন জানি নিজের সুবিধা-অসুবিধা , সুখ দুঃখ সব ভুলে যাই।

সেদিন আমি একটি বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। যেখানে আমি ছুটির দিনগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতাম। আমার বাসার একটু দূরেই দেখলাম রাস্তায় এক বৃদ্ধ ঘুমাচ্ছে। আমি তাকে সাহায্য করার কথা ভাবলাম এবং তার দিকে হাঁটতে লাগলাম। আমি তার কাছে গিয়ে দেখি তার পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং তার শরীর থেকে অবিরাম রক্ত বের হচ্ছে।

আমি প্রথমে ছুরিটি সরিয়ে তারপর কাপড়ের সাহায্যে রক্তের জায়গা বেঁধে অ্যাম্বুলেন্স কল করার পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু আমি ছুরি বের করার সময়ই হঠাৎ কয়েকজন পুলিশ এসে আমাকে আটক করে। তাদের বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আমার কাছ থেকে একটি কথাও শুনতে প্রস্তুত ছিল না। রিমান্ডে সত্য কথা বলার জন্য তারা আমাকে অনেক মারধর করছিল। কিন্তু আমি আমার কথায় কঠোর ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই শান্তশিষ্ট এই আমার আগে কখনো মারামারির অভিজ্ঞতাই ছিল না। সেই আমাকেই এত নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে আজ। আমার কাছের এক বন্ধু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে যে, স্থানীয় এক সন্ত্রাসী ঐ বৃদ্ধের জমি দখলের চেষ্টা করছিল অনেক দিন ধরে। সেই সন্ত্রাসীই খুব সম্ভবত উনাকে হত্যা করেছে। আর সেই সন্ত্রাসী হলো পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার আপন ছোট ভাই। আমাকে এই কথাগুলো জানানোর পর আমি আশাবাদী ছিলাম যে , বৃদ্ধ লোকটি সুস্থ হলে সত্য কথা সবাইকে জানিয়ে দিবে। কিন্তু আমার ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন ছিল না। রিমান্ডের মাঝেই তার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম। দু’দিন ধরে চলে নৃশংস জিজ্ঞাসাবাদ। বারবার আমার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা আমাকে অপরাধী উল্লেখ করে রিপোর্ট জমা দিল। কেউ আর আমাকে সাহায্য করতে আসেনি এবং আদালতে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। ফলে আজ এত অল্প বয়সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমার পরিবার ও এখন আমাকে ঘৃণা করছে।

আসলে আমি এতটাই বিষণ্ণ ছিলাম যে মৃত্যুর আগে আমি আমার শেষ ইচ্ছা হিসেবেও কিছু চাইনি।

কনডেম সেলে কে জানি একটা কাগজ আর কলম ফেলে গেছে।সেটা দিয়েই লিখলাম আমার জীবনের শেষ কাহিনী। একটাই অনুরোধ যে আমার লেখাটা পড়বেন দয়া করে আপনি আমাকে খুনি ভাববেন না। আর আমার পরিবার কে জানিয়েন যে আমি বাস্তবে সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলাম।তারা যেন আমার মরার পর অন্তত আমাকে আর ঘৃণা না করে।"



অপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের দুই দিন পর কনডেম সেল পরিষ্কার করতে এসে নিরক্ষর একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী
সেলে একটি নোট খুঁজে পেয়ে সেটা জেলার এর কাছে হস্তান্তর করে । অত্যন্ত কৃপণ জেলার পড়ার পর তাকে বেশ কিছু টাকা বকশিশ কেন দিল তা তার মাথায় ঢুকলো না। হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোন কাগজ। সে তো আর জানতো না যে এই একটা ক্ষুদ্র নোট দিয়ে পুলিশের ঐ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে ব্ল্যাকমেইল করে  জেলার সাহেব কয়েক লাখ টাকা কামিয়ে নিবেন।

Hai finito le parti pubblicate.

⏰ Ultimo aggiornamento: Feb 22 ⏰

Aggiungi questa storia alla tua Biblioteca per ricevere una notifica quando verrà pubblicata la prossima parte!

অনুশোচনা Dove le storie prendono vita. Scoprilo ora