(22)

2 0 0
                                    

পোষা বিড়াল আর ভালোবাসার মানুষের মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল আছে..

একটা বিড়ালকে আপনি ঘরে এনে পুষলেন, আদর করলেন, ভালোবাসলেন। সকাল দুপুর খাওয়াইলেন। রাতে নরম সোফায় থাকতে দিলেন। শীতের রাতে কম্বল তুলে দিলেন...  এরপর একটা সময় আপনার বিড়াল পালার আর ইচ্ছা হলো না....

বিড়ালটাকে আপনি বাইরে ফেলে দিয়ে আসলেন....

বিড়ালটা কি বাঁচবে? না। বিড়ালটা বাঁচবে না.... বরং কিছুদিনের মধ্যেই বিড়ালটা মারা যাবে...

আপনি ভাবতেসেন, কেন? রাস্তার বিড়াল কি বেঁচে থাকে না? ঝড়, বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকে না? ডাস্টবিনের পচা খাবার খেয়ে বাঁচে না?

জ্বী, বাঁচে। রাস্তার বিড়াল এসব করেও বেঁচে থাকে, কারণ ওরা এসবে অভ্যস্ত। বাট আপনার ফেলে দেওয়া বিড়ালটা এসবে অভ্যস্ত না, তাই সে বাঁচবে না। আপনি তাকে তার জগত থেকে তুলে এনে আপনার জগতে বসাইছিলেন, তারে তার লাইফ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের উপর ডিপেনডেন্ট করে নিয়েছিলেন....

ফলে সে বাইরের জগত ভুলে গিয়েছিলো। ডাস্টবিনের খাবার খাওয়া ভুলে গিয়েছিলো। নরম সোফায় ঘুমাইতে ঘুমাইতে সে শক্ত ইটে বা ঝোপের মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাসটাও তার আর মনে ছিলো না...

এরপর যখন সে তার জীবনের সবকিছু ছেড়েছুড়ে আপনার সাথে, আপনার বানানো পরিবেশে বাস করতে লাগলো, আপনি তাকে ছেড়ে দিলেন....

এই ছেড়ে দেওয়াটা আপনার কাছে সাধারণ একটা ইচ্ছা। আপনার কাছে খুব সিম্পল একটা জিনিস হলেও ঐ বিড়ালটার কাছে একটা বাঁচা মরার প্রশ্ন হয়ে গেল। বাকি পৃথিবীর কাছে যাই হোক না কেন, ঐ বিড়ালটার জন্য আপনি একজন মার্ডারার ছাড়া আর কিছু নন...

ভালোবাসাও ঠিক অমন একটা ব্যাপার। বিড়াল পোষার মতোই....

একটা মানুষকে আপনি ভালোবাসলেন ঐ ভালোবাসা তার জীবনে শুধু নতুন একটা ফিলিংসই যোগ করে না, বরং ঐ মানুষটার সমস্ত জীবন ওলট পালট হয়ে যায়....

মানুষটার স্বপ্ন, ফিউচার প্ল্যান বা কম্ফোর্ট, সবকিছুই ধীরে ধীরে চেঞ্জ হতে থাকে....একটা সময় যাইয়া ঐ মানুষ সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনাকে তার পৃথিবী বানাইয়া ফেলে....

বাট যখন আপনি সেই রিলেশন থেকে নিজেরে উইথড্র করেন, জাস্ট আপনার ভালো লাগতেসে না বা আপনার মুড নাই বলে, তখন আপনার জন্য ঐটা একটা সম্পর্কের সমাপ্তি হলেও, ঐ মানুষটার জন্য  ঐটা হয়ে দাঁড়ায় নরকের দরজা....

এই যে আপনাকে ঘিরে সে এতোদিন ধরে একটা নতুন রাজ্য গইড়া তুললো, নতুন একটা পৃথিবী তৈরি করলো, আপনারে নিজের কম্ফোর্ট বানাইলো, অবসর বানাইলো, ব্যস্ততা বানাইলো, বর্তমান বানাইলো, ভবিষ্যত বানাইলো, আপনার এই চলে যাওয়াতে তার বানানো এই সমস্ত কিছু একসাথে হুড়মুড় করে ভাইঙ্গা পড়ে....

সে না পারে এসব থেকে অনভ্যস্ত হইতে, না পারে আবার আগের পৃথিবীতে ফিরে যাইতে.... বিশাল পরিমাণ শূণ্যতা বুকে নিয়ে এই মানুষগুলোরে বেঁচে থাকতে হয়। এরা যখন হাসে, আপনি একটু ভালো করে তাকাইলেই বুঝবেন, ও হাসি মরা মানুষের হাসি....

এই যে একটা মানুষ আপনার জন্য দীর্ঘ একটা সময় শূন্যতার সাগরে ডুইবা গেল, প্রাণ খুলে হাসতে ভুলে গেল, অনুভূতিহীন একটা চিপার মধ্যে এরা দীর্ঘ একটা সময়ের জন্য আটকায়ে গেল, এইটার পেছনের দায় কি আপনার না? অবশ্যই আপনার। অভ্যস্ত করে, দখল করে, প্রমিজ করে, সারাজীবন পাশে থাকার কমিটমেন্ট দিয়ে তারপর হুট করে শূন্য করে দিয়ে চলে যাওয়াটা খু নে র চেয়ে কম বড় কোন ক্রাইম তো না....

কেউ বিড়াল পুষতে চাইলে বারবার বলে দেওয়া হয়, বিড়াল পোষা শুধুই আনন্দের ব্যাপার না, এতে প্রচুর ঝামেলা আছে, প্রেশার আছে, খরচ আছে, প্যারা আছে, কষ্ট আছে। পারলে নেন, না পারলে শখের বশে বিড়াল নিয়েন না। বিড়াল আপনার বিনোদনের বস্তু না....

ভালোবাসাটাও তাই। কাউরে ভালোবাসার আগে মাথায় রাখবেন, ভালোবাসায় খালি মধু আর রোমান্টিসিজম থাকে না....ভালোবাসা শুধুই আনন্দের ব্যাপার না, বরং এতে প্রচুর ঝামেলা থাকে, আপস এন্ড ডাউন থাকে, খারাপ লাগা থাকে, পেইন থাকে, প্রেশার থাকে, কষ্ট থাকে, দায়িত্ব থাকে....

আনন্দের পাশাপাশি ঐ কষ্টগুলো সহ্য করতে পারলে ভালোবাসবেন, না পারলে শখের বশে টাইম পাসের জন্য ভালোবাসবেন না....

পৃথিবীতে খেলার বহু জিনিস আছে, বিনোদনের বহু উৎস আছে, বহু শখের কাজও আছে.... এখানে মানুষ নিয়ে খেলার তো কোন প্রয়োজন নাই।....

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Jul 05 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

অনুভূতি Where stories live. Discover now