তারা হাটছে, কতক্ষন ধরে তা তারা জানে না, জানার চেস্টাও করে না। তাদের পোষাক জায়গায় জায়গায় ছিড়া, কত জায়গায় তার হিসাব তারা আসলেও করে নাই, তাদের ক্লান্তি তাদের করতেও দিবে না। মনে হচ্ছে তারা যেন অনন্ত কাল ধরে পথ চলছে,
"আমরা বাচবো না" - মাঝবয়সী সহযাত্রি অনেকটা আর্তনাদ করে উঠলো। যদিও তার গলা অতটা শুনা গেলো না, অতিমাত্রায় ক্ষুদার্ত সে।
"চিৎকার করো না, কেউ শুনে ফেলবে" অপর কিশোর সহযাত্রি আস্তে জানালো। সেও দুর্বল, কিন্তু সে অনেক কিছু দেখছে, তার চোখের মনির স্পস্টতা এটাই জানান দেয়। সামনের ধংসস্তুপ গুলা সে দেখছে, কিভাবে পার হবে আর কোন শত্রু আছে নাকি এটা বুঝার চেস্টা করছে সে।
"সবাই মারা গেছে, বালক। আমরাও মরবো, খুদায়" মাঝবয়সী বলে উঠলো, আক্ষেপে।
"দেখি কি হয়, ভয় খুদার আগে আমাদের মারবে" বালক জবাব দিলো। "আমরা এতদুর আসতে পেরেছি, সামনেও পারবো"
"হায় রে, সান্তনা দিয়ে আর লাভ নাই। আমরা আর পারবো না। " মাঝবয়সীর আক্ষেপ বাড়তেই থাকলো।
হঠাত দূর থেকে একটা ক্ষিন আওয়াজ আসলো মনে হয়। খুব ক্ষিন, কিন্তু বালকটা শুনতে পেলো ঠিকই। কারন বেচে থাকার প্রবল ইচ্ছা তার ইন্দ্রিয়গুলো কে অনেক মজবুত করেছে। যেটা মাঝবয়সী এর কেন জানি হয়ে উঠে নাই। হয়তো হতে পারতো, কিন্তু সবার দ্বারা সব কিছু হয় না।
বালক টি মাঝবয়সীকে সংকেত দিলো, উভয়ই সাবধান, বালক টিকে অপরজন বিশ্বাস করে, কারন এই বৈরী পরিবেশে ওই বালক ই তাকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু কেন তা সে আজও জানে না।
তারা একটি ধংসস্তুপের পাশে এসেছে। মাঝবয়সী এবার নিজেও শুনতে পেয়েছে, একটি ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ। "ফাদ হতে পারে" সে বালক কে সতর্ক করলো।
"হয়তো বা, কিন্তু তার পরেও আমাদের দেখতে হবে।" বালক আস্তে জবাব দিলো।
ধংসস্তুপের এক পাশে, ইটের এক ভাঙ্গা দেয়ালের পাশে ওরা আবিস্কার করলো আওয়াজের উৎপত্তিস্থল।
এক বাচ্চা মেয়ে, বয়স ৭ কিংবা ৮, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। আসে পাশে কেউ নাই, কোন লাশ ও নয়। জামা কাপড় জায়গায় জায়গায় ছেড়া, রুগ্ন, কিন্তু মৃতপ্রায় নয়। বালক টা এক ঝলক দেখে নিলো, না, কোন ফাদ নয়। কারন তারা অরক্ষিত, ফাদ হলে এতক্ষনে তারা মরে পড়ে থাকতো এখানে।
তাও একবার নিশ্চিত হলো বালক। নিশ্চিত হবার পরে সে বাচ্চাটাকে দেখলো।
বাচ্চাটা ওদের দেখে কান্না বন্ধ করছে, কিন্তু ওর চোখে এখন ভয়। আর কেমন জানি ধাক্কা খাবার অনুভুতি প্রকাশ পাচ্ছে ওর চোখে। কোন মতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় সে জিজ্ঞাসা করলো, "তোমরা কি করবে আমাকে? "
বালক তার মনে একটু কস্ট পেলো। সে আর এক প্রানীর মদ্ধে এখন কোন তফাত নেই, কিন্তু তার পরেও মানব হিসেবে জন্ম নিয়েছে দেখে মানবতা এখনো একটু আছে। কিন্তু মানবের স্থান এই ধংসপ্রায় দুনিয়াতে নাই।
সে মেয়েটার চুল ধরে উঠালো, আর হিমশিতল কন্ঠে বললো, "খাবো"।
[বিদেশী কাহিনি অবলম্বনে]
YOU ARE READING
পরী আর এক প্রজাপতি
Short Storyপরী ও প্রজাপতি মুলত বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমাহার। মুলত মানব মনের ভিতরের অনুভুতিকে তুলে ধরা হয়েছে এই গল্প গুলোতে।