লামিয়া জানালা ধরে দাড়িয়ে আছে. আজ ওর বাবা আসবে. লামিয়া অনেক দিন ধরে বাবাকে দেখে না. মা বলে বাবা নাকি কাজে বাহিরে গেছে. আসতে অনেক দিন দেরী হবে. খালারা বলে নাকি বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, আর আসবে না. লামিয়া বিশ্বাস করতে চায় না. ওই দিন খালাতো ভাই কে ও খামছি মারছে, সে নাকি বলে লামিয়ার বাবা অন্য মেয়ের সাথে ভেগে গেছে. লামিয়া দিছেও খামচি, দিবে না কেন? ওর বাবা কে নিয়ে কেউ খারাপ কিছু বলবে আর ও সেটা মেনে নিবে! কখনোই না. সে এক বিশাল গ্যাঞ্জাম হয় ওই দিন. ভাগ্যিস মা পাশে ছিলো.
লামিয়াকে কেউ বলে নাই ওর বাবা আসবে, লামিয়ার সিক্সথ সেন্স, 5 বছরের বাচ্চার যদি তা থেকে থাকে তবে, তার দ্বারা তাড়িত হয়ে সে সকাল থেকে দাড়িয়ে আছে জানালা ধরে. ওর মা দেখছে ওকে, কিছু বলে নাই. নিজের মতো করে বাসার যা দ্বায়িত্ব তাই পাল ন করতাছে. ওর সেই খালাত ভাই ও আছে তবে ওই দিনের পর থেকে আর ধার কাছে আসে না, কারন সে বুঝে ঠিকই গেছে যে তার থেকে ওই মেয়ের ক্ষমতা ও আদর এই বাড়িতে বেশী.
তা সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, মা মেয়েকে টেনে গোসল করিয়ে খাইয়ে মেয়েকে নিয়ে দুপুরে ঘুমাতে গেলো, এবং মেয়ে যথারীতি মার কাছ থেকে চুপি চুপি সরে এসে জানালা ধরে দাড়িয়ে রইলো. তার বাবা সামনের গেট খুলে ভিতরে ঢুকবে, সে সেটা দেখবে. তার বাবা আসবে তার আনন্দ রাখার কি জায়গা আছে?
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, রাতের প্রথম ভাগ ও শুরু হলো. ওই গেট দিয়ে অনেকেই এলো আর গেলো, তবে তার বাবা এলো না. তার ছোট হৃপিন্ডের মাঝে যে ছোট আশা ছিলো তাও আস্তে আস্তে নিরাশায় পরিনত হতে লাগলো, ছোট মানুষ তো এত বড় আশা বাধতে এখনো শিখে নাই. অবশেষ তার মা যখন রাতের খাবার খেতে ডাকলো তখন সে নিরবিকার ভাবে খেতে বসলো যদিও তার ডান চোখ থেকে এক দুই ফোটা অশ্রু বেয়ে পড়ছে. যদিও সে এটা দেখছে না যে তার মার ও ডান চোখ দিয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ছে, হয়তো বা তার থেকেও বেশী.
তবে সে যেটা দেখে নাই যে ওর জানালা হতে একটু ডানে, একটা গাছ আছে, তার নিচে খোচা খোচা দাড়ির এক লোক সারা দিন তাকে দেখে গেছে. বেচারীর দোষ নাই, সে এতো উদগ্রীব ছিলো যে সে গেট টাই শুধু দেখছে, আর কিছু ই না. ওই লোক সারা দিন ই দাড়িয়ে ছিলো, এমন কি মনে হয়েছিলো সে ভিতরে যাবে, কিন্তু তার সাহস হয় নাই, কোন মুখ দেখাবে যে সে, তার তো মুখ দেখানোর কোন উপায় নাই. সে দাড়িয়েই ছিলো সারাদিন. মেয়েকে দেখছিলো, এর মধ্যে এক আলাদা আনন্দ আছে যা বলে বুঝানো যাবে না. তার মেয়ে তাকে দেখতে পারছিলো না, আসলে সে একটু এদিকে ওদিক তাকালেই দেখতে পারতো, কিন্তু সে মনে করতেছিলো তার বাবা তো গেট দিয়েই আসবে, তো গেটের দিকে তাকাইলেই তো হয়। তার বাবা যে গেট দিয়ে ঢুকতে পারবে না, কারন তার বিবেকে যে বাধছে। কিন্তু তার মেয়েকে দেখতে যে তার মন চাচ্ছে, তার বাবা তো, তার মেয়েকে সে অনেক বেশি ভালোবাসে। সে সারা দিনে কিছু খায় নাই, আসলে তার খাবার কোন দরকার হয় নাই, তার মেয়েকে দেখার উত্তেজনায় সে যেন খাবার কথাই ভুলে গেছে।
তার মেয়েকে যখন তার মা খেতে ডাকলো, তখন ওই লোকের সারা দিনের ডিউটি শেষ হলো। এই ডিউটি সে প্রায়ই দেয়, তবে আজ কাল এই ডিউটি দেয়াটা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে, প্রায়ই সে দাঁড়িয়ে থাকে, কেউ দেখে না। হয়তো কেউ দেখে কিন্তু কিছু বলে না, সামনেও আসে না।
আজকে তার ডিউটি শেষ। সে এখন চলে যাচ্ছে এক অনিশ্চয়তার পথে।
STAI LEGGENDO
পরী আর এক প্রজাপতি
Storie breviপরী ও প্রজাপতি মুলত বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমাহার। মুলত মানব মনের ভিতরের অনুভুতিকে তুলে ধরা হয়েছে এই গল্প গুলোতে।