সমুদ্রের শব্দ মানুষের মনে অনেক রকম প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি করে। সবাই বলতো, আমি ও মানতাম। কিন্তু জীবনের এই মুহুর্তে আমি একা সমুদ্রের পাশে বালিতে বসে এক অন্যরকম ভাবে এই কথাটাকে যেন নতুন করে অনুভব করছি। আমার শুন্য হৃদয়কে যেন এই শব্দ পুরন করার চেস্টা করছে। বিগত তিনদিন ধরে সে পুর্ন করার চেস্টা করছে। কিন্তু আমার হৃদয়ের শুন্যতা যে অনেক বেশি। হয়তো বছর লাগবে, বা তার ও চেয়ে বেশি, কিন্তু আমার মনের ভিতর এক ছোট প্রশ্ন বার বার উকি দেয়, তার শুন্যতা কি এ পৃথিবীর কোন কিছু তে পুর্ন হবে? এ প্রশ্নের জবাব দেয়াটা খুব কঠিন, এ মুহুর্তের জন্য অসম্ভব।
আমাদের প্রেম ছিলো ২ বছরের, বিয়ে হয় ৩ বছর, সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে আজ ৬ মাস মতো হলো। নাহ, আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যায় নাই, আমাদের সবাই কে ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় পাড়ি দিছে সে। তার দেহের মদ্ধ্যে মরনঘাতী ক্যান্সার হানা দিয়েছিলো, সে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কাউ কে জানান দেয় নাই। তার মতে আমরা সবকিছু খুইয়ে তার দেহের ভিতরের ক্যান্সার মারার এক অসম্ভব যুদ্ধে নেমে যেতাম। আমরা আসলেই তাই করতাম, এমন কি আমরা শেষ মুহুর্তে যখন সব কিছু জানতে পারি তখন ও তাই করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে চায় নাই এটা হতে। এমন কি শেষ দিন টাতেও তার মুখে হাসি ছিলো, সবাই কে সান্তনার হাসি। তার খুব কস্ট হচ্ছিলো, আমরা সবাই কাদছিলাম, কিন্তু সে ঠিকই সব কস্টকে মেনে নিয়ে হাসছিলো, আমাদের সে সান্তনা দিচ্ছিলো। সে আসলেই সাহসী ছিলো। কিন্তু আমি কি তার মত সাহসী? কখনো বা হতে পেরেছি?
সে মারা যাবার পরে কিছুদিন আমি কি ছিলাম, কেমন ছিলাম তা আমি নিজেও জানি না। এটা বুঝানোর নয়, যে হারায় সেই বুঝে, আসলেই সেই একমাত্র বুঝে। যখন আমি তাকে নিয়ে ছিলাম তাকে বুঝার চেস্টা করেছিলাম, সে চলে গিয়েছে, এখন তাকে যেন সর্বদাই অনুভব করি। জানি না কেন এখন আমার মনে হয় তাকে যেন আমার আরো কাছে আগলে রাখার দরকার ছিলো. সে কিন্তু ঠিকই আমাকে আগলে রেখেছিলো . আমি বুঝতাম , কিন্তু এখন যেমন বুঝি তখনো যদি সেরকম ভাবে বুঝতাম তাহলে আজ হয়তো , হয়তো সে আমার কাছেই থাকতো . আচ্ছা , আমি কি তাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম ? ভালোবাসা শক্তি নাকি অনেক বড় হয় , তাহলে কি আমি তাকে ওতটা ভালোবাসিনি ?
কিছুদিন আমি ওদের বাসায় ছিলাম . আমার শাশুড়ি যেন আমাকে আরো মেয়ের মত করে নিয়েছে . উনার কাছে এখন যেন আমি শেষ সম্বল . আমাকে নিয়ে এখন তার সব কিছু . উনি সব সময় এরকম ছিলো . আমি ছোট বেলা থেকে মা হারা , কিন্তু উনি কখনো মনে হয় না আমাকে সেটা মনে করতে দিছে বিয়ের পরে . হয়তো অনেক ক্ষেত্রে আমার মাও এত কিছু করতো না আমার জন্য। জানি আপনারা হাসবেন শুনে, কিন্তু আমি জানি উনাকে। ছেলে হারার কস্ট কে আকড়ে রেখে অন্যকে মানসিক সান্তনা দেয়া এত সোজা না।
আমার কর্মক্ষেত্রে গিয়েছিলাম না। সবার মেকি সান্তনা পেয়েছি, আরও অনেক চোখ দেখেছি, এক অদ্ভুত ক্ষুদার্ত চোখ। এরা সুবিধা নিতে চায়, এক বিধবার সুবিধা।
বিধবা। শব্দটা কেমন জানি লাগলো। আসলেই তো আমি স্বামী ছাড়া বিধবা। কেমন লাগছে যেন নিজের কানের কাছেই। বিধবা। শব্দটাই না কেমন জানি অদ্ভুত। কেমন জানি শিহরণ জাগায় এ দেহে।
সমুদ্রের সামনে বসে কেমন জানি আমার মন অনেক দুরে চলে গেছে। আমি যদি সমুদ্রে নেমে যাই তাহলে কেমন হবে। ওর কাছে যাবার একটা ভালো উপায় এটা। শুধু সমুদ্রের পানি কে আগলে নিলেই হলো . হয়তো একটু কষ্ট হবে , দম বন্ধ হয়ে আসবে . তাতে সমস্যা কি . একটু কষ্ট ই হবে , তার পরে তো শান্তি . চির শান্তি . আমি কি তাই চাচ্ছি না এ মুহুর্তে? একটু শান্তি চাচ্ছি আমি, তার কাছে যেতে চাচ্ছি আমি।
কিভাবে যেন আমি উঠে দাঁড়িয়েছি। কখন নিজেও জানি না। হয়তো আমার মদ্ধ্যকার আমি আমাকে তুলে দাড় করিয়েছে। আমি হাঁটছি, সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র আমাকে ডাকছে, খুব বিনয়ের সাথে ডাকছে।
YOU ARE READING
পরী আর এক প্রজাপতি
Short Storyপরী ও প্রজাপতি মুলত বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমাহার। মুলত মানব মনের ভিতরের অনুভুতিকে তুলে ধরা হয়েছে এই গল্প গুলোতে।