৫.
যাক, বিশাল একটা খাটুনির কাজ শেষ হলো, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলও যেন রিশান; এখন সবকিছু ঠিকঠাক মত কাজ করলেই হয়। প্রবল উত্তেজনা আর সীমাহীন আশংকা নিয়ে রিমোটের অন বাটনে চাপ দেয় রিশান। এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড .. পাঁচ সেকেন্ড চলে যায় কোন পরিবর্তন দেখা যায় না পিয়েলার শরীরে । পাঁচ সেকেন্ড রিশানের কাছে মনে হয় পাঁচ যুগ পার হয়ে গেছে ! ছয় সেকেন্ডের মাথায় ধীরে ধীরে চোখের পাতা খোলে পিয়েলা ঠিক যেভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠে কোন মানুষ!
খুশিতে শিস্ দিয়ে উঠে রিশান, ছোট ছোট পদক্ষেপে পিয়েলার দিকে এগিয়ে যায় সে; ভাবলেশহীন চোখে তার চোখের দিকে থাকে পিয়েলা। চমকে উঠে রিশান! এমন নির্লিপ্ত চোখ! যে চোখে কোন আবেগ নেই, নেই কোন ভালোবাসা, রাগ, ক্ষোভ, ব্যথা, আছে শুধু অসীম শূন্য দৃষ্টি। রিশান জানে রোবট পিয়েলার শুধু পঞ্চেন্দ্রিয় সংযোগ করা হয়েছে এখনও আবেগ যোগ করা হয়নি, তাই তার দৃষ্টি এমনই হওয়ার কথা, কিন্তু তবুও সে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
হঠাৎ হাতের কফির মগটা আস্তে করে পিয়েলার মাথা লক্ষ করে ছুঁড়ে মারে রিশান, আর সাথে সাথে পিয়েলা একেবারে স্বাভাবিক মানুষের মত মাথাটা নিচু করে ছুঁড়ে দেওয়া মগটা এড়িয়ে যায়। খুশিতে নেচে উঠে রিশান, আহঃ, দৃষ্টি একদম ঠিক মত কাজ করছে ।
এবার সোজা এগিয়ে যায় রিশান, আলতো করে একটু ছোঁয় পিয়েলার গালটা, যেন কারেন্টের শক খেয়েছে এমন ভাবে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে পিয়েলার। বুকের উপর কান পাতে রিশান, শুনতে পায় ক্রমাগত দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে পিয়েলার কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের গতি। হঠাৎ গতি সঞ্চার হয় রিশানের হাতে, গালের উপর দিয়ে বুলাতে বুলাতে তার হাত চলে যায় ঘাড়ে, সেখান থেকে আস্তে আস্তে চলে যায় পিঠে, তারপর সমগ্র শরীরে। হাত বুলানো অবস্থায় রিশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে পিয়েলার প্রতিটি কম্পন, কপালের কুঁচকে যাওয়া, চোখের পাতার দ্রুত উঠানামা। শেষে নাভির উপর যখন তার হাত আসে তখন পিয়েলার কোমর দুলে উঠে, পেটটা একটু চেপে ধরে অস্ফুট একটা আওয়াজ করে এক পা পিছনে চলে যায় সে। এইবার নাভির কাছে বেশ জোরে একটা চিমটি কাটে সে, মৃদু চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে পিয়েলা । আনন্দে নেচে উঠে রিশানের মন! পারফেক্ট! একে বারে পারফেক্ট মানবীয় অনুভূতি! পারফেক্ট!
তবে গলার স্বরটা এখনও ঠিক মত ম্যাচ হয়নি, এখনও মনে হয় ফাঁপা কোন পাইপের ভিতর দিয়ে কথা বলছে কেউ। মানবি পিয়েলার কণ্ঠস্বরের সাথে ঠিকমত সুপারইমপোজ হয়নি, ফ্রিকোয়েন্সিটা টিউন করতে হবে ঠিকমত। আর তর সই ছিলোনা রিশানের , সাথে সাথে পিয়েলাকে অফ করে ইস্পাতের করোটির উপর থেকে চুল সরিয়ে কপোট্টনের ভিতর থেকে ভোকাল প্রসেসরটা বের করে কাজে লেগে যায় সে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ভোকাল প্রসেসরের রিপেয়ারিং। পাওয়ার অন করতেই চোখ খুলে তাকায় পিয়েলা।
- রিশান তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আমি রিশান, তোমার নাম কি?"
একজন সাধারণ মানুষকে কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দিতে যতটুকু সময় নেয় পিয়েলা ঠিক ততটুকু সময় নিয়ে বলে, "আমার নাম, জেনারেশন নাইন টি.পি.টি.নাইন জিরো।
- চমকে উঠে রিশান! অবিকল পিয়েলার কণ্ঠস্বর! বুকের ভিতর কান্নার মেঘ জমা হতে থাকে, অনেক কষ্টের নিজেকে সংযত করে বলে, "ঐসব ডাটা মুছে ফেলো, এখন থেকে তোমার নাম 'পিয়েলা লিয়ান' তবে আমি তোমাকে 'পিলি' বলে ডাকবো", এখন বলো তোমার নাম কি?
উত্তর দেয়, "আমার নাম পিয়েলা লিয়ান " ।
- ঠিক আছে, তবে বলো "রিশান, আমার নাম পিয়েরা লিয়ান"।
এইবার সে বলে , "রিশান, আমার নাম পিয়েরা লিয়ান" ।
- আবার বলো।
"রিশান, আমার নাম পিয়েরা লিয়ান" ।
- আবার বলো ।
"রিশান, আমার নাম পিয়েলা লিয়ান" ।
এইবার সব সংযমের বাঁধভেঙ্গে যায় রিশানের, সে তার পিলিকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে। তার বাহুডোরে আটকা পড়ে পিয়েরাঅনুভূতি শূন্য চোখে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে আর ভাবতে থাকে, কি হলো হঠাৎ করে রিশানের? সে তার কোমল হাত দিয়ে রিশানের পিঠে পরশ বুলাতে থাকে, বুলাতে থাকে; ভাবলেশহীন।
YOU ARE READING
(কল্প-গল্প) - রোবসেপিয়ান্সের ভালোবাসা
Science Fiction......... "তুই কি পাগল হয়ে গেলি?" উত্তরে রিশান শুধু বলেছিলো পিছনের সবকিছুকে ভুলে যেতে চাই, একেবারে নতুন করে সাজাতে চাই জীবনকে। আসলে রিশান মিথ্যে কথা বলেছিলো বন্ধুদের; শুধু কি বন্ধুদেরই মিথ্যে বলেছিল? না কি নিজের সাথেও?...............