পর্ব - ৬ (শেষ)

251 19 5
                                    

৮.

আজ রিশানের জীবনে একটা বিশেষ দিন, সকাল থেকেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে, আজকে পিয়েলার কোপোট্রনে "ভালোবাসা-ঘৃণা" অনুভূতি প্রবেশ করাবে সে। আজকেই শেষ হবে তার জীবনের সেরা মিশন বাস্তবায়নের পথচলা।

পিয়েলার কোপোট্রনের ভিতর থেকে খুব সাবধানে কাঁপাকাঁপা হাতে পাঁচ নাম্বার অনুভূতির প্রসেসরটা বের করে রিশান। তারপর পুরো প্রোগ্রামটা লোড করে আবার ঠিক জায়গা মত ঢুকিয়ে তিন পা পিছনে গিয়ে পাওয়ার সুইচটা অন করে রিশান।

চোখ খুলে তাকিয়ে পিয়েলা দেখে তার সামনে দাড়িয়ে আছে রিশান, তার ভালোবাসার রিশান ! সে আবেশে আবার চোখ বন্ধ করে আবার খুলে, তারপর বলে, " রিশান আমি এখন বুঝি ভালোবাসা কি জিনিস"। আমি মরমে মরমে অনুভব করছি, আমার শরীরের প্রতিটা কোষ অনুভব করছে তোমার জন্য পরম ভালোবাসা। কিন্তু আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না, কেমন এই অনুভূতি।

রিশান পিয়েলার চোখে চোখ রেখে বলে, " পিলি, তোমার বুকে যেমন ভালোবাসার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আমার বুকেও রয়েছে ঠিক তেমন ভালোবাসা তোমার জন্য। আসলে মানুষের এই একটা অনুভূতি যাকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । বলেই পিয়েলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে রিশান, "আমাকে শুধু এমন ভালোবাসায় ঘিরে রেখো"

রিশানের মাথায় নিজের গালটা রেখে তার ঘাড়ে পিঠে হাত বুলাতে থাকে পৃথিবীর প্রথম রোবসেপিয়ান্স পিয়েলা লিয়ান আর ভাবে , "ওহ! রিশান এভাবে বলো না, প্লিজ; তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না"।

৯.

গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় রিশানের। হাত বাড়িয়ে দেখে বিছানায় পিয়েলা নেই। হয়তো ওয়াশরুমে গিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ পরও সে ফিরে না আসলে রিশান বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে উকি দেয়, ওয়াশরুম ফাঁকা ! তাহলে এতরাতে কোথায় গেলো পিয়েলা?

ঘুরে ঘুরে বসার ঘর, খাবার ঘর সব ঘরে খুঁজতে থাকে রিশান, কিন্তু কোথাও নেই পিয়েলা ! হঠাৎ বারান্দা থেকে একজন পুরুষ মানুষের গলার স্বর শুনে চমকে উঠে রিশান । কান পাতে সে, শুনতে পায় পিয়েলা বলছে, " ওহ! গড ! এত মানুষ ! আমি তো ভাবতাম পৃথিবীতে আমি, তুমি আর রিশান আর তার পরিচিত কয়েকজন ছাড়া কেউ নেই"

পুরুষ কণ্ঠটা বলে, " জ্বি , একদম সত্যি কথা, পৃথিবীতে চারশো কোটি মানুষ। তুমিতো পড়ে থাক লোকালয় থেকে দুরে নির্জন স্থানে । এখানে জীবন কত আনন্দের ! সিনেমা হল, নাইট ক্লাব, থিম পার্ক , সমুদ্র , আরও কত কি!"

পিয়েলা বলে, " সমুদ্র কি? "

তুমি সমুদ্র দেখনি ? ওহ ! রিশান একটা সাইকো, ও তোমাকে পৃথিবীর তাবৎ আনন্দ থেকে দুরে রেখেছে, তোমাদের বাড়ির সামনে যে লেকটা আছে না, সমুদ্র হলো এর থেকে লক্ষগুণ বড় জলাধার, তুমি এপার থেকে ওপার দেখতে পাবে না, বিশাল বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ে বিকট গর্জনে। তুমি আমার কাছে চলে আসো, তোমাকে আমি সমগ্র পৃথিবী ঘুরিয়ে দেখাব। পিয়েলা, পৃথিবী তোমার ধারনার চেয়েও অনেক অনেক গুন বড় "

পিয়েলা বলে, "ইস্ ! আমার তো এখনই উড়ে চলে আসতে ইচ্ছার করছে "

এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় রিশানের ক্রোধ, চিৎকার দিয়ে সে বারান্দায় ঢুকে, দেখে পিয়েলা মোবাইলে ভিডিও আলাপ করছে ভ্লাদিমিরের সাথে। রাগে গজগজ করতে করতে সে বলে, শেষ পর্যন্ত তোমার এই রূপ পিয়েলা ?

পিয়েলা নিশ্চুপ !

হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে তাকে বেডরুমে নিয়ে আসে রিশান, নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তার এই মুহূর্তে, ড্রয়ার থেকে হেঁচকা টানে বের করে এটমিক ব্লাস্টার। তাক করে পিয়েলার মাথায়।

অস্ফুটভাবে পিয়েরা শুধু বলতে থাকে , " প্লিজ ! প্লিজ " ।

চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে রিশানের, একবার চোখ বন্ধ করে আবার মাথা ঝাঁকায়, বলে কেন এমন কর তুমি বারবার? কেন? শুধু আমাকে নিয়ে কি সুখী হওয়া যায় না? কেন? কেন? কেন তোমার সমগ্র পৃথিবী চাই?

বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক ... হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে প্রচণ্ড ক্রোধ টেনে দেয় ট্রিগার, ধ্বংস করে পিয়েলা লিয়ানকে যেমন ভাবে হত্যা করেছিলো সে প্রথম পিয়েলা লিয়ানকে, পার্থক্য শুধু এতটুকুই এইবার আর আত্মহত্যার প্রমাণ করার জন্য কোন তৎপরতা চালাতে হবে না ।

হো হো করে হেসে উঠে রিশান হঠাৎ করে, সে বুঝতে পারে, ভালোবাসার ঋণাত্মক আবেগ শুধু ঘৃণা নয় , এর সাথে ছোট একটা মান হিসাবে আছে "বিশ্বাসঘাতকতা", যে মানটাকে খুবই ক্ষুদ্র বলে রিশান বাদ দিয়েছিলো। হা হা করে হাসছে রিশান মাটিতে গড়াগড়ি করে, আর চোখ দিয়ে ঝরছে ক্রমাগত জল, মানুষ বড়ই অদ্ভুত! তার চেয়ে বেশি অদ্ভুত তার আবেগগুলো।

পরিশিষ্ট

তিনমাস পর; এ্যাথেনা কপোট্রনস লিমিটেড এর ল্যাব থেকে আবার চুরি হয়। চোর এবার নিয়ে যায় সর্বাধুনিক কপোট্রন G10 সিরিজের TPP10 কপোট্রনটি।

🎉 Dokončil/a jsi příběh (কল্প-গল্প) - রোবসেপিয়ান্সের ভালোবাসা 🎉
(কল্প-গল্প) - রোবসেপিয়ান্সের ভালোবাসাKde žijí příběhy. Začni objevovat