বাংলোর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অপলক নেত্রে সিদ্রার দিকে তাকিয়ে রইল রাইয়্যান। প্রচণ্ড অপরাধবোধে মনটা ভারী হয়ে আছে ওর। শেষের কথাটা বলেই বুঝেছিল, বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে, কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। চড় খেয়ে মাথা আরো ঠিক রাখতে পারেনি। কিন্তু সিদ্রা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতেই হুঁশ ফিরেছে ওর, এটা কি করলাম! প্রথমদিন যখন মার খেয়ে সিদ্রা জ্ঞান হারিয়েছিল, সেদিনই মনে মনে ঠিক করেছিল রাইয়্যান, যাই করি, আর গায়ে হাত তুলবনা। এতটা অমানুষ হতে ওর নিজেরও গায়ে বাধে। কিন্তু সিদ্রার মিথ্যা কথাগুলো শুনলেই মাথায় রক্ত চড়ে যায় ওর। দোষ করেছিস তো সেটা স্বীকার কর, তা না, সব সময় এক কথা জপে যাচ্ছে, আমি কিছু করিনি। হাতেনাতে প্রমাণ পাবার পর এত মিথ্যা কি সহ্য করা যায়!
তাড়াতাড়ি করে সিদ্রার মাথাটা তুলে ধরতে গিয়ে চেহারার দিকে তাকায় রাইয়্যান, প্রচণ্ড অবাক হয় ও। অনেকদিন মেয়েটার চেহারা ভাল করে খেয়াল করা হয়নি। মেয়েটা সব সময় মাথা নিচু করে কাজ করে, আর ইদানীং কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছিল। এক মাস আগের চেহারার সাথে মেলানোই যাচ্ছেনা, এত বদলে গেছে। চাপা ভেঙে গেছে, চোখের নিচে কালি, কোথায় সেই আগের রূপ-লাবণ্য! শুধু একটা জিনিস আগের মতই আছে, নিষ্পাপ পবিত্র একটা নূরানি আভা।
কিডন্যাপ করার দিন নেকাব খুলে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছিল রাইয়্যান, পাক্কা কয়েক মিনিট চোখ সরাতে পারেনি। তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে ছবি বের করে মিলিয়েছিল, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, এটাই সেই মেয়ে। এখনো ওর দিকে তাকালেই সেই পবিত্রতার ছটা অনুভব করে রাইয়্যান, বুকের ভেতর একটা অস্বস্তি কাজ করে, যেন কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তখন জোর করে ওই অনুভূতিটা দূরে সরিয়ে রাখে রাইয়্যান, মনে করে ফারহানের কথা। এই রূপ তো ও নষ্টই তো করতে চেয়েছিল, কিন্তু আজ এত খারাপ লাগছে কেন!
এবার সিদ্রার শরীরের দিকে খেয়াল করল রাইয়্যান। ঢোলা জামা আর ওড়নায় ঢাকা থাকা সত্বেও বোঝা যাচ্ছে কত শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। ঘরে নেয়ার জন্য দুই হাত দিয়ে পাঁজাকোলায় তুলল ওকে। এবার আঁতকে উঠলো রাইয়্যান, এত হালকা! কম করে হলেও দশ কেজি ওজন কমেছে মেয়েটার। একমাসের খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মে এই অবস্থা! এভাবে চলতে থাকলে তো মেয়েটা অসুখে পড়ে যাবে। নাহ! খাওয়া দাওয়ার শাস্তিটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেছে, এবার একটু শিথিল করতে হবে। এতদিনে মাছ-গোস্ত তো দূরের কথা, একটা ডিমও খেতে দিইনি আমি ওকে।
কিন্তু, এখানে মাছ-গোস্ত আনা ঝামেলার ব্যাপার। খালার এমনিতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে, আরো ঝামেলা বাড়ানো ঠিক হবেনা। আর শীতের সময় পাহাড়ে যেই ঠাণ্ডা পড়ে, তখন তো এখানে রাখাই যাবেনা। তার থেকে বরং বাংলোয় নিয়ে যাই একে। কিন্তু বাংলোয় গেলে তো হাতের নাগালে অনেক কিছু পেয়ে যাবে, যদি পালানোর চেষ্টা করে? হুম, আমাকে এমন কিছু একটা করতে হবে, যাতে ও নিজে থেকেই পালানোর চিন্তা বাদ দেয়, ভাবল রাইয়্যান।
খালা পানি নিয়ে আসলে হাতে পানি নিয়েও থেমে যায় রাইয়্যান। জ্ঞান ফিরলে নিয়ে যেতে ঝামেলা করতে পারে মেয়েটা, তার থেকে এভাবেই নিয়ে যাই। জোরে পা চালালে বেশিক্ষণ লাগবেনা, আশা করি এতটুকু দেরীতে জ্ঞান ফিরলে কোন সমস্যা হবেনা।
এসব ভেবে খালাকে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে পেছনে আসতে বলে নিজে সিদ্রাকে কাঁধে তুলে রওনা দিয়েছিল বাংলোর দিকে। দোতলায় যে এক্সট্রা ঘর আছে, সেটাতে এনে রেখেছে ও সিদ্রাকে। এটাচড বাথরুম থেকে পানি এনে ছিটালো সিদ্রার মুখে।
*****
BINABASA MO ANG
যে গল্পের নাম ছিলনা
General Fictionঅচেনা এক লোক সিদ্রাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এলো জঙ্গলের এক কুঁড়েঘরে। শুরু করলো একের পর এক অত্যাচার। এমন অপরাধের শাস্তি ওকে দেয়া হচ্ছে যা করার কথা ও ভাবতেও পারেনা। কিন্তু তাহলে ও শাস্তি পাচ্ছে কেন? এই অত্যাচারের শেষ কোথায়? লেখিকার কথা: সম্পূর্ণ শখের বশে...