"ছোটনদা,আসার সময় আমার হাত ঘড়িটার ফিতাটা একটু পাল্টে আনবি? "বলেই মায়া ওর হাত থেকে ঘড়িটা খুলতে লাগল।তাকিয়ে দেখলাম ফিতেটা আসলেই একদম নরম হয়ে ছিড়ে যাওয়ার মতো হয়ে যাচ্ছে। মনটা খারাপ হলো, ওর জন্মদিনে খুব সুন্দর একটা ঘড়ি কিনে দেব বলে স্থির করলাম।
কিন্তু ঘড়িটা ও আমার হাতে দিতে যেয়েই থমকে গেল।
"কি হল?"
মায়া উত্তর না দিয়ে মুখ টিপে হাসছে। ওর এই হাসিটা খুব মারাত্মক। আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠে। ওর ওই দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটাকে কামড়ে ধরা মুহুর্তে, ওর পাশে রানী ক্লিওপেট্রা থাকলেও বোধহয় হার মানত আমার চোখে।
আমি চোখ অন্য দিকে সরালাম। ওর ওই হাসির সৌন্দর্য বিশ্লেষন করতে গেলে এখন আমি আসলে পাগল হবো। কথা না বাড়িয়ে ওর হাত থেকে ঘড়িটা নিয়ে সাথে সাথে প্যান্টের পকেটে চালান করে দিলাম।
আর কিছু?
মায়া উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়ল আস্তে করে। বের হতে যাব তখন বলে উঠল, "শোনো তোমার শার্টের তিন নম্বর বোতামটা খুব ঝুলছে, যে কোনো সময় পড়ে যেতে পারে। "
"এখন সময় হবে না, রাতে করে দিস।"
'তারমানে সারাদিনের যত নোংরা মেখে তারপর ওটা আমার হাতে দিবে? "
মনটা খারাপ হলো বুঝি রাজ নন্দীনির। আসলে ওকে এড়ালাম যে। আর ওর এই যখন তখন কপট রাগ আর অভিমান আমার খুব প্রিয় কিন্তু এই মুহূর্তে তার কোনোটাই উপভোগ করতে পারছিনা৷ আজ বেলা বারোটায় আমার একটা ইন্টারভিউ আছে, ব্যাংকের চাকরি। হলে আমার খুবই উপকার হয়। চয়নদার সাথে পাল্লা- পাল্লিতে জিততে গেলে আমাকে খুব তাড়াতাড়ি একটা চাকরি জোগার করতে হবে। সময় যেন বড্ড দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে।
ভালবাসি বলার আগের সময়টা যেন শামুকের খোলে দিন কাটান, এখন ঠিক তার উল্টা। সেই সময়ই আজ যেন নদীর দুর্বার ধারা, তীব্র বেগে বয়ে চলেছে অসংখ্য নুড়ি পাথর ভাঙতে ভাঙতে। আমি পাল্লা দিয়ে তার সাথে পারছিনা।
আসলে 'ভালবাসি' শব্দটা এখন আর শুধু মুখে আটকে নেই,ওটা বহুদিন আগে পেরিয়ে এসেছি। দায়িত্বটা এখন গায়ে চেপে বসেছে।