Part - 22

152 7 0
                                    


দাসী যখন জিজ্ঞেস করল তারা কি করবে তখন মায়া নিজেও জানে না যে আসলে কি করবে?? কারন তার মাথায় আসছেনা কি বলবে?? ওই দাসী টি অধৈর্য্য হয়ে আরেকবার বলে উঠল
.
---- রাণী মায়া!!!
.
মায়া দাসীটির দিকে তাকালো।। ভয়ার্ত চেহারা টা নিশ্চল হয়ে আছে।। শুকিয়ে যাওয়া মুথে বার ঢোক ঢোক গিলছে।। একরাশ আতঙ্কে নীল হয়ে যাওয়া চেহারা নিয়ে মায়ার দিকে তাকাচ্ছে।। মায়ার কিছু একটা করা দরকার।।
অনেক ভেবে চিন্তে মায়া তাকে বলল
.
---- কে আসছে??
.
--- সম্রাট এদিকে আসছেন রাণী মায়া।।
.
--- আমি কে??
.
এই প্রশ্নে ভ্যাবাচাকা খেল দাসী টি।। হা করে তাকিয়ে রইল মায়ার মুখের দিকে।। মায়া আবারো ওই দাসী কে জিজ্ঞেস করল
.
----- আমি কে?? বল
.
---- রা-রাণী মা-মায়া আ-আপনি তো সম্রাজ্ঞী!!
.
---- কার সম্রাজ্ঞী???
.
---- সম্রাটেরর!!
.
---- যখন তোমার সম্রাটের সম্রাজ্ঞী পাশে আছে তখন তুমি কিসের ভয় করতেছো??
.
---- রাণী মা"""""""
.
---- শসসসসসহ!!! আর কোনো কথা নাহ!!
.
মায়া দাসী কে তো বলে দিল যে সে সম্রাজ্ঞী।। সম্রাজ্ঞী থাকতে তার কোনো ভয়ের কারন নেই।। কিন্তু সম্রাজ্ঞী হয়ে মায়া কি করতে পারবে তা মায়ার জানা নেই।। উপরন্তু নিজের গায়েও দাসীর কাপড়।। প্রশ্ন তো উঠবে এখানে কি জন্যে এসেছে।। 
মায়ার ভাবনায় ছেদ পড়ল টক টক আওয়াজে।। কেউ এগিয়ে আসছে।। তার পায়ের জুতার শব্দ পাথরের কয়েদখানায় অনবরত শব্দ সৃষ্টি করে চলেছে।। মায়া একটু করে চোখ তুলে উপরে তাকালো।। লম্বা গলির দুর থেকে ওই বার্বান সম্রাট কে দ্রুত পায়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।। তার দ্রুত পায়ের সাথে সহচর রা তাল মিলাতে পারছেনা।। বার বার পিছিয়ে পড়ছে।। তাই সম্রাটের সাথে তাল মিলাতে তাদের অনেক টা দৌড়াতে হচ্ছে।। মায়া মাথা নামিয়ে ফেলল।। চোখ দেখলেই ওই সম্রাট বুঝে যাবে সে কে??
ওই বার্বান সম্রাট যতই এগিয়ে আসছে ততই মায়ার চঞ্চলতা বেড়ে যাচ্ছে।। মনে মনে ঈশ্বর কে ডাকছে যেন ধরা না পড়ে।। একসময় সম্রাট অলোক এসে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।। অলোকের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে আসা হালকা বাতাসে মায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।। তারপর পাশে তাকিয়ে দেখলো দাসী টা এখনো চোখ বন্ধ অবস্থায় ঠক ঠক করে কাপছে।। মায়া তাকে মৃদু ভাবে ধাক্কা দিল।। মায়ার ধাক্কা খেয়ে দাসী টি চোখ খুলল।। তারপর কাপা কাপা চোখে মায়ার দিকে পলক না ফেলে তাকালো।। মায়া নির্ভয় দেয়ার জন্য একটু করে হাসার চেষ্টা করল।। কিন্তু কাজ হল না।। তার আগেই দাসী টি ধপাস করে মেঝে তে পড়ে গেল।। মায়ার বুঝতে সময় লাগল কি হল।। কেনই বা দাসী টি পড়ে গেল।। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই মায়া তাড়াতাড়ি দেখতে লাগল।। কি হয়েছে মেয়েটির।। হাতের নাড়ীর স্পন্দন দেখে মায়ার চিন্তা দূর হল।। সামান্য অজ্ঞান হয়েছে।। বেশি কিছু না।। একটু পানি ছিটকে দিলে উঠে যাবে।। তাই দাসী কে সেখানে রেখে সামনে হাটতে লাগল।। সে পাহারাদার কে জিজ্ঞেস করল পানি কোথায় পাবে?? পাহারাদার সামনে দেখিয়ে দিল।। পানির খোজে মায়া আরো সামনে এগিয়ে যেতে লাগল।। কিন্তু কোথায় পানি?? কোনো পানির পাত্রই তো নজরে পড়ছে না।। এভাবে আরো কিছুদুর এগিয়ে যেতেই একটা মাটির পাত্র নজরে এলো।। ওই পাত্র থেকে পানি নিতেই পিছন থেকে কারো বাজখাই গলার ডাক শুনতে পেল।।
.
----- এই ই কে তুমি???
.
তাকেই বলা হচ্ছে।। মাথা ঘুরিয়ে তাকালো।। কুচকুচে কালো ধরনের মোটা শরীরের একজন সৈন্য।। হয়ত টহলদার।। তার ভয়ঙ্কর গোফ যে কাউকে ভয় দেখাতে পারে।। মায়া খানিকটা ইতস্থত করে বলল
.
----- আ-আমি রাণী মায়ার দাসী!! আমার সেহেলি বেহুশ হয়ে পড়ে আছে।। তার জন্য পানি নিতে এসেছি।।
.
সন্দিগ্ন চোখে ওই টহলদার বলল
.
---- অন্দরমহল থেকে এই অন্ধকার কয়েদ খানায় এসেছো পানির খোজে??
.
---- না নাহ!! আমার সেহেলি আর আমি একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।। কিন্তু সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।। তাই পানিই"""""
.
----- কোথায় তোমার সেহেলি??
.
---- ও-ওই যে ওখানে আছে।।
.
---- চল দেখি কোথায় আছে।।
.
মায়ার কথা বিশ্বাস না হওয়ায় টহল দার মায়ার সাথে গিয়ে দেখলেন।। কিন্তু সেখানে অসুস্থ কেউ ছিল না।। মায়া ভীষন অবাক হয়ে গেল।। ওই দাসী কে তো সে এই খানেই রেখে এসেছিল।। কিন্তু এখন কোথায় গেল?? চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে বলল
.
----- এ-এই খানেই আমার সেহেলি ছিল।। বিশ্বাস করেন!!! আমি ওর জন্য পানি আনতে গিয়েছিলাম।।
.
লোকটি এত কথা না শুনে গম্ভীর গলায় বলল
.
---- কার সাথে দেখা করতে এসেছিল??
.
---- আ-আমি এসেছিলাম একজন মানুষের সাথে দেখা করতে।।
.
---- মানুষটা কে??
.
---- বী""""
.
মায়া আর কিছু বলতে পারল না।। যেন আপনা আপনিই কথা বন্ধ হয়ে গেল।। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন টহল দার টা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল।। তলোয়ার টা বের মায়ার দিকে ধরে ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠল
.
---- কে তুমি পরিচয় দাও?? গুপ্তচরী করতে এসেছো?? বল?? কাদের গুপ্তচর তুমি??
.
মায়া জবাব দিতে পারলো না।। শুধু চোখ দুটো ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।।। ওর কাছে কোনো জবাব না পেয়ে ওই টহল দার তার বাহু টা হেচকা দিয়ে টান দিয়ে হিচড়ে নিয়ে যেত লাগল
.
---- ছেড়ে দাও বলছি!! আমি কিছু করি নি।। আমি কোন গুপ্তচর না।। অনেক পস্তাবে তুমি।। জলদি ছাড়ো আমাকে।।
.
কথা শুনে টহল দার মোটেও পরোয়া করল না।। বরং আরো জোরে মায়ার বাহু চেপে ধরল।। ব্যাথায় মায়া আর্তনাদ করে উঠল।। টহল দার তাকে কোথাও টেনে নিয়ে যাচ্ছে।। এরপর টেনে নিয়ে একটা কয়েদ খানার ভিতরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিল।। মায়া তখনো চিৎকার করছে।। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না।। 
******************************
অলোক এসেছিল কয়েদখানায় সম্প্রতি বন্দি কৃত কুখ্যাত জলদস্যু দের দেখতে।। বার্বান সাম্রাজ্যের সমুদ্র অঞ্চলে প্রায় জলদস্যু গুলো লুট পাট করে জন জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল।। তাই অলোক তার বিশ্বস্থ ও দক্ষ একদল সৈন্য কে তাদের দমন করতে পাঠালেন।। এবং দলটি সফল ভাবে জলদস্যু দের দমন করে তাদের দলনেতা কে বন্দি করে নিয়ে এসেছে।। কাল দরবারে নিয়ে যাওয়া হবে বিচারের জন্য।। তবে তার আগে তাদের অন্যান্য সহযোগী দের সম্পর্কে তথ্য চান।। কয়েদখানার ভিতরে ঢুকে প্রথমে তার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল।। কারন হালকা একটা সুগন্ধি তার নাকে ধাক্কা দিয়েছিল।। এবং এই সুগন্ধি টার সাথে সে ভালো ভাবে পরিচিত।। এই সুগন্ধি তার ভালোবাসার সম্রাজ্ঞী..... মায়ার।। কিন্তু সেটা ভ্রম বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।। কারন মায়া এখানে কেন আসতে যাবে?? মায়া তার কক্ষে নিদ্রায় রয়েছে।। কিন্তু যখন একটা তীক্ষ্ণ মেয়েলি চিৎকারের কন্ঠ তার কানে পৌছালো তখন তার কান খাড়া হয়ে গিয়েছিল।। কারন কন্ঠ টা তার অনেক চেনা বলে মনে হচ্ছে।। একজন সৈন্য পাঠিয়ে দিল অনুসন্ধান করতে।। সৈন্য টি সব দেখে এসে অলোক কে জানালো যে টহল দার সন্দেহভাজন এক দাসী কে কয়েদখানায় আটকে রেখেছে।। যে নিজেকে রাণী মায়ার খাস দাসী বলে অভিহিত করছে।। কথা শুনে অলোক ভ্রু কুচকালো।। কারন মায়ার খাস দাসী হচ্ছে লিয়া।। তাহলে লিয়া এখানে কেন আসবে?? অন্দর মহলের কারো এখানে আসা নিষিদ্ধ।। যদি ভুল ক্রমে কেউ এসে পড়ে তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।। লিয়া জেনে শুনে এত বড় ভুল করবে না।। কিন্তু তাকে যদি মায়া পাঠিয়ে থাকে?? না নাহ!!! মায়া কেন পাঠাবে?? যদিও পাঠায় তাহলে কার জন্য?? বীরের জন্য নয়তো?? তাহলে মায়া কি সব জেনে গেছে?? 
অলোক আর ভাবলো না।। সৈন্য কে নির্দেশ দিল বন্দিকৃত সন্দেহ ভাজন দাসী কে নিয়ে আসার জন্য।। 
.
(চলবে)
.

Every Thing Is Fair In Love And War ♥Où les histoires vivent. Découvrez maintenant