Part - 34

160 8 0
                                    


ঘুমের রেশ কাটতেই মায়া চোখ খুলে তাকালো। বেশ অপরিচিত জায়গা মনে হচ্ছে। ঘুমের রেশ ভেবে সে আবারো চোখ মুদলো। বেশ কিছুক্ষন পর আবারো চোখ খুলল। এবারো চোখ খুলে নিজেকে একই জায়গায় দেখলো। পর পর দুবার নিজেকে একই জায়গায় দেখে চোখ কচলালো মায়া। নাহ! সে সঠিক দেখছে। এটা তার কক্ষ না। অপরিচিত একটা কক্ষ। যেখানে আগে কখনো সে আসেনি। কিছুটা উদ্ভিগ্ন হয়ে উঠে বসলো সে। চারপাশে অতি পুরোনো কিছু সামগ্রী। তার কক্ষ এর চাইতে বিশাল আর রাজকীয় ছিল। তার তুলনায় এটা কিছু না। খানিকটা ধূলোময় একটা কক্ষ। মায়া খানিকটা দমে গেল। কি ব্যাপার? ও এখানে কেন? বিছানা থেকে নামতে যাবে এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হল। 
দারাহ এসেছে। হাত ভর্তি বিভিন্ন ধরনের খাবারের থালা। মায়া ভ্রু কুচকে দারাহের দিকে তাকালো।
---- কি ব্যাপার দারাহ? আমি এখানে কেন?
দারাহ কুর্নিশ করে জানালো
---- সম্রাটের আদেশ এটা রাণী মায়া। তিনিই আপনাকে এখানে এনেছেন এবং এখান থেকে আপনাকে বেরুতে মানা করা হয়েছে।
---- কেন? কি জন্যে?
---- আমি জানি না সম্রাজ্ঞী। 
---- তাহলে বিনা কারনে আমি এখানে কেন থাকবো? আমাকে কি নজর বন্দি করা হয়েছে?
----- মহামান্য সম্রাজ্ঞী সেটা তো শুধু মাত্র সম্রাট জানেন। আমি তো এখানে পাহারাদার মাত্র।
.
মায়া কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। হঠাৎ তাকে এভাবে নজর বন্দি করার মানেটা কি? সে কি কোনো অপরাধ করেছে?
.
গোসল সেরে বসতেই দারাহ মায়ার সামনে সব খাবার পরিবেশন করল। মায়া খেতে লাগল চুপচাপ। হঠাৎ মায়ার মনে হল নিশ্চয় তাকে বিদ্রোহী দের সাথে সংযোগ রাখার কারনে বন্দি রাখা হয়েছে। ভাবতেই মায়া কিছুটা ঘাবড়ে গেল।। যদি তাকে বন্দি করা হয় তাহলে এটায় একটা কারন। যে কারনে সে বন্দি হতে পারে। 
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে দারাহ পুনরায় দরজা বন্ধ করে বের হয়ে গেল। প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা কামরায় মায়া একদম একা হয়ে গেল। কক্ষ টা বদ্ধ না হলেও মায়ার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। সে একবার বিভীষার কাছে শুনেছিল যে কোনো একটা অপরাধের কারনে একজন সম্রাট তার মাতা কে এভাবে একটা বদ্ধ কামরায় নজর বন্দি হিসেবে রেখেছিলেন।। দীর্ঘ ২০ বছর তিনি একটি কক্ষে নজর বন্দি ছিল। সে অবস্থায় ধুকে ধুকে খুব করুন ভাবে তার মৃত্যু হয়। মায়ার ভাগ্যেও কি তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে? হতেও পারে। 
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মায়া। বাকি জীবন টা কি তার এখানেই কাটতে যাচ্ছে?
.
অলোক তার সাম্রাজ্যে আক্রমন ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি নিল। গোপন খবরের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে যে আজকের সন্ধার মধ্যে তার রাজ্যে আক্রমন হতে চলেছে। সে জন্য অলোক পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ স্থান হল রাজধানী। আক্রমন রাজধানী তে হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই অলোক পুরো রাজধানী তে নিরাপত্তা বলয় দিয়ে রেখেছে। বার্বান রাজ প্রাসাধে রেখেছে তিন/চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। কিছু একটা মনে এনে অলোক মায়া কে প্রাসাধ থেকে দুরবর্তী স্থানে বন্দি রেখেছে। তাও মায়ার সুরক্ষার জন্য।
দুশ্চিন্তায় পুরো রাজ্যে নজর রাখতে লাগল অলোক। যাতে কোনো বিষয় তার আড়ালে থেকে না যায়। কিন্তু সন্ধা নামতে না নামতে প্রথম দুসঃবাদ টা সে পেল। ঈরানভার বিদ্রোহী রা তাদের রাজ্য দখল করে নিয়েছে। সেখানে স্থানীয় রা সাহায্য করায় তার শাসন কর্তারা কিছুই করতে পারে নি বরং জান নিয়ে পালিয়ে এসেছে। কিছু মারা পড়েছে, কিছু বা বন্দি। ঈরানভা অলোকের হাত থেকে ছুটে গেল।। খবর টা পেতেই তার হাত কেমন যেন নিশ পিশ করতে লাগল। বিদ্রোহীরা যে গোপনে এতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে সেটা তার আন্দাজ ছিল না। 
.
এদিকে আগের দিন হতেই বার্বান রাজ্যের রাজধানী তে বিভিন্ন অপরিচিত মানুষের আনা গোনা হতে থাকে। কেউ ব্যবসায়ি, কেউ পর্যটক কেউ বা সাধারন মানুষের বেশে আসতে লাগল। এক কাফেলায় পনের/বিশ জনের বেশি মানুষ না থাকায় কেউ সন্দেহ করতে পারলো না। নিঃসন্দেহে তারা অল্প অল্প করে পুরো মহলের আশে পাশে ছড়িয়ে গেল।
সন্ধা নামতে না নামতে মহলের আশ পাশে বিশৃঙ্খলতা শুরু হয়ে গেল। বিদ্রোহী ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে লাগলো। মহলের বিভিন্ন সৈন্য অতর্কিত আক্রমনে মারার পড়তে লাগলো। অলোক তখন তার সেনাপ্রধান সহ রাজধানীর অবস্থা পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু খবর পৌছতেই দ্রুত চলে আসলেন। চারদিকে চিৎকার, চেঁচামেচি তলোয়াড়ের ঝন ঝনাৎ শব্দ একটা ভয়ানক পরিবেশের সৃষ্টি করে চলেছে।
দু পক্ষের সৈন্যররা আপ্রান ভাবে লড়াই করছে। বিদ্রোহী রা লড়ছে মহল দখল করতে আর বার্বান সৈন্যরা নড়ছে তাদের মহল বাচাঁতে। অলোক ও তার তলোয়াড় কোষ মুক্ত করে যুদ্ধে নেমে গেল। সাই সাই করে একেক জন মারা পড়তে লাগল।
.
মায়া চিন্তিত ভাবে এদিক সেদিক পায়চারী করছে। দূর থেকে অনেক হট্টগোলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। দারাহ কে জিজ্ঞেস করতেই দারাহ বলল মহলে বিদ্রোহীরা আক্রমন করেছে। তবে চিন্তার কারন নেই। বিদ্রোহীরা এদিক আসতে পারবেনা।
শুনে মায়ার চিন্তা বিন্দু মাত্রও কমলো না। বরং বেড়ে গেলো। দারাহ তাকে বার বার চিন্তিত না হয়ে শান্ত হয়ে বসার কথা বলছিল। কিন্তু মায়ার মোটে অস্থিরতা কমছেনা। 
অন্ধকার নেমে এলো। মহলের চারদিকে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বিদ্রোহীদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আর বার্বান রা প্রাণ পনে লড়ে যাচ্ছে তাদের মহল দখলে রাখতে। সু চতুর বিদ্রোহীরা সামনা সামনি যুদ্ধ না করে লুকিয়ে পাল্টা আক্রমন চালাচ্ছে। যাতে বার্বান রা সুযোগ না পায়। এদিকে অলোক আরো কয়েক হাজার সৈন্য পাঠানোর কথা বলে খবর পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু সৈন্য দের এখনো কোনো খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় মহল দখলে রাখা কঠিন হবে।
সৈন্য আসতে দেরী হওয়ায় অলোক নিজেই সরাসরি সামনা সামনি লড়তে লাগলো। বিদ্রোহীরা তাদের শত্রু বার্বান সম্রাট কে সামনে পেয়ে আরো বেশি আক্রমন চালাতে লাগল। সম্রাট কে শত্রুর মুখে দাড়িয়ে লড়তে দেখে বার্বান সৈন্য দের মনোবল ফিরে এলো। তারাও তাদের সম্রাটের ন্যায় সামনা সামনি এসে লড়তে লাগল।
.
মায়া কয়েকবার কক্ষ থেকে বেরুবার চেষ্টা করল। কিন্তু বরাবরই স্বাস্থ্যবতী সুঠাম দেহী দারাহের কারনে পারলো না। তাই সুচতুর মায়া কৌশলের আশ্রয় নিল। পেট ব্যাথার অভিনয় করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। মায়া কে পেট চেপে কাতরাতে দেখে উৎকন্ঠিত দারাহ কাছে এসে মায়া কে দেখতেই মায়া দারাহের কোমড় হতে চাবি নিয়ে নিল। অতপর দারাহ পানি নেয়ার জন্য একটু সরে গেলে মায়া দ্রুত গতিতে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে ফেলল। দারাহ সাথে সাথে দৌড়ে এলেও মায়ার নাগাল পেল না। 
মহলের অলিগলি ঘুরে অনেক কষ্টে যখন অন্দরমহলে প্রবেশ করল তখন তাকে থমকে দাড়াতে হল।
.
(চলবে)

Every Thing Is Fair In Love And War ♥Donde viven las historias. Descúbrelo ahora