ক্রাই অফ দ্যা ফিনিক্স

67 4 0
                                    

ক্রাই অফ দ্যা ফিনিক্স।

(১)
-"বুবু দিঘির পানিত নামেন না য্যান। পানি ভালা না।"
--" কেন রে? পায়ে শেকল দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে বুঝি?"
--"না,  সাপ-খোপ থাকে।"

নিলুফা একটু অবাকই হল লতার কথায়। ভেবেছিল গ্রামের আর দশটা মানুষের মত সেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন কোনো কারণ দর্শে তার দিঘিতে নামা নিরুৎসাহিত করবে। তবে সাপের কথা বললেও ওর চেহারায় একটা ভয় ভাব ছিল যেটা ঠিক বুঝতে পারল না। 

লতা জমিলা খালার মেয়ে। রাশেদের পৈতৃক ভিটেবাড়ির দেখাশোনা তারাই করেন। রাশেদের আর সব ভাই বোনেরা বিদেশে স্থায়ী। দেশে ফেরার ইচ্ছে নেই। রাশেদও নিলুফাকে নিয়ে ঢাকায় স্থায়ী। মধুমাসী অন্তঃসত্ত্বা নিলুফাকে শহরের ব্যস্ত রুটিন আর বিষাক্ত বাতাস থেকে ছুটি দিতেই এখানে বেড়াতে এনেছে। পুরোনো বাড়ি, নির্জন গ্রাম এসব নিয়ে কলেজে থাকতে কত ফ্যান্টাসি ছিল নিলুফার তার ইয়ত্তা নেই। তাই সত্যি সত্যি এক পুরোনো বাড়িতে থাকতে পেরে তার কৌতূহল তুঙ্গে।
নিলুফা বাড়ির পেছন দিকে দিঘীর কাছে হাটতে বেড়িয়েছে।

অবশ্য দিঘী না বলে পুকুর বলাটা মানানসই। এককালে হয়তো ছিল দিঘী, এখন তা বরং দিঘী নামে কলঙ্ক। শুনেছে আগে নাকি এই দিঘীর সাথে খাল জোড়া দিয়ে অদূরে নদীর সাথে সংযুক্ত করা ছিল। নদী থেকে নৌকা সরাসরি এসে এই দিঘীতে থামত। বণিক, ইরাজাদার, জেলে, অতিথি, প্রজা সবার সাথে এই দিঘীর সংলগ্ন বৈঠকখানায় কথা বলতেন নিজাম খা। রাশেদের পিতামহ।
তবে এখন এসব নেই। ভাঙা ঘাট, শ্যাওলা পড়ে কালো হয়ে যাওয়া সিড়ি, ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা এই জায়গাটায় অতীতের ছিটেফোঁটাও নেই।

অদূরে ঠায় দাড়ানো খা বাড়ি। ইংরেজির এল অক্ষরটার মত দোতলা ইট পাথরের কঙ্কাল। দেড়শ বছরের অনেক কিছুর সাক্ষী পৈতৃক নিবাসটা ব্যতিব্যস্তের অবহেলায় বুড়িয়ে গেছে বহু আগেই। ক্ষয়ে যাওয়া জৌলুস আর প্রতিপত্তির বিস্মৃত ইতিহাসের পসরা সাজিয়ে কোনোমতে ঠায় দাড়িয়ে ধুকে চলেছে খা বাড়ি।

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যে সরু মেঠো পথটা তা দিয়ে হেটে এসেছে নিলুফা। অবাক ব্যাপার হচ্ছে যে এত গাছগাছালি অথচ কোনো পাখির কলরব নেই। অথচ সন্ধ্যা নামতে অনেক দেরি। যদিও বিকেলেই অন্ধকার হয়ে আসছে।

প্রত্যাবর্তন (অতিপ্রাকৃত)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora