#ফাঁসির_সাথে_ব্রেকআপ
#ছোট_গল্পঃ০৭
#নউসিয়াত_জাহান.
—"সত্যি বলছি স্যার! এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না!"
—"তবে কি তুমি বলতে চাইছো আমি মিথ্যা বলছি?"
—"না, না, স্যার, আপনি কেন শুধুশুধু মিথ্যে বলবেন!"
—"তাহলে তুমি স্বীকার করছো যে গতকাল রাতে প্রিন্সিপাল স্যারের বাড়িতে চুরি হওয়ার সাথে তুমি জড়িত?"
—"না, না, স্যার, আমি কেন জড়িত থাকবো!"
—"সাট আপ!
রহিম! রহিম!"কনস্টেবল রহিম নিদ্রা-ঘোর থেকে থতমত খেয়ে উঠে দৌড়ে ওসি সাহেবের সামনে দাড়িয়ে স্যালুট দিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
—"ইয়েচ্ ছার্!"
—"ওকে এখুনি লক-আপে ঢুকাও!"
—"ওকে ছার্!"রহিম তারিফকে টেনে লক-আপে ঢুকিয়ে দিলো। তারিফের খুব কান্না পাচ্ছে। জীবনের প্রথম বারের মতো সে থানায় আসলো আর জেলে ঢুকলো। কান্না তো পাবেই।
তারিফ লক-আপ যতটা নোংরা হবে ভেবেছিলো এটা ঠিক এতোটা নোংরা না। ভেতরেও কোনো চুর ডাকাত ভরা নেই, দুইটা লাল রঙের হাতাওয়ালা আরএফএল প্লাস্টিক চেয়ার। যাই হোক না কেন, জেল তো জেল-ই! যত হাই-ফাই ই হোক না কেন।তারিফ চোখের সামনে যেন স্পষ্ট দেখতে পেলো সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আর জর্জ সাহেব বলছেন,
—"ওর্ডার! ওর্ডার! ওর্ডার! ১৩৬ ধারার আইন অনুযায়ী প্রিন্সিপাল স্যারের বাড়িতে চুরি করার অপরাধে তারিফ হোসেনকে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত করা হলো।"এরপর ফাঁসি! ওহ না…! তারিফ আর ভাবতেই পারছে না!
কেন যে কাল রাতে সে ভটলা সাইফুইল্লা অর্থাৎ তাদের কলেজের প্রিন্সিপালের বাড়িতে চুরি করতে গেলো!
সব দোষ ওই অনুপমার। অনু অযথা তার সাথে ঝগড়া করেছিলো আর বলেছিলো সে এতটাই অকর্মা যে জীবনে কোনো দিন চোরও হতে পারবে না! তাই সে অনুর সাথে বাজি ধরেছিলো যে রাতে প্রিন্সিপাল স্যারের বাড়িতে চুরি করে দেখিয়ে দিবে তার সাহসের পরিমাণ!
চুরি করে তো চলেও এসেছিলো। জীবনের প্রথমবার চুরি করেছে তাই বেশি কিছু আনতে পারে নি। স্যারের বাসার ড্রয়িং রোম থেকে টিভির রিমোট (টিভিটা বেশি বড় হওয়ায় আনতে পারে নি), দেয়ালে টাঙানো একটা হিজিবিজি পেইন্ট, সো-পিস, ডাইনিং টেবিলে রাখা কত গুলো পিতলের প্লেট, স্যারের সুন্দরী মেয়ের লেটেস্ট মোবাইল আই-ফোন এইট ইত্যাদি চুরি করেছিলো।
কিন্তু কোন ফাঁকে যে তারিফ নিজের মোবাইলটাই সেখানে ফেলে আসবে তা কে জানতো!
জীবনে প্রথম বার চুরির বলেই এতো বড় একটা ভুল হয়েছে। তারিফের বাবা নিশ্চই এখনো বিষয়টা জানে না। জানলে নির্ঘাত বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। বাড়ি থেকে বের করে দিলেই বা কি, তারিফ তো এখন জেলে বসে মশা মারছে। এখান থেকে কখনো বের হতে পারবে কী না কে জানে!
'সে এখন জেলের ভিতর বন্দি!', কথাটা মনে হলেই তো শরীর শিউরে ওঠে!তারিফ বিরবির করে বলে উঠলো, "অনুনি লো, তুই কই? তোর জন্য আজ আমার জেলের ভাত খেতে হবে! রায়হানের বাচ্চা রায়হান! শালা মেহেদি, শাঁকচুন্নি অন্তু! তোরা বন্ধু নামে কলঙ্ক! আমাকে একটাবার এসে দেখে গেলি না! আল্লাহ্ তুমি রহম করো! আমাকে ফাঁসি থেকে বাঁচাও…!"
.
কনস্টেবল রহিম ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে বললো, "ছার, ছার, পোলাটা জোরে জোরে কানতাছে!"
ওসি সাহেব বিরক্তি নিয়ে বললেন, "এত বড় ছেলে কাঁদছে! নিয়ে আসো তাকে।"তারিফ ওসি সাহেবের সামনে বসেও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
—"এই ছেলে কাঁদছো কেন? কান্না হচ্ছে ভীতু আর মেয়েদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। চেহারা দেখে তো বোঝা যায় না তুমি একটা ভীতুর ডিম!"
—"স্যার আমাকে ফাঁসি দিবেন না! আমি এখনো বিয়ে করিনি।"
—"এখানে ফাঁসির কথা কোথা থেকে আসছে?"
—"স্যার আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি অনু আমাকে চুরি করতে বাধ্য করেছিলো।"
—"এই অনুটা কে?"
—"ইয়ে মানে..."
—"গার্লফ্রেন্ড?"
—"জী স্যার, আমার কোনো দোষ নেই স্যার। আমাকে যেতে দিন, আর জীবনে এমন কাজ করবো না।"থানার ওসি এবার তারিফের মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন, "ফোন করো তোমার গার্লফ্রেন্ডকে এক্ষুনি। কুইক!"
—"কেন স্যার?"
—"আমি বলেছি তাই। ফোন করো তাহলে ছেড়ে দিবো। ফোন করে এক্ষুনি ব্রেক-আপ করো।"
—"এসব কী বলছেন স্যার! ব্রেক-আপ কেন করবো! ওকে আমি ভালোবাসি! "ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো তারিফ। কিন্তু ওসি তার ধার ধারলেন না, ধমক দিয়ে বললেন, "করো বলছি! ফাঁসিতে ঝুলতে না চাইলে ব্রেকআপ করো, নয়তো তোমাকে আমার খুনের আসামি বানাতে এক মিনিটও লাগবে না!"
অবশেষে ধমক খেয়ে ভয়ে বিষ্ময়ে তারিফ সেখানেই বসে অনুপমার সাথে ফোনে ব্রেক-আপ করলো।
এরপর ওসি সাহেব হেসে তারিফের পিঠে হাত রেখে বললেন, "আমার মেয়েটা তোমাকে পছন্দ করে। তোমার বাবাও যখন প্রস্তাব পাঠালেন তখন আমি ভাবলাম শহরের সবচেয়ে বড় ব্যারিস্টারের ছেলেকে মেয়ের জামাই বানালে মন্দ হয় না।"
তারিফ অসহায়ভাবে বললো, "ওহ আপনিই তাহলে দজ্জাল নিশাতের বাবা!"
ওসি সাহেবের দ্বিতীয় ধমক আর ভবিষ্যতে দজ্জাল বউ পেতে হবে সেটা ভেবেই তারিফ থানায় বসে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
.~০~
.
[বি: দ্র: ১৩৬ ধারা আইন শুধুমাত্র গল্পের স্বার্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো আইন নেই। :p]
(মার্চ,২০১৯)
ESTÁS LEYENDO
আমার কল্পে গড়া শহর
Historia Corta[ছোটগল্প সমগ্র] মাথায় মাঝেমধ্যে কিছু ছোট কাহিনী উঁকি দেয়, সময় পেলে সেগুলোকে ধরে এনে এখানে জমা রাখি।