পাচ মিনিট পরে আবিদ বাইক পার্ক করে ক্যাফেতে ঢুকলো। রাতুল আর মেঘ হাসা-হাসি করে কথা বলছিলো। হঠাৎ আবিদকে দেখে রাতুলের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আবিদের মুখটা এখনও ভুলেনী রাতুল। আবিদকে দেখেই রাতুল নিজে নিজে বলে, " স্যুট পড়ে একটা অসামাজিক জীব ঘুরছে! "। কিন্তু পরক্ষনে যখন আবিদ এসে ওদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওকেই হাসিমুখে সালাম দেয় তখন খানিক হতভম্ব হয় রাতুল। এই বেয়াদব ছেলেটাকে মেঘ কীভাবে পছন্দ করতে পারে?
আবিদ এসে রাতুলকে সালাম দেয়, " আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! "। রাতুল আবিদের সালামের উত্তর না দিয়েই দাঁড়িয়ে যায়। মেঘকে জিজ্ঞেস করে, - " এই কী তোমার পছন্দ করা ছেলে আবিদ? "
- " হ্যা ভাইয়া ও ই আবিদ! "
- " শোনো মেঘ এই যদি তোমার পছন্দ হয়। তাহলে এ ছেলের সাথে তোমার বিয়ে হবে না। আমি জেনে শুনে কোনো বেয়াদব, ম্যানারলেস অসামাজিক জীবের কাছে আমার বোনের বিয়ে দিবো না! "আবিদ আর মেঘের হাসিমাখা মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো!
একথা শুনে আবিদ যেনো কান দিয়ে আর কিছু শুনতেই পারছে না। আবিদ ঠিক বুঝতেই পারছে না মেঘের ভাইয়া এসব কী বলছে? কাকে বলছে আর কেনো বলছে? কারন এর আগে আবিদ মেঘের ভাইয়াকে কখনও দেখেই নী । তাহলে মেঘের ভাই কেনো এসব বলছে?
রাতুলের কথা শোনার পরে মেঘের তো কলিজা কেপে গেছে পুরো। মেঘের কণ্ঠস্বর যেনো বের হচ্ছে না। মেঘ ভেজা কন্ঠে কাপা স্বরে রাতুলকে জিজ্ঞেস করলো, " কী হয়েছে ভাইয়া? "
- " কী হয়েছে সেটা বলে নাহয় এই কুলাঙ্গারকে আর লজ্বা না ই দিলাম। অবশ্য এর লজ্বা আছে বলে আমার তেমন মনে হয় না! "রাতুলের মুখে এসব কথা শুনে আবিদের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। পারছে না এখানেই খুন করে ফেলে রাতুলকে। কিন্তু সে মেঘকে কথা দিয়েছে যে সে রাগ দেখাবে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাতুলকে বললো, " দেখুন ভাইয়া। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমরা বসে কথা বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেই প্লিয! " আবিদ একদম নম্রতা ভদ্রতা মিশিয়েই কথাটা বলে। কিন্তু রাতুল চিৎকার করে বলে, " জাস্ট শাট ইওর মাউথ অফ। আমি আমার বোনের সাথে কথা বলছি তোমার সাথে নয়। আর কী মিটিয়ে নিবো? তোমার মতো একটা অসভ্য অসামাজিক জীবের সাথে আমি আমার বোনের বিয়ে কখনই দিবো না! " রাতুলের চিৎকারে ক্যাফের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদ চারপাশে দেখলো। আবিদের মনে চাচ্ছে রাতুলের মাথাটা ধরে জাস্ট মাটিতে পুতে দিতে। কিন্তু না তার ধৈর্য্য রাখতে হবে। আবিদ নিজেকে কন্ট্রোল করে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো, " ভাইয়া আপনি ঠিক কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত আমায় এসব তকমা দিচ্ছেন প্লিয বলবেন? "
- " আবার জিজ্ঞেস করছো? সকালে একটা ট্রাফিক পুলিশকে ভরা রাস্তায় মারলে। ধাক্কা দিয়ে একটা বাবার বয়সি বুড়ো মানুষকে ফেলে দিলে। তোমার জন্য অতোগুলো মানুষ জ্যামে দুর্ভোগ পোহালো। সবাই তোমার তামাশা দেখতে তোমার চারপাশে জড়ো হলো। তারপরেও তুমি সাফাই গাইবে যে তুমি বেয়াদব,অসভ্য,ম্যানারলেস অসামাজিক জীব নও? "
আবিদের কাছে এবার ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো। তাই আবিদ নিজেকে শান্ত করে রাতুলকে বোঝানোর জন্য বললো, " দেখুন ভাইয়া আপনি যা বলছেন তা ঠিক। কিন্তু আপনি পুরো ব্যাপারটা জানেন না। আমায় ব্যাখ্যা দেবার একটা সুযোগ দিন। আই ক্যান এক্সপ্লেইন! "
- " কীসের এক্সপ্লেইন? যে ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তামাশা করতে পারে তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন হবে। তার সম্মানবোধ কেমন হবে তা আমার বোঝা হয়ে গেছে! "
আবিদ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ফ্যামিলির কথায় প্রতিবাদ করেই ফেললো, " একেতো আপনি না জেনে আমায় অপবাদ দিচ্ছেন। তার উপরে সিনক্রিয়েট করছেন। আমার ফ্যামিলি নিয়ে কথা বলছেন, আমার সেল্ফরেসপেক্ট নিয়ে কথা বলছেন। আমি নাকি ভরা রাস্তায় তামাশা করেছি তাহলে আপনি এখানে কী করছেন? আপনিও তো একটা পাবলিক প্লেসে সীনক্রিয়েট করছেন। তাহলে আপনার আর আমার মধ্যে তফাৎটা কোথায়? "
- " তুমি যদি আমার বোনের পরিচিত না হতে তাহলে আমার সাথে এভাবে কথা বলার জন্য তোমার দাতগুলো আমি খুলে ফেলতাম। কিন্তু তোমার মতো মানসম্মানহীন একটা অসামাজিক জীবের সাথে কথা বলে আমি নিজের মান-সম্মান হারাতে চাচ্ছি না! "
আবিদ চুপ করে দাঁড়িয়ে রাগ নামানোর চেষ্টা করছে। আবিদের শরীর গরম হয়ে গেছে রাগে। প্রচুর ঘেমে গেছে আবিদ। চোখ লাল হয়ে গেছে আবিদের।আবিদ ভদ্রতা দেখানোর জন্য আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনের জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ESTÁS LEYENDO
প্রিয় পরিনতি
Romanceগল্পের নায়ক আবিদ যখন ইঞ্জিনিয়ারিং এর শেষবর্ষে তখন তার কলেজের নবীনবরন অনুষ্ঠানে প্রথম দেখতে পায় গল্পের নায়িকা মেঘকে। এই নবীনবরন এর কয়েকমাস আগেই আবিদের ব্রেকাপ হয় তার প্রেমিকার সাথে। গল্পের নায়ক আবিদ এর আগেও বহু প্রেম করেছে, কিন্তু কোনো মেয়েকে প্রথম দ...