আমি কেন মাবুদ!

4 0 0
                                    

আমাদের অনেক সময়ই এমন হয় যে দীর্ঘদিন যাবৎ গুনাহের মশগুল থাকি, ফের হালত বদলায়, অর্থাৎ দীনের প্রতি দিল ঝুঁকে। এই সময়ে আমরা আচানক বিভিন্ন দুআ করি, বিভিন্ন আমল শুরু করি। কিছুদিন পর সবুরে টান পড়া শুরু হয়, মনে এমন কথার উদ্রেক ঘটে যে 'আল্লাহ এই দুআ করি, কবুল হয় না কেন বা এত ইবাদতগুজারী করি পরওয়ারদেগার তোমার, তারপরেও আপদ-বালাই সব আমার উপর দিয়েই কেন ইত্যাদি'। এইবার আমরা গলত খতম করব।

পয়লা গলত হচ্ছে সবুরের খামতি, অল্পতেই বেচাইন হয়ে পড়া। সবুরের ফজিলত বেশুমার, কোরআনে ও হাদীসে সবুরের অনেক ফজিলত ও কামিয়াবীর কথা বলা হয়েছে। তাই কোন দুআ কবুল যদি তাৎক্ষণিক কবুল না হলে দুইটা বিষয়, হয় আল্লাহ দুয়াটি পরে কবুল হওয়ার মাঝে খায়ের-বরকত দেখেন, যার কারণে তিনি পরে দুয়া মঞ্জুর করেন। আর যদি তিনি দুনিয়ায় দুয়া কবুল হওয়ার মধ্যে খায়রিয়াত না দেখেন তাহলে আখেরাতে এর বদলায় সওয়াব দেন, এই সওয়াব সেইসময় ফায়দা দিবে, যখন হয়ত রোজ হাশরে আপনি অল্প দুয়েকটা নেকির জন্য জান্নাতে যেতে পারছেন না, ঠিক সেসময় এই সওয়াবের অসিলায় আপনার মিজানে নেকির পাল্লা ভারি হয়ে জান্নাতের ফয়সালা হয়ে গেল। একবার একটু ভাবুন, তখন আপনার দুনিয়ায় কি সব ছোটখাট আশা পুরণের জন্য যেসব দুয়া করতেন (আল্লাহ আইফোন দাও, দামি গাড়ি-বাড়ি, ধন-দৌলত, যশ-খ্যাতি দেও ইত্যাদি) সেগুলো পুরা না হওয়ার আফসোস থাকবে কি? রোজ হাশরের সেই ভয়াবহ, বিভীষিকাময়, একাকি-নিরালা পরিস্থিতিতে কি দুনিয়ার সব তুচ্ছ আশা দুনিয়াতে পুরণ হওয়ার জন্য আরও আফসোস লাগবে না, আর মনে হবে না কি যে 'ইশ! আজ যদি দুনিয়ার এসব দুয়া কবুল না হয়ে আখেরাতে সওয়াব হত, তাহলে বেশি সওয়াবের কারণে আরও বুলন্দ ও উঁচু মর্তবার জান্নাত নসিব হত।'

এই গেল দুয়া আর দুয়া কবুলের বিষয় নিয়ে, এবার আসি ইবাদতগুজারী আর বালা-মসিবত নিয়ে। আমরা সবাই জানি, ইবাদত মানে খালেস আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামী। তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে আল্লাহ আমাদের মালিক ও মনিব আর আমরা তার গোলাম ও দাস। মালিক তার গোলামকে যে হুকুম দেয় সে তা মানে এবং মানতে বাধ্য। তাহলে আল্লাহর সাথে আমাদের বোঝাপড়া কি স্রেফ মালিক-গোলামের মত? সাথে কি আরেকটা জিনিস মিসিং হচ্ছে না? জি হ্যাঁ মেরে পেয়ারে ভাই, সেই মিসিং জিনিসটা হচ্ছে আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসা। আমরা আল্লাহর বড়ত্ব-আজমত সহকারে ইবাদত করি, কিন্তু আল্লাহর প্রতি মহব্বত নিয়ে ইবাদত করি কি না এইটা নিয়ে কিছু জানার, বোঝার ও আমল করার আছে। আল্লাহ পাকের সাথে আমাদের নবীজি মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার সাহাবায়ে কেরাম ও এর পরবর্তী সকল হক্কানী বা প্রকৃত পীর ও বুজুর্গানে কেরামদের কি স্রেফ আজমতওয়ালা এবাদত ছিল? না, আল্লাহ পাকের সাথে তাঁদের মহব্বত ও সম্পর্ক ছিল নিবিড়, তাই তাঁদের এবাদত ছিল মোকাম্মেল বা পরিপূর্ণ। এখন কথা হচ্ছে তাহলে মহব্বতওয়ালা এবাদতের সাথে বালা-মসিবতের সম্পর্ক কি? তার আগে ইবাদত নিয়ে আমাদের কিছু বুনিয়াদি ও ব্যাসিক জানা দরকার।

খেয়াল খাতাWhere stories live. Discover now