৬ঠ

274 5 1
                                    


২৩/০৮/১৮৮৭
আজ লন্ডনের বন্দর থেকে আমার জাহাজ ছাড়ল।গন্তব্যস্থান ভারতভূমি। প্রায় সাড়ে ছশো বছর পর আবার চলেছি,এত বছরের অন্ধকার পীশাচ জীবনে বহুবার ভেবেছি যাব।একবার একটা জাহাজ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু নিজে যাইনি।আজ যাচ্ছি,না বোধ হয় ফিরছি বললে ঠিক বলা হবে।
আমেরিকায় আমরা দক্ষিণাঞ্চলে স্বাথীন ভাবে থাকার অধিকার পেয়েচিলাম।আমার সাথীরা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল সেই চুক্তিতে।তারপর আমায় ওরা ১৭৯০তে খুঁজে পায়।আমি সুস্থ হয়ে ওঠার পর মাউন্ট ভার্নানের সভায় গেছিলাম যেখানে পীশাচ,ডাইনি,নেকড়েমানবদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় রাষ্ট্রের।হ্যা গোপন চুক্তি,ওয়াশিংটন সহ বাকি ডেক্লারেশনে সই করা প্রতিনিধিরা ছিল।খুব স্পষ্ট ছিল যে আমাদের আলাদা স্থান দিতে হবে,আমরা মানুষের ক্ষতি করবনা,আমাদের ম্যানরে যে ক্রিতদাসেরা থাকবে তাদের রক্তই পান করব।সাধারন মানুষের নয়।বদলে রাজ্য শাসন করব।সেই মত সই হল।বেশ চলছিল,গোল বাধলো ওই দাসদের নিয়ে।১৮৫০ এর থেকেই উত্তরের রাজ্য দাসপ্রথা তুলে দিতে চাইছিল,কংগ্রেসে আমাদের প্রতিনিধিদের অসম্মান করা হচ্ছিল,আমরা চুক্তিবদ্ধ তাই আক্রমন করতে পারিনা।কিন্তু ১৮৬৯এ লিংকন রাষ্ট্রপতি হয়ে দাসপ্রথা তুলে দিলে আমরা রাগে ফেডেরাল কংগ্রেস ছারলাম,নিজেদের আলাদা দেশ গড়ব ভেবে।ইউনিওনের সাথে যুদ্ধ শুরু হল।বহু মানুষ প্রান হারাল,আমাদের সাথী ও মারা পরল।এই যুদ্ধে মানুষ জিতল পীশাচবাহিনীকে হারিয়ে।আমাদের সাহায্য পাঠিয়েছিল ইংল্যান্ড,তবু লজ্জার হার এল।
সময় খারাপ যাচ্ছিল,এই পরিণতি নিয়ে আমাদের মধ্যে ও বিবাদ ঘটলো,নেকড়েমানবেরা আলাদা হয়ে গেল।ডাইনিরা আসল পরিচয় গোপন করে ছড়িয়ে পড়ল সমগ্র আমেরিকায় আর আমাদের অনেকেই মেক্সিকো ছাড়িয়ে আরও দক্ষিণে পারি দিল।রানী ভিক্টোরিয়ার সাথে যুদ্ধকালে পত্রালাপ হয়েছিল।আমি কনফেডারেট জেনারেল হিসাবে চিঠি দিয়েছি,উনি ও আমাদের সে সময় সাহায্যদান করেন।ওনার রাজ্যাভিষেকের পঞ্চাশ বছরের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করেন আমাদের কয়েকজনকে।তাই লন্ডন আসা।এখানে এসে মনে হল আমি কখনওই লন্ডন আসিনি।ইউরোপে থাকার সময় ও নয়।অদ্ভুত তাই না!!আর ও অবাক হলাম রানীর সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর।অনুষ্ঠানের দুদিন পর পত্র পেলাম রানীর সাথে একা দেখা করার।কেন?
ডাকসাইটে সুন্দরী ছিলেন,কিন্তু প্রশংসনীয় বুদ্ধি।আমার আসল পরিচয় জানেন।কি করে জানিনা,তবে হয়তো উনি এটাও জানেন যে আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্যগুলোর বাসীরা সাধারণ মানুষ নয়।সেটা জেনেই সাহায্য করেন।তখনই মনে হল যে ১০০বছর আগের আমেরিকা বিপ্লবের সময় ইংরেজদের পতনের কারণ আমরা,আর তাই তিনি আমেরিকাকে জব্দ করতে কনফেডারেটকে সাহাজ্য করেন,মানে আমেরিকাকে ভঙ্গ করতে।রাগ হল,আর বুঝতে পারলাম এই ধূর্তবুদ্ধির জন্যই আমি ইংরেজ জাতিকে অপছন্দ করি তাই কোনোদিন লন্ডন আসিনি।রাণীর সামনে কিছু বললাম না কারণ আমি নিশ্চিত বাইরের রক্ষী রা হাতে কাঠের অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত।আমি কিছু করলেই মরব।তাই শুনতে লাগলাম।যা উনি বললেন তা হল আমায় উনি ভারতে প্রেরন করতে চান।এক ভয়াবহ বিদ্রোহ ভারতে ১৮৫৭তে হয়েছে,তার প্রেক্ষিতে রানী আমায় ওখানকার ইংরেজদের রক্ষক করতে চান।আমি বল্লাম আমার একার পক্ষে গোটা ভারতের ইংরেজদের রক্ষা অসম্ভব।উনি বললেন আমি একা না আমার মত আরও আরও অনেকেই যাবে।বুঝলাম দেশটাকে ধনে মেরেছে এবার প্রানে মারতে চায়।রাজি হলাম,না ভয় পেয়ে নয়,দেশের কোটি কোটি জনতাকে বাচাব বলে।
আজ থেকে দুইমাস পর কলকাতা বন্দরে নামব।এখনই তর সইছেনা।কত কথা মনে পরছে।সাড়ে ছশো বছর হয়ে গেল তাও সব মনে আছে।পদ্দাপারে নারায়ণগড়, আমার জন্মভূমি, আমার পিতা বণিক শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রদেব নারায়ণ, দাদা দীপকদেব নারায়ণ, মা আর আমি প্রতাপদেব নারায়ণ। এই নামটা কেউ জানেনা,কেউ ডাকেনা এই নামে।আমি এখন লর্ড পিতাপ দি নিও।মনুষ্য জন্মে প্রতাপ ছিলাম।
মা শিবের পুজো করতেন,সে কি ভক্তি,কত লোক আসত, ঘটা করে শিবরাত্রি হত।পিতা তো বাণিজ্যতরী নিয়ে সিংহল থেকে মালয় বাণিজ্য করতেন।দাদা সাথে থাকত।আর আমি মাএর সাথে থাকতাম।প্রাসাদোপম বাস আমাদের ছিল।১২৫০সালে মাকে নিয়ে আমি বজরায় করে চন্দ্রগড় যাচ্ছিলাম।আমাদের ব্যবসা যাতে আরো বারে তাই মায়ের মানসিক ছিল,সেই পুজো দিতে।পুজো মিটলে ফিরব নারায়ণগড়।ফেরার পথে মা অসুস্থ হলেন,আর একদিনেই আসবে নারায়ণগড়।ফিরে এলাম অসুস্থ মাকে নিয়ে।বদ্দিমশায় কিছু নিদান দিতে পারলেন না।মায়ের কি হল জানিনা উনি সেইদিন রাতেই মারা গেলেন।বাড়িতে আমি একা,মায়ের শেষকৃত্য একা করলাম।দাদা আর পিতা কবে ফিরবেন জানিনা।জীবনটা অন্ধকার হয়ে গেছিল।সারা প্রাসাদে দাস দাসি আছে,আলো আছে,মা নেই।একাকীত্ব আমায় পাগল করে তুলেছিল। ৪মাস পর ওনারা ফিরলেন,সব জানালাম।পাষানের মত পিতার হৃদয়,স্ত্রী বিয়গের ছাপ দেখলাম না।আমার অসহ্য লাগছিল থাকতে।তাই ১মাস পর সিংহলের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছাড়লে আমি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।এবারে আমি আর দাদা।কিন্তু আমি ফিরব বলে নারায়ণগড় ছারিনি।
সিংহল থেকে না ফিরে আরও ব্যবসার জন্য কিছু পণ্য নিয়ে আরব বণিকদের সাথে চললাম আরবে।সেখানে বাগদাদে,দামাস্কাসে থেকে ব্যবসা করেছি কিছুদিন।১২৫২তে আরবের এক ক্যারাভানের সাথে লোহিত পেরিয়ে মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।কিন্তু সেখনে যাওয়ার আগেই এক ভয়ানক সমুদ্রঝড়ে জাহাজ ডুবে গেল,আমি বেচেছিলাম কিনা জানিনা তবে জ্ঞান ফিরতে দেখি মরুজনপদে আছি,যাযাবরদের দল এরা।ধীরেধীরে বুঝলাম আমি আগের মত নেই,আমার খিদে তেস্টা নেই আগের মত।ওরা বলল আমায় মন্ত্রবলে বাছানো হয়েছে।হ্যা পীশাচ মন্ত্র।ওদের সকলকে মেরে রক্ত খেয়েও আমার রাগ মিটলনা,মন ভরল না।প্রায় একবছর ওই মরুপ্রান্তরে আমি কাটিয়েছি।কোন ক্যারাভান দেখলেই লুঠ করতাম,মেরে ফেলতাম।এভাবে চলতে পারেনা আমায় বাচতে গেলে মানুষের মত বাচতে হবে,পশুর মত নয়।তাই লুঠ করার বদলে এবার বশীভূত করলাম ক্যারাভানের সকলকে।নিজে মালিক হয়ে ওদের নিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় এলাম।বিপুল পরিমান পণ্য নিয়ে ইউরোপ পারি দিলাম।ভেনিসে এসে বাঙালী প্রতাম থেকে ইতালিয় পিতাপ দি নিও হলাম।ফিরে যেতে পারতাম হয়তো কিন্তু ইচ্ছে হয়নি।আজ এত যুগ পর ফিরছি।
২৬/৯/২০১২

আমি পেড্রো আলভারেজ।লর্ড নিও এর সেবক,বন্ধু,সাথী,সন্তান।উনি ১২৫বছর আগে স্বদেশে যাওয়ার আগে আমায় ওনার পুরানো ডায়েরী গুলো দিয়ে যান।আর ভারত থেকেও ১০০বছরে ডায়েরী পাঠিয়েছেন অনেক।আমি আমেরিকার আলাস্কাতে থাকতে শুরু করি ২০০০সাল থেকে।ওখানকার শীতল পরিবেশ আর জনমানব হীনতা আমার ভাল লাগে।প্রভু এই ১০০বছরে গোপনে থেকে ভারতকে রক্ষা করেছেন অনেক বিপদ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানের পরামর্শদাতা হিসাবে।এ সব আমি অল্প অল্প জানি।গত দুবছর প্রভুর কোন খবর পাচ্ছিনা।টেলিফোনের যুগে ও আমরা পত্র বিনিময় করতাম।যাই হোক আমি ভারতে আসেছি তিনমাস হল,যে সকল ডাকঘর থেকে প্রভু চিঠি ডায়েরী পাঠাতেন সে সব জায়গায় খোজ নিয়েছি।শেষ ডায়েরী আর চিঠি ২০১০এ শিলং থেকে পাঠানো।এখন আমি আসাম থেকে শিলং চলেছি।জানিনা আমার যাত্রা কত দিনের বা কত কালের তবে প্রভুকে পেলে তবেই তা শেষ হবে।গতবার ১২০বছর পর খুঁজে পেয়েছি।এবার জানিনা।এবার আমি একা,আমার সংগী বলতে এই ডায়েরী কলম,শুধু আমার নয় প্রভুর সব ডায়েরী ও,পড়তে ভাল লাগে।আসলে ও গুলো ডায়েরী হলেও তো গল্প,তাই না!!

পীশাচ পুরুষWhere stories live. Discover now