১/০১/১৬৭০
আজ বছরের প্রথম দিন তাই আজ দিন টা ভাল ভাবে শুরু করব।সকাল থেকে সেটাই চিন্তা করছি আমার কেবিনে বসে।না জলখাবার খাইনি এখন ও,ওই যে বললাম আজ ভাল কাটাব!টেবিলের ওপর রামের বোতল টা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে,ব্যাঙ্গ করছে নাকি?হয়তো তাই,তবু ওকে আজ ছোঁবোনা,আজ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হারাবোনা আমি।হটাত দরজায় জোড়ে টোকা পড়ল,কে?আমি পেড্রো।
ও,এসো। আপনার জলখাবার প্রস্তুত, আমি নিয়ে আসি?
হুম,যাও তুমি খেয়ে নাও,আমি এখন খাবনা। খাবেন না!!আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন। না পেড্রো আমার কিছু হয়নি।খিদে নেই আজ। পেড্রো আর কথা না বারিয়ে চলে গেল।বছর আঠেরোর এই ছেলেটা বেস বুদ্ধিমান,ওকে কিছু বলতে হয়না।আজ সত্যি খিদে নেই।মায়ের কথা মনে পড়ছে,কত বছর হয়ে গেল,আজকের দিনেই তো আমায় ছেড়ে চলে গেলে তুমি!তোমার মুখটা মনে পড়ে আজ ও।তুমি চলে যাওয়ার পর ওখানে থাকতে পারিনি মা।ওই বিশাল প্রাষাদ, ওই সম্পত্তি সব কিছুই ফেলে বেরিয়ে পড়েছিলাম।তারপর তো কত কি ঘটেছে,তাও মা আমি প্রতি বছর আজকের দিন টা নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করি।কিন্তু,,,
আমি যে একটা পীশাচে পরিণত হয়েছি।আমি কি আর মানুষ হতে পারব?কতদিন আর না খেয়ে থাকব?একদিন তো খেতেই হবে কোনো মানুষের টাটকা তাজা রক্ত।পীপাসায় গলা শুকিয়ে গেছে,রক্ত আমার চাই নাহলে,,,
না না এই জাহাজের কোনো ক্ষতি হোক আমি চাইনা,এত মানুষ কাজ করে ওদের আমি মারতে চাইনা,শুধু একটু রক্ত চাই,আমার পীপাসা মেটানোর মত রক্ত।
উফ শরীর আনচান করছে,বাইরে ডেকের ওপর খোলা বাতাসে দাঁড়ালে হয়ত ভাল লাগবে।
২/০১/১৬৭০
কাল সারাদিন কিছু খাইনি।প্রচন্ড পীপাসায় গলা ছিড়ে যাচ্ছে।মাঝেমাঝে মনে হয় কেন আমি নিজের নিয়তির সাথে লড়াই করছি।খেতে তো হবেই আমায় আর সেই কোনো মানুষের প্রাণ যাবে। পেড্রো সকালেই একটা খালাসি দিয়ে গেছে,বেচারা আমার পায়ের কাছে চুপ করে বসে,ওকে আমার বশীভূত। আমি যা বলব তাই করবে।ওকে দেখে মায়া হচ্ছে,খেতে পায়না ওর শরীরে তো রক্তই নেই।আগে ওকে কিছু খেতে দেওয়া দরকার নাহলে অল্প রক্তপাতে মরে যাবে।
পেড্রোকে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বললাম।
নাম কি তোমার? আজ্ঞে ফীন।
হুম,ফীন আমার চোখের দিকে দেখো,তোমার সামনে রাখা খাবার গুলো খেয়ে নাও।তারপর আমার কাছে আসবে।
পরম আনন্দে ফীন খাবার খেতে লাগল, আহা বেচারা কতদিন পেট ভরে খায়নি।জাহাজে এতো খাটায় আর খেতে দেয়না?এর বিহীত করতে হবে।ফীন আদেশ মত খাওয়া শেষে আমার কাছে এলো।ওর বাঁ হাতটা নিজের মুখের কাছে চেপে ধরলাম।গরম তরল যতই গলা দিয়ে নামতে লাগল ততই শরীর জুরিয়ে গেল।খুব কস্টে মুখ সরালাম।ফীন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,ওর কব্জী দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
বাড়িতে কে আছে তোমার? আমার কেউ নেই,কালাজ্বরে বউ দুইছেলে মরে গেছে।এই জাহাজ আমার ঘর।
এতো যে কাজ করো পারিশ্রমিক দেয়?একার টা চলে যায়।ভালোভাবে থাকতে ইচ্ছা করে না?আজ্ঞে সে অধিকার যে নেই আমার।ফীন এই জগতে সকলের ভালোভাবে থাকার অধিকার আছে,তুমি চাইলে সে অধিকার আমি তোমায় দিতে পারি।কিন্তু একটা শর্ত,, আমার সাথে থাকতে হবে।আমি রাজি।
আমার নখ দিয়ে কব্জী কেটে ফীনের মুখে চেপে ধরলাম আর ওর ঘাড় ভেঙে দিলাম।সব কিছু এত জলদি হল যে ফীন কিছু বোঝার আগেই প্রাণ হারালো।এখন শুধু অপেক্ষা।